এক টুকরো পাউরুটি কিছুদিন টেবিলের উপর খোলা রেখে দিলেই দেখবেন সেটার উপর ছোট ছোট সাদা রঙের আস্তর পড়ে গেছে। কিংবা বহুদিন ধরে পানি জমে থাকা কোনো গাছের গুঁড়িতে বা ফুলের টবেও আমরা ব্যাঙের ছাতা (Mashroom) দেখতে পাই। এ সবই কোনো না কোনো ধরনের ‘ছত্রাক’ (Fungus) এর উদাহরণ।
এভাবে, মানবদেহেও ছত্রাকের আক্রমণ হতে পারে। আমাদের শরীরে প্রতিনিয়ত ছত্রাক ও ব্যাক্টেরিয়া আক্রমণের জন্য তৎপর হয়ে থাকে। তবে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জোরে এর বেশির ভাগই সফল হতে পারে না। কিন্তু যখনই ছত্রাক বাহিনী আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ছাড়িয়ে গিয়ে অনেক বেশি পরিমাণে শরীরের কোনো অংশ জুড়ে বাড়তে থাকে তখনই সেটাকে ছত্রাক সংক্রমণ (Fungal Infection) বলা হয়ে থাকে, এবং রোগীকে তখনই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয়। মানবদেহে সবচেয়ে বেশি যেটা দেখা যায় সেটা নখের ছত্রাক সংক্রমণ (Fungal Nail Infection)।
এটি কোন প্রাণঘাতী ঝুঁকিপূর্ণ রোগ নয়, কিন্তু এ থেকে সুস্থ হতে গেলে অনেক দিন সময় লেগে যেতে পারে। নখের ছত্রাক সাধারণত পায়ের নখে বেশি হয়ে থাকে, তবে কখনো কখনো কারো হাতের নখেও এটি দেখা দিতে পারে। এর জন্য যে ছত্রাকটি দায়ী তার নাম হল টিনিয়া আঙ্গুইয়াম (Tinea unguium)।
কিভাবে হতে পারে?
ছত্রাকটির সংক্রমণ নখের উপরে, মধ্যে বা নিচেও হতে পারে। যেকোন উষ্ণ, আর্দ্র ও অপরিষ্কার পরিবেশে ছত্রাক বেশি করে বৃদ্ধি লাভ করে।
আপনার শরীরের অন্য কোথাও ইতোমধ্যেই ছত্রাক হয়ে থাকলে তা নখে সংক্রমিত হতে পারে।
অন্য কারো ছত্রাক আছে এমন কোন মানুষের সংস্পর্শে এলেও আপনার নখে সেটা সংক্রমিত হতে
পারে।
নখে ছত্রাক চেনার উপায়/ লক্ষণসমূহঃ
১। ছত্রাক সংক্রমণ নখের প্রান্ত থেকে শুরূ হতে পারে
২। সংক্রমণটি নখের মাঝ্ বরাবর ছড়িয়ে পড়তে পারে
৩। নখে সাদা থেকে হলদে-বাদামী বর্ণহীনতা দেখা দিতে পারে
৪। নখের পুরুত্ব বেড়ে যাবে
৫। নখটি ভঙ্গুর হয়ে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যেতে পারে
৬। নখের চারপাশের ত্বকে ব্যথা এবং ফোলাভাব থাকবে
৭। সংক্রমিত নখ থেকে গন্ধ পাওয়া যেতে পারে
ছত্রাক ছাড়াও শরীরের অন্যান্য সংক্রমণেও নখে ছত্রাকের মতো দেখা দেয়, সেজন্যে এ রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হল, ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া।
ঝুঁকিতে কারা?
- যাদের ডায়াবেটিস আছে
- ৬৫বছরের বেশি বয়সী যারা
- কোনো রোগের কারণে রক্ত সঞ্চালন দূর্বল যাদের
- কৃত্রিম নখ পরেন যারা
- পাবলিক সুইমিং পুলে সাঁতার কাটেন যারা
- নখের আঘাত আছে যাদের
- নখের চারপাশের ত্বকে আঘাত আছে যাদের
- বহু সময় ধরে আঙুলগুলো আর্দ্র হয়ে থাকলে
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল যাদের
- বন্ধ পায়ের জুতো পরে থাকে যারা
প্রাথমিক চিকিৎসা-
- আক্রান্ত জায়গাটি পরিষ্কার রাখা
- অ্যান্টিফাঙ্গাল নেইল ক্রিম লাগানো, এটি সংক্রমণ নিরাময়ে বহু দিন সময় নিতে পারে এবং
সবসময় কাজ করে না - নখ নরম করার ক্রিম লাগানো, এটি নখকে নরম করতে কমপক্ষে ২ সপ্তাহ ব্যবহার করতে
হয় যাতে সংক্রমিত অংশটি কেটে ফেলা যায়
নখে ছত্রাক সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে যা যা করণীয়-
- আপনার হাত-পা পরিষ্কার ও শুকনো রাখুন
- মোজা পড়লে, সেটা পরিষ্কার কিনা দেখে পরুন
- জুতো পুরনো হয়ে গেলে বদলাবেন
- অন্যের তোয়ালে বা কাপড় না ধুয়ে ব্যবহার করবেন না
- নেইল-কাটার (যেটি দিয়ে আপনি নিয়মিত নখ কাটেন), আলাদা রাখুন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন?
যদি দেখতে পান
- ছত্রাকটির সংক্রমণ গুরুতর এবং প্রাথমিক চিকিৎসা কাজ না করলে
- সংক্রমণটি অন্যান্য নখে ছড়িয়ে পড়ছে দেখলে
চিকিৎসক যা করবেনঃ
চিকিৎসক আপনার সমস্যাসমূহ শুনবেন, দেখবেন ও পরীক্ষা করবেন।
কিছু ক্ষেত্রে, আপনার ডাক্তার বিশ্লেষণ ও সনাক্তকরণের জন্য নখের নমুনাটি একটি ল্যাবে পাঠাতে পারেন। সমস্যা সনাক্ত হয়ে গেলে ডাক্তার আপনাকে অ্যান্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেট ও ক্রিমের নাম লিখে দিতে পারেন। ওষুধগুলি দীর্ঘদিন নেয়া লাগতে পারে।
যে সমস্ত নখ খারাপভাবে সংক্রমিত হয়, সেগুলি অপসারণ করা প্রয়োজন হতে পারে।
সতর্কতাঃ
অ্যান্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেটগুলির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে-
মাথাব্যথা
চুলকানি
মুখের স্বাদ কমে যাওয়া
ডায়রিয়া
গর্ভবতী নারীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিফাঙ্গাল ট্যাবলেট নেয়া থেকে বিরত থাকা-ই বাঞ্চনীয়।
এগুলি আপনার যকৃতের ক্ষতি করতে পারে।
নখে ছত্রাক সংক্রমণ হয়ে গেলেও এতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। একটু সাবধানতা ও সচেতনতা অবলম্বন করলেই এটি রোধ ও নিরাময় সম্ভব।
লিখেছেননাজিফা ফারহাত হাই, এম বি বি এস স্টুডেন্টরিভিউ করেছেন,ডা কামরুল ইসলাম শিপু
মন্তব্য করুন