নূরুজ্জামান ফারুকী নবীগঞ্জ( হবিগঞ্জ)ঃ নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামের আব্দুল খালিক। বয়স একশ ছুঁইছুঁই। সরকার কর্তৃক বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্তির জন্য গিয়েছেন জনপ্রতিনিধিদের ধারে-ধারে। জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন একাধিকবার কিন্তু মেলেনি সাঁড়া। শেষ বয়সে শয্যাশয়ী হয়ে অবশেষে বয়স্ক ভাতার তালিকায় নাম অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে আব্দুল খালিকের।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন শতবর্ষী আব্দুল খালিকের হাতে বয়স্কভাতার কার্ড তুলে দেন। আব্দুল খালিক উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামের মৃত মন্তাজ উল্লা ও মৃত গুনই বিবির ছেলে। জানা যায়, সদরঘাট গ্রামের আব্দুল খালিক এক সময় দাপুটে বিচারক ছিলেন। সহায়-সম্পত্তি না থাকলেও বিশিষ্ট মুরুব্বি হিসেবে ছিল পরিচিতি। এছাড়াও যুবক বয়সে ছিলেন কৃতি ফুটবলার। ফুটবল খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর রয়েছে খ্যাতি। বাংলাদেশে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালে ছয় দফার আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সুযোগ না থাকলেও ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী আব্দুল খালিক ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। তবে তাঁর পরিবারের দাবী আব্দুল খালিকের বয়স একশ’রও বেশি। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী বৃদ্ধ খালিকের বয়স ৮৬। তবে তাঁর প্রকৃত বয়স একশর উপরে। বৃদ্ধ আব্দুল খালিকের নাম সরকার কর্তৃক বয়স্ক ভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্তির জন্য দেবপাড়া ইউনিয়নের সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত সদস্যের কাছে ৯-১০ বার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি, ছবিসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছে তার পরিবার। কিন্তু দেই-দিচ্ছি বলে কয়েক বছর চলে গেছে। বছরের পর বছর জনপ্রতিনিধিদের ধারে-ধারে ঘুরেও শতবর্ষী আব্দুল খালিকের নাম বয়স্কভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা যায়নি। অবশেষে বিষয়টি অবগত হয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন।
রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন শতবর্ষী আব্দুল খালিকের হাতে বয়স্কভাতার কার্ড তুলে দেন। এ সময় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গজনাইপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুল আলী নুরু, যুবলীগ নেতা শাহ রিয়াজ নাদির সুমন, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম তালুকদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছনি চৌধুরীসহ আরও অনেকেই। বৃদ্ধ আব্দুল খালিকের ছেলে মো. তাজুল জানান, বছরের পর বছর আমার বাবার নাম বয়স্ক ভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্তির জন্য ছবি, ভোটার কার্ড দিয়েছি কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। জনপ্রতিনিধিগণের ধারে-ধারে গিয়েও সাঁড়া মেলেনি। আশ্বাসের বাণী পেয়েছি কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। আমার বাবার এই হতাশা নিয়েই হয়তো মারা যেতেন, কিন্তু শেষ বয়সে এসে অবশেষে ইউএনও সাহেবের মাধ্যমে আমার বাবার নাম বয়স্কভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে এজন্য আমি ইউএনও মহোদয়সহ সকলের নিকট কৃতজ্ঞ।
এ প্রসঙ্গে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন বলেন, বৃদ্ধ খালিক সাহেবের নাম আরও আগে বয়স্ক ভাতার তালিকায় অর্ন্তভুক্তি হওয়া উচিত ছিল, সম্প্রতি সাংবাদিক ছনি চৌধুরীর মাধ্যমে বিষয়টি অবগত হয়ে তাৎক্ষণিক উদ্যোগ গ্রহণ করি। সমাজসেবা অফিসের মাধ্যমে কিছুদিনের ভিতরে তাঁর কার্ড তৈরি হয়ে যায়। অবশেষে বৃদ্ধ আব্দুল খালিক সাহেবের হাতে বয়স্ক ভাতার কার্ড তুলে দিতে পেরেছি।
মন্তব্য করুন