
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মাধবপুর মণিপুরি ললিতকলা একাডেমিতে ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা সংস্কৃতির চর্চা, সমস্যা ও করণীয় শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৭ টায় উপজেলার মাধবপুর মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির আয়োজনে একাডেমির হলরুমে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি ও চলচ্চিত্রকার মোহাম্মদ রোমেল।
মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক প্রভাস চন্দ্র সিংহের সভাপতিত্বে ও একাডেমির সংগীত বিভাগের প্রশিক্ষক সুতপা সিনহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মণিপুরি সমাজকল্যাণ সমিতির সভাপতি প্রতাপ চন্দ্র সিংহ, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসহাবুজ্জামান শাওন, প্রমুখ। অন্যান্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, লেখক-গবেষক চন্দ্র কুমার সিংহ, শিক্ষক কৃষ্ণ কুমার সিংহ ও কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি পিন্টু দেবনাথ প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বক্তব্যে কবি ও দার্শনিক ফরহাদ মজহার বলেন, আমাদের দেশে অনেক ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা আজ বিলুপ্তির পথে। নতুন প্রজন্মের মধ্যে নিজ ভাষার চর্চা কমে যাচ্ছে দিন দিন। তাদের শিক্ষাব্যবস্থায় দুর্বলতার কারণে মূলধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় মাতৃভাষার যথাযথ প্রয়োগ ও অন্তর্ভুক্তির অনেক অভাব রয়েছে। ভাষার সঙ্গে সঙ্গে তাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিও আজ হুমকির মুখে, দারিদ্র্য এবং বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর চাপে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতি টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারকে তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি সংরক্ষণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা তৈরি ও তার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করা খুবই জরুরী। বাঙ্গালীদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সাথে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং তাদেরও সংরক্ষণে অংশীদার করা যেমন, সাংস্কৃতিক উৎসব, মেলা ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করে নৃ-গোষ্ঠির ভাষার ব্যবহার ও চর্চাকে উৎসাহিত করা।
তিনি আরো বলেন, ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিজস্ব ভাষা থাকলেও সেগুলো এখন অনেক সীমাবদ্ধতার মুখে। এসব জনগোষ্ঠীর নতুন প্রজন্মকে মূলস্রোতে প্রবেশ করতে হলে এমন ভাষা শিখতে হচ্ছে যার সঙ্গে তাদের নিজস্ব ভাষার কোনও মিল নেই। এভাবে নিজেদের ভাষা থেকে আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছেন তারা। রাষ্ট্রীয়ভাবে এসব ভাষা সংরক্ষণের খুব একটা উদ্যোগ নেই বললেই চলে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ভাষা সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। কোনও কোনও জাতিসত্তার কাছে তাদের ভাষায় মূদ্রিত বইও নেই। তাই সব ভাষাকে মর্যাদা ও গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
জানা যায়, বাংলাদেশে বড় যে তিনটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী রয়েছে, তাদের মধ্যে গারো, মুন্ডাসহ অনেক জাতিসত্তার নিজস্ব কোন বর্ণ নেই। তারা মাতৃভাষায় লেখার জন্য বাংলা বা ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে। তবে চাকমা ও সাঁওতালদের নিজস্ব বর্ণ রয়েছে। তাদের মাতৃভাষায় বইও রয়েছে। তবে প্রাথমিক শিক্ষার পর আর এই ভাষার ব্যবহার করা হয় না। সবশেষে মণিপুরি ললিতকলা একাডেমির শিল্পীদের অংশগ্রহণে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়।
আপনার মতামত লিখুন :