ডেস্ক রিপোর্ট: স্বেচ্ছায় একে-অন্যে রক্তদান হউক আত্বার বাঁধন। রক্তদান সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া এবং যারা স্বেচ্ছায় রক্তদান করে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছেন তারা সত্যিই মহান। আমাদের আঞ্চলিক প্রতিনিধি মুহিবুর রহমান মুকুল তাদের অন্যতম। কঠিন সময়ে ব্লাড সংগ্রহ করে দেওয়া এটা তার রুটিন কাজ। এ ব্যাপারে মুজিবুর রহমান মুকুল বলেন, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে সাধারণ জনগণকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করা আমার একমাত্র লক্ষ ও উদ্দ্যেশ্য।
বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো রক্তের অভাবে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে, তাই আমাদের সকলের উচিৎ রক্তদান তথা পৃথিবির সর্বোচ্চ উপকারিতা সম্পর্কে জানা এবং অন্যকে জানানো।
রক্তদান, সংগ্রহ ও অসহায় অসুস্থ মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা এমনসব বিষয় নিয়ে “দ্য সিলেট পোস্ট মুজিবুর রহমান মুকুলের সাথে প্রাসঙ্গিক কথা হয়।
মুকুল বলেন স্বেচ্ছায় রক্তদানের অনেক উপকারিতা আছে এবং বিষয়টি মানবিক। রক্তদানের বিশেষ সুবিধা হল-
🩸 ওজন কমানো
নিয়মিত রক্তদান করার ফলে ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে এবং ফিটনেসের উন্নতি হয়। ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে, ৪৫০ মিলিলিটার রক্তদান করলে আপনার দেহের ৬৫০ ক্যালোরি হ্রাস হয়। তবে, আপনার ওজন হ্রাস করার উদ্দেশ্যে এটি করা একদমই উচিত নয়। যেকোনও প্রকার স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সমস্যা এড়ানোর জন্য, রক্ত দেওয়ার আগে দয়া করে ডাক্তারের কাছে চেকআপ করান।
🩸 হিমোক্রোমাটোসিস প্রতিরোধ করে
রক্ত দানের মাধ্যমে আপনি হিমোক্রোমাটোসিসের ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারেন। দেহে অতিরিক্ত লৌহের উপস্থিতিতে এই রোগ হয়। এই রোগে লৌহ বা আয়রন বিভিন্ন অঙ্গে জমা হতে থাকে, এমনকি হার্টেও। নিয়মিত রক্তদানের ফলে শরীরে আয়রনের অতিরিক্ত মাত্রা হ্রাস হয়, যা হিমোক্রোমাটোসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য উপকারি হতে পারে।
🩸 হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে
রক্তদানের ফলে শরীরে প্রয়োজনীয় পরিমাণ আয়রন বজায় রাখতে সহায়তা করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে। এছাড়াও হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি হ্রাস করে।
🩸 লিভার এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে
দেহে থাকা আয়রনের অতিরিক্ত মাত্রা, ক্যান্সারের ঝুঁকির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। এইজন্য রক্তদানের মাধ্যমে আপনি শরীরে আয়রনের একটি স্বাস্থ্যকর মাত্রা বজায় রাখতে পারেন, যা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এছাড়া, লিভার সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকিও হ্রাস পায়।
🩸 মানসিক শান্তি
রক্তদান করার মাধ্যমে আপনি মানসিক শান্তি পেতে পারেন। আপনার রক্তদান অনেক রোগীর জীবন বাঁচাতে পারে। তাই, প্রতিটি সুস্থ ব্যক্তির তিন মাস অন্তর রক্তদান করা উচিত।
রক্তদানের আগে ও পরে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মহিবুর রহমান মুকুল তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। বলেন, নিজে সচেতন হতে এবং অন্যকে সচেতন করতে আমি নিয়মিত পড়াশোনা করি। আত্মীয়-স্বজন কিংবা মানবতার সেবায় এগিয়ে এসে আমাদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক অনেকেই স্বেচ্ছায় রক্ত দিয়ে থাকেন। কিন্তু শুধু রক্ত দিলেই চলবে না, রক্ত দেয়ার ফলে রক্তদাতার যাতে করে কোনো শারীরিক সমস্যা না হয় সেদিকে নজর রাখাও প্রয়োজন। তাই স্বাস্থ ঠিক রাখার জন্য রক্ত দেয়ার পূর্বে এবং পরে একজন রক্তদাতা নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন।
নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে মুকুল বলেন, আমি একজন রক্তদাতা এবং আমি বিগত ২-৩ বছরে প্রায় ১১০০ বেগের অধিক রক্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
এই করোনাকালিন সময়ে প্রথম থেকে করোনা রোগিদের জন্য প্লাজমা ব্যবস্থা করে দিয়েছি যা ছিল অনেক দুর্লব এবং কষ্টসাধ্য। বিভিন্ন রোগিদের অক্সিজেন সেবা দিতে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি যথাসম্ভব চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আমার এই কাজ চলমান থাকবে। এসব কাজ করতে গিয়ে অনেকেই আমাকে নিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন যা অনেকটা কষ্টদায়ক হলেও আমি তা নিয়ে ভাবিনি। অনেকেই আমার এই কাজকে ভালোবেসে বিভিন্ন দিক দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন এবং উৎসাহ দিচ্ছেন। তাদের কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। আমি “ব্লাড সার্ভিস বাংলাদেশ নামে একটি সংঘটন প্রতিষ্টা করেছি। পাশাপাশি আমি AB+ Blood Donner In Bangladesh এর প্রতিষ্টাতা। আমি চাই আমার দেশে প্রতিটি ঘরে ঘরে রক্তদাতা তৈরি হউক। কোনো বাবা মা ভাই বোন যেন রক্তের অভাবে নিজের চোখের সামনে মারা না যায়। সবাইকে মানবিক এই কাজে এগিয়ে আসার আহব্বান জানাই।
মন্তব্য করুন