সৈয়দ ছায়েদ আহমেদ, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি।।
‘ চাই স্বাস্থ্য খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা’’ এই শ্লোগান নিয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে করোনাকারীর সংকটে স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের সাথে মাল্টিস্টেকহোল্ডারদের মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গতকাল রবিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য কপপ্লে´ এর হল রুমে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক), টিআইবি, শ্রীমঙ্গল এর উদ্যোগে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী’র সভাপতিত্বে ও টিআইবি এরিয়া কোÑঅডিনেট পারভেজ কৈরী এর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সনাক শ্রীমঙ্গল সভাপতি দীপেন্দ্র ভট্টাচার্য, স্বাস্থ্য উপ-কমিটি এর আহবায়ক শাহ আরিফ আলী নাসিম, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সাবেক সিনিয়র সভাপতি ইসমাইল মাহমুদ, এশিয়ান টিভি শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি এস কে দাস সুমন,স্বজন আহবায়ক মো.দেলোয়ার হোসেন ও সেভ দ্যা ফিউচার ফাউন্ডেশ এর সভাপতি মাহমুদ মান্না প্রমুখ।
মাল্টিস্টেহোল্ডার মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন মেডিক্যাল অফিসার ডা.মো. আবু নাহিদ, পরিসখ্যানবিদ এটিএম আনোয়ার গাজী, উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি দুপ্রক এর সাধারণ সম্পাদক আলহাজ¦ মো: আব্দুর রউফ তালুকদার, শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি মো: কাওছার ইকবাল, কোষাধ্যক্ষ ও স্বজন সদস্য সৈয়দ ছায়েদ আহমদ, সাংবাদিক রুবেল আহমদ, নুর মোহাম্মদ সাগর, ডেইলী অবজারভার এর উপজেলা প্রতিনিধি রুপম আচার্য, সনাক সদস্য রহিমা বেগম, স্বজন পরিমল সিং বাড়াইক, হাবিবুর রহমান শহিদ ছাড়াও সেবাগ্রহিতাগণ। অনুষ্ঠাানটির সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন ইয়েস গ্রুপ,সনাক শ্রীমঙ্গল।
বিভিন্ন স্তরের সেবাগ্রহিতাগণের উপস্থিতিতে উক্ত মাল্টি স্টেকহোল্ডার সভায় উপস্থিতি থেকে সেবাগ্রহিতাগণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী।
করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবার বর্তমান অবস্থা নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের উপর গুরুত্বপূর্ন আলোচনা এবং সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। আলোচনাগুলোর মধ্যে ছিলো করোনাকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সেবার সার্বিক ব্যবস্থাপনা সংক্রাš,Í প্রথম ডোজ করোনা টিকার হালনাগাদ অবস্থা সংক্রান্ত, দ্বিতীয় ডোজ করোনা টিকার হালনাগাদ অবস্থা সংক্রান্ত, তৃতীয় ডোজ করোনা টিকা সংক্রান্ত বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃক হাসপাতালের নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারির বর্তমান অবস্থা সংক্রান্ত, স্থানীয় চাহিদার প্রেক্ষিতে টিকার পর্যাপ্ততা ও ব্যবহার সংক্রান্ত হালনাগাদ অবস্থা, ইউনিয়ন পর্যায়ে করোনা টিকার দেয়ার বর্তমান ও হালনাগাদ অবস্থা, মনিটরিং বোর্ড হালনাগাদ প্রসঙ্গ, হাসপাতালের ওষুধের হালনাগাদ তালিকা এবং ওষুধের পর্যাপ্ততা সংক্রান্ত, হাসপাতালের এম্বুলেন্স চালক সংকট এবং কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ সংক্রান্ত, বেড/কেবিন পেতে/ ইনজেকশন পুশ করতে/ড্রেসিং করতে অবৈধ লেনদেন যাতে না হয় এর জন্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ ও মনিটরিং ব্যবস্থা বৃদ্ধিকরণ প্রসঙ্গ, ব্রেস্টফিডিং কর্ণার নিয়মিত খোলা প্রসঙ্গে, দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত এম্বুল্যান্স চালকের বরখাস্ত প্রসঙ্গ, হাসপাতালের টয়লেটগুলো নিয়মিত পরিস্কার পরিছন্ন রাখা প্রসঙ্গ, অভিযোগ বক্সে পাওয়া বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে আলোচনা ও ব্যবস্থা গ্রহণ, জেন্ডার সংক্রান্ত/ নারী ও কিশোরী সেবার তথ্যবোর্ড হালনাগাদ ও স্থাপন, উপজেলার সকল উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়মিত ভিজিট ও মনিটরিং ব্যবস্থা বৃদ্ধি প্রসঙ্গ, উপজেলার সকল কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত ভিজিট ও মনিটরিং ব্যবস্থা বৃদ্ধি এবং কমিটিকে সক্রিয়করণ ইত্যাদি বিষয়।
মতবিনিময় সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আরো জানান, এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ করোনা টিকা দেয়া হয়েছে ৭১৪৮১ জনকে, দ্বিতীয় ডোজ করোনা টিকা দেয়া হয়েছে ৪০৭৬৪ জনকে। এখন পর্যন্ত টিকার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১,১২,০০০জন। এই বছর এখন পর্যন্ত নরমাল ডেরিভারী হয়েছে ১৫০ টি এবং সিজার হয়েছে ২৫ টি। এখন পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলে করোনা পজিটিভ হয়েছেন ৯০৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ৮৮১ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১১ জন।
সেবাগ্রহিতাগন শ্রীমঙ্গল উপজেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের কাছে সাতটি সুপারিশ তুলে ধরেন।
১) হাসপাতালে একজন দালাল নিয়মিতভাবে আসা যাওয়া করে এবং রোগীদেরকে বিভ্রান্ত করে শ্রীমঙ্গলের প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে রোগী পাঠায়,তার বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থ গ্রহণ করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে দালালমুক্ত ঘোষনা করা।
২) সিটিজেন চার্টার হালনাগাদ করে দৃশ্যমান স্থানে স্থাপন এবং এতে হাসপাতালের হটলাইন নম্বর যুক্ত করা ।
৩) উপজেলার সকল উপ–স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত ভিজিট ও মনিটরিং ব্যবস্থা বৃদ্ধি করা এবং কমিটিগুলোকে সক্রিয় করা।
৪) হাসপাতালে জরুরী যোগাযোগ রক্ষা করার জন্য একটি হটলাইন নম্বর এর ব্যবস্থ করা এবং এর বহুল প্রচার করা
৫)হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির নিকট লোকবল সংকটের বিষয়টি দ্রæত আলোচনা করে লোকবল নিয়োগ দেয়া।
৬) হাসপাতালের রোগীদের খাবারের মান খুবই নিন্মমানের, ঠিকাদারকে খাবারের মান বৃদ্ধির জন্য চিঠি দেয়া এবং এবং এতেও কাজ না হলে চলমান ঠিকাদারের সাথে চুক্তি বাতিল করে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেয়া।
৭) হাসপাতাল ক্যাম্পাসের টয়লেটগুলোর পরিস্কার পরিছন্ন রাখা এবং ব্যবহার উপযোগী রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
মতবিনিময় সভায় স্থানীয় স্বাস্থ্যবো নিয়ে আলোচনা হয় এবং আরো উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করা হয়।
মন্তব্য করুন