কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
কুলাউড়া উপজেলার ৯নং টিলাগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল দীর্ঘ প্রায় ১৭/১৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথমবারের মতো সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্বাচন হওয়াতে এই সম্মেলন ও কাউন্সিলকে ঘিরে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। সম্মেলনে তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃত্বে এবার নতুন মূখ আসবে এমনটাই ধারনা স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী ও ভোটারদের মাঝে।
শনিবার (৩১ মে) টিলাগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন ও কাউন্সিল। সকাল ১০টায় স্থানীয় বাংলাটিলা দাখিল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিএনপি সূত্র জানায়, সকালে প্রথম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ গোলাম রহমান আজমল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির আহবায়ক এড. ফয়জুল করিম ময়ূন। তাছাড়া প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিজান। বিশেষ অতিথি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা এড. আবেদ রাজা।
সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রেদওয়ান খান। তাছাড়া মৌলভীবাজার জেলা ও কুলাউড়া উপজেলা বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন। ২য় অধিবেশনে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, টিলাগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে ইউনিয়ন ও ৯টি ওয়ার্ড কমিটি মিলে মোট ভোটার সংখ্যা ৪৫৯ জন। এর মধ্যে ২ জন নারী ভোটারও রয়েছেন। এই প্রথম তৃণমূলে নেতৃত্ব নির্বাচনে সরাসরি ভোট হওয়ায় বেড়েছে কর্মী ভোটারদের কদর। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকে প্রচণ্ড গরম এবং বর্তমানে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপক্ষো করে প্রার্থীসহ তাদের কর্মীরা সকাল থেকে গভীর রাত অবধি নির্বাচনী প্রচারনা কাজে ইউনিয়নের ৪৪টি গ্রামে ব্যস্ত সময় পার করছেন। চায়ের টেবিল থেকে শুরু করে সর্বত্র চলছে শেষ হিসেব নিকেশের কাজ। চলছে চুল ছেঁড়া বিশ্লেষণ।
কেউ কেউ বলছেন, প্রার্থীদের মাঝে বিএনপির বিভিন্ন বলয়ের রয়েছেন। কেউ বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরাসরি এম এম শাহীনের পক্ষে নৌকা এমনকি পরবর্তীতে সোনালী আঁশের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা করেছেন মাঠে। আবার কেউ সুলতান মনসুরের ধানের শীষ প্রতীকে সরাসরি মাঠে কাজ করেছেন। আসন্ন কাউন্সিলে এদের নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ভোটাররা। এছাড়া সকলের মুখে একটাই কথা; এবার প্রথম সরাসরি ভোটের মাধ্যমে কারা হচ্ছেন টিলাগাঁও ইউনিয়র বিএনপির কাণ্ডারী।
তথ্যমতে, টিলাগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির কাউন্সিলে ৩ পদের বিপরীতে প্রার্থী হচ্ছেন ১১ জন। এর মধ্যে সভাপতি পদে সাবেক ইউপি সদস্য মো. আপ্তাব আলী, বিএনপির নেতা হাজী মো. আব্বাস আলী, ডা. কেরামত আলী ও মো. মশাহিদ আলী। সাধারণ সম্পাদক পদে মুহিবুর রহমান ছয়ফুল, মো. কামাল হোসেন ও মো. সুলতান মিয়া। তাছাড়া সাংগঠনিক সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রনেতা আব্দুল হালিম চৌধুরী, মখলিছুর রহমান, শফিকুর রহমান ও ফরিদ মিয়া। এর আগে ৩ পদের বিপরিতে উল্লেখিত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিল শেষে প্রার্থীতা যাচাই-বাছাই ও বৈধ্যতা ঘোষণা করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি।
বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন কর্মী ভোটার জানান, ইউনিয়নের প্রতিটি গ্রামে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। সব মিলিয়ে টিলাগাঁওয়ে জমে উঠেছে বিএনপি’র তৃণমূলের কাউন্সিল। এই কাউন্সিলে তৃণমূল বিএনপি কর্মীরা হচ্ছেন ভোটার। পুরুষের পাশাপাশি রয়েছেন ২ জন নারী ভোটার। কাউন্সিল উপলক্ষে মূল্যায়ন করা হচ্ছে তাদেরকেও। ইউনিয়ন পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করতে ওয়ার্ড থেকে শুরু হয়েছে গণতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া। এতে একদিকে যেমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চর্চা হচ্ছে অন্যদিকে সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে দল সুসংগঠিত হবে।
বিএনপির ওয়ার্ড পর্যায়ের কয়েকজন নেতা জানান, দীর্ঘদিন পর হলেও টিলাগাঁও ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে মামলা হামলায় নির্যাতিত নেতা-কর্মীরা জেগে উঠেছেন। অন্যদিকে বিএনপিকে সুসংগঠিত করতে ভোটারদের কাছে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীরা। কর্মীদের কেউ কেউ বলছেন, ভোট পেতে প্রার্থীদের কাছে সাধারণ কর্মীদের কদর অনেকটা বেড়েছে। প্রার্থীদের কেউ চা দোকানে, কেউ মাঠে, কেউবা বাড়িতে গিয়ে ভোটারদের কাছে দলের জন্য নিজের অবস্থান তুলে ধরছেন এবং তাদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছেন।
বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, ৩ পদের প্রত্যেকটিতে দ্বিমুখী লড়াই হবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউনিয়ন বিএনপির এক শীর্ষ নেতা জানান, কাউন্সিলে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মী ভোটাররা তাদের পছন্দের ও বিগত দিনে দলের ত্যাগী প্রার্থীকে তারা নেতা নির্বাচন করবে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন শীর্ষ নেতার সাথে বিভিন্ন সময় যারা সম্পর্ক রেখেছিল এবং সুবিধা নিয়েছিল তাদেরকে বিএনপির কর্মী ভোটাররা কাউন্সিলে বয়কট করবে। বিএনপির ওই নেতা আরো বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খোঁজ নিলেই এদের নাম, ছবি ও পরিচয় পাওয়া যাবে।
তিনি আরো বলেন, কাউন্সিল ঘিরে শেষ পর্যায়ে বেড়েছে নেতাদের সাথে কর্মীদের পারস্পরিক যোগাযোগ। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে এমন পরিবেশ দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে ইতিবাচক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আপনার মতামত লিখুন :