হাফিজ মুফতি মোঃ করিম উদ্দিন
বিয়ে আল্লাহর বিশেষ নেয়ামত ও রাসুল (সা.) এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। চারিত্রিক অবক্ষয় রোধের অনুপম হাতিয়ার। আদর্শ পরিবার গঠন, মানুষের জৈবিক চাহিদাপূরণ ও মানবিক প্রশান্তি লাভের প্রধান উপকরণ। বিয়ে ইসলামী শরিয়তের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান। আজ আপনাদেরকে জানাবো নিকাহ সম্পন্ন করার নিয়ম সমূহ ও কিছু পরামর্শ।
১। দুইজন সাক্ষীর সম্মুক্ষে পর্দার মাধ্যমে বর-কনের যে কেহ একজন মুহরের পরিমাণ উল্ল্যেখ করে সরাসরি নিকাহের প্রস্তাব(ইজাব) দেবে এবং অপর জন কবুল করবে। প্রস্তাবক এবং কবুলকারী কে হবে ? তাহা ইচ্ছাধীন।
২। সরসরি প্রস্তাব দেওয়া ও কবুল শুনার পরিবেশ না থাকলে প্রস্তাবকারী তার প্রতিনিধি দিয়ে প্রস্তাব দেওয়ার এবং কবুল শুনে আসার জন্য একজন উকিল নিযুক্ত করার হুকুম রয়েছে। এ পন্থায়ও সাক্ষী দুইজন ও মুহরের উল্লেখ বিদ্যমান থাকবে। তবে উভয় ক্ষেত্রে প্রস্তাবের পর কবুলের আগে খুতবা পড়তে হয়।
যেনে রাখা ভালো যে,বর উকিল নিযুক্ত করে প্রস্তাব দিলে কনের কবুলের সাথে সাথে অথবা কনে উকিল নিযুক্ত করে প্রস্তাব দিলে বরের কবুলের সাথে সাথে নিকাহ সম্পাদন হয়ে যায়।
সামাজিক প্রেক্ষাপটে বর এবং কনে দুইজনের কবুল শুনার জন্য জনগন উৎসাহের সাথে অপেক্ষায় থাকেন।কিন্তু কবুল করবেএকজন,দু’জনে নয়। বর ও কনের বৈঠকের দুই অবস্থানের কারণে আমাদের সমাজে উকিল নিযুক্ত করে নিকাহ সম্পাদনের আয়োজন করে থাকেন।
বর উকিল নিযুক্ত করে উকিলের মাধ্যমে কনের নিকট নিকাহের প্রস্তাব পাঠালে কনে কবুল উচ্চারণ করার পূর্বে খুতবা পাঠ করে নিতে হবে। তারপর কনে কবুল করবে। কনের কবুল উচ্চারণের সাথে সাথে নিকাহ সম্পন্ন হয়ে যাবে। এরপর বর কে আর কবুল উচ্চারণ করাতে হবে না। অথচ আমাদের সমাজে বরকে কবুল উচ্চারণ করিয়ে থাকেন। এ অবস্হায় বরের এ কবুল নিকাহের অংশ নয়।
বর এবং কনে দুইজনকে কবুল উচ্চারণ করালে কয়েকটি প্রশ্ন/সন্দেহ সৃষ্টি হয় য, উকিল কোন পক্ষে নিযুক্ত করলো ? নিকাহের প্রস্তাবক কে ? বিবাহ একটি সুন্নাত ইবাদত এবং সোওয়াবের কাজ । তাতে কোনো ভাবে অবহেলা, অস্পষ্ট প্রশ্ন ও সন্দেহ রাখা যাবে না। পরিতাপের বিষয় এই যে বিবাহকে কেন্দ্র করে সামাজিক ভাবে গুনাহের কাজ রাখা হয়। পরিহার করা দরকার।
আবার কনেকে কবুল উচ্চারণ করালে কনের নিকটে দাওয়াতি মহিলা মেহমান ব্যপক সংখ্যক থাকার কারণে সে স্হানে পর্দা ও মুহরিমের সীমারেখা ঠিক রাখা যায় না, বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় এবং খুতবা পড়ার সঠিক পরিবেশ তাতে পাওয়া যায় না।
পক্ষান্তরে কনে উকিল নিযুক্ত করে বরের নিকট নিকাহের প্রস্তাব পাঠালে প্রস্তাব দিয়ে খুতবা পড়ে তারপর বরকে কবুল করাতে হয়। তাতে খুতবা পড়ার সঠিক পরিবেশ পাওয়া যায়। বরকে কবুল করাবার এই নিয়মটি সমাজে চলমান রাখা দরকার। তাতে নিকাহ সম্পাদনে সামাজিক সৃষ্ট ও বিদ্যমান গরমিল সমূহের অধিকাংশের অবসান হয়ে যাবে।
অভিভাবকগণ নিকাহ পূর্ব আলোচনায় কোন পক্ষ থেকে উকিল নিযুক্ত করা হবে এবং নিকাহের প্রস্তাব দেওয়া হবে তাহা ঠিক করে রাখা দরকার। অভিভাবকগণ উকিল নির্বাচন করলেও তাতে বর বা কনের অনুমতি নেওয়া দরকার। এই অনুমতি নেওয়া কে এজিন বলে। নিকাহ সম্পাদনে সংশ্লিষ্ট বর,কনে, অভিভাবক, সাক্ষী, উকিল ও উপস্থিত সকলের জানা থাকা দরকার যে, কোন পক্ষ উকিল নিযুক্ত করেছেন এবং কে করেছেন? অথচ তাহা কেহ জানেন না। এমনকি উকিল নিজেও জানেন না সে কোন পক্ষের উকিল? এমন হওয়া উচিত নয়। উকিল সম্পর্কিত আলোচনা বৃদ্ধি করা দরকার।
সারাংশঃ কনে একজন মুহরিমকে উকিল নিযুক্ত করে নিকাহের প্রস্তাব পাঠিয়ে বরকে নিকাহের কবুল করালে অজান্তে সৃষ্ট নিকাহ সম্পাদনের গরমিল সমূহ দূর হয়ে যাবে। তাতে কনেকে কবুল উচ্চারণ করাতে হবে না। আমিন
লেখক : সিনিয়র শিক্ষক শ্রীমঙ্গল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও খতিব শমশেরনগর রেলওয়ে জামে মসজিদ।
মন্তব্য করুন