হবিগঞ্জে ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ ২০ কোটি টাকা


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১২, ২০২৫, ১১:৫৪ অপরাহ্ন /
হবিগঞ্জে ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ ২০ কোটি টাকা
নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণকৃত ভূমির ক্ষতিপূরণ বিতরণে দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে।হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলাধীন অংশে এমনই একটি ঘটনায় জেলাজুড়ে তোলপাড় চলছে।
জানা গেছে, অসত্য তথ্য ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের অসাধু ব্যক্তিদের সহায়তায় স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টারের অধিগ্রহণকৃত এক হাজার ফুট জমির জন্য প্রায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ উত্তোলন করা হয়েছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ছয় লেন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ বিতরণে  হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের ওই কমিউনিটি সেন্টারের মালিক লন্ডনপ্রবাসী ও আউশকান্দি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মুহিবুর রহমান হারুন। তাঁর কমিউনিটি সেন্টারের ওই জমির বিপরীতে ক্ষতিপূরণের যে টাকা পাওয়ার কথা তার তুলনায় ২০ কোটি প্রদান অবিশ্বাস্য বলে মন্তব্য করেছেন একই এলাকার একাধিক জমির মালিক। ওই জমির ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে সৃষ্ট অনিয়মের সঙ্গে অসাধু সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীদের যোগসাজশের বিষয়টিও আলোচনায় রয়েছে।
মিনাজপুর গ্রামের কাছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত রহমান কমিউনিটি সেন্টার নামের ওই প্রতিষ্ঠানের সামান্য অংশ অধিগ্রহণের আওতায় পড়েছে। মহাসড়কের কাজের জন্য সেন্টারটির প্রায় দুই শতক জায়গা ও সামনে প্রায় এক হাজার বর্গফুট অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই অংশটুকুকে কারসাজির মাধ্যমে জরিপকারী এবং ভূমি অধিগ্রহণের কাজে নিয়োজিত অসাধু কর্মকর্তাদের সহায়তায় ৪০ হাজার বর্গফুট দেখানো হয়েছে; যার পরিপ্রেক্ষিতে জমির মালিক সর্বোচ্চ ১০ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের স্থলে প্রায় ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে নিয়েছেন। এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাতের ঘটনাটি এখন জেলাজুড়ে আলোচিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, যেখানে মূল কাঠামো বাবদ এক হাজার বর্গফুট জায়গার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা, সেখানে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় ৪০ হাজার বর্গফুট জায়গার ক্ষতিপূরণ দেখানো হয়েছে। এমন অস্বাভাবিক আর্থিক লেনদেনের বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় জনমনে নানা আলোচনা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সচেতন নাগরিকরা সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের এই ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এই জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত তদন্তসাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানানো হয়েছে।
এমনও অভিযোগ উঠেছে যে, শুধু এই একটি মামলাই নয়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আরও অনেক ক্ষেত্রে এ ধরনের অনিয়ম ঘটেছে, যা যথাযথ তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সূত্র জানায়, বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করে অভিযুক্ত মালিক বর্তমানে লন্ডনে অবস্থান করছেন। এ বিষয়ে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন এবং প্রয়োজনীয় তদন্ত চলছে।
রহমান কমিউনিটি সেন্টারের ম্যানেজার তজমুল আলী বলেন, তিনি শুনেছেন মালিক টাকা তুলেছেন। তবে কত টাকা তুলেছেন তা তাঁর জানা নেই। হারুন চেয়ারম্যান বর্তমানে লন্ডন আছেন।
অভিযুক্ত মুহিবুর রহমান হারুনের সঙ্গে তাঁর লন্ডনে ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নাম্বারে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পাওয়া যায়নি।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফিন বলেন, এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন। এরকম কাজ হয়ে থাকলে সেটি তদন্ত করে সত্য প্রকাশ করা হবে।
জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মঈনুল হক জানান, রহমান কমিউনিটি সেন্টারের ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনিয়মের বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছেন। বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন।