নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে॥
স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মাধবপুরে কোন বাস টার্মিনাল নির্মাণ হয়নি এখনো। বাধ্য হয়েই উপজেলা সদরের পৌরসভার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেই যাত্রীবাহী বাস থেকে শুরু করে পণ্যবাহী ট্রাক গুলো থামছে এবং যাত্রী ওঠা নামার সহ মালামাল লোড আনলোড হচ্ছে। ফলে বাড়ছে যানজট দুর্ঘটনাসহ জনদুর্ভোগ। মাধবপুর-হবিগঞ্জ রোডের বাস চালক মো. মজিদ খাঁন জানান, হবিগঞ্জ থেকে গাড়ি চালিয়ে মাধবপুর আসার পর গাড়ি পার্কিং করার জন্য জায়গা পাই না। তাই রাস্তার মাঝেই গাড়ি পার্কিং করতে হয় এতে করে যাত্রীসহ আমাদের অনেক সমস্যা হয়। রাস্তার পাশেই অনেক সরকারি খাশ জায়গা আছে সেখানে বাস, ট্রাক, সিএনজিসহ অন্যান্য যানবাহন রাখার জন্য টার্মিনাল করে দিলে আমরা ভোগান্তি থেকে রেহাই পাবো। মাধবপুর বাইপাস রোডের আরেক বাস চালক বিন্দু দাশ জানান, গাড়ি পার্কিং করার জন্য জায়গা নেই বাধ্য হয়ে আমাদেরকে মহাসড়কে গাড়ি পার্কিং করতে হয়। রাস্তার পাশে সরকারি জায়গা অবৈধভাবে দখল করে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ব্যবসা করছে ফলে রাস্তার পাশেও গাড়ি পার্কিং করতে বাধাগ্রস্ত হতে হচ্ছে। একটা নির্দিষ্ট টার্মিনাল হয়ে গেলে এই সমস্যার একটা স্থায়ী সমাধান হবে।
মাধবপুর উপজেলার পার্শ্ববর্তী উপজেলা হচ্ছে ব্রাহ্মনবাড়ীয়া জেলার বিজয়নগর ও নাসিরনগর উপজেলা। ফলে প্রতিদিনই উপজেলার উপর দিয়ে উল্লেখিত পার্শ্ববর্তী উপজেলার হাজার হাজার মানুষ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যানবাহন যোগে যাতায়াত করছে। মাধবপুর থেকে ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ও মাধবপুর থেকে হবিগঞ্জ রোডে প্রতিদিন শত শত লোকাল বাস চলাচল করে। এইসব বাসের জন্য নেই কোন নির্দিষ্ট বাস টার্মিনাল। মাধবপুর-ব্রাহ্মণবাড়ীয়া দিগন্ত লোকাল বাস কাউন্টারের সহকারী কেরানী মো. রুবেল খাঁন জানান, টার্মিনাল না থাকার কারনে রাস্তার মাঝেই যাত্রী নিয়ে বাস থামছে ও যাত্রী উঠা নামা করছে। যদি একটা টার্মিনাল থাকতো তাহলে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারতো ও যাত্রী ভোগান্তি কমে যেতো। তাছাড়া ঢাকা ও সিলেটে যাতায়াত করার জন্য মাধবপুর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী উপজেলার যাত্রীরা দূর পাল্লার গাড়ির জন্য সদর উপজেলাতে আসতে হয়। কিন্তু নির্দিষ্টভাবে কোন বাস স্টেশন বা টার্মিনাল না থাকায় উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেই দূরপাল্লার এইসব বাস সহ লোকাল বাসের যাত্রীরা উঠা নামা করছে। ফলে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও জীবন নাশের ঝুঁকি। কিছুক্ষন পরপরই সৃষ্টি হচ্ছে যানযট। দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস আল মোবারক টিকিট কাউন্টারের ম্যানেজার মো. কবির মিয়া জানান, টার্মিনাল না থাকায় আমাদের কোন নির্দিষ্ট টিকিট কাউন্টার নাই ফলে মহাসড়কের পাশেই ঝুঁকি নিয়ে টিকিট বিক্রি করতে হচ্ছে। বর্তমানে মাধবপুর উপজেলা সদর থেকে দূরপাল্লার অনেক যাত্রীবাহী বাসের টিকিট কাউন্টার আছে। একটা টার্মিনাল না থাকার কারনে প্রত্যেক গাড়ির টিকিট কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরা এবং যাত্রীরা প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অন্যদিকে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোর পণ্য লোড আনলোড করার জন্য নির্ধারিত স্থান থাকলেও সিএনজি ও অটোরিকশার জন্য নির্দিষ্ট কোন টার্মিনাল বা স্টেশন না থাকায় তারা লোড আনলোডের জায়গা ব্যবহার করছে। যার কারনে পণ্যবাহী যানবাহনগুলোও বাধ্য হয়েই মহাসড়কেই পণ্য উঠা নামা করছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি উপজেলার ভীতর দিয়ে যাওয়ায় ও মহাসড়কের পাশেই উপজেলা সদর বাজার থাকার কারনে মাধবপুর উপজেলাটি অর্থনৈতিকভাবেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জনসাধারণ ও ব্যবসায়ীদের উপচে পড়া ভীড় থাকে বাজারগুলোতে। টার্মিনাল নির্মানের গুরুত্ব সম্পর্কে মাধবপুর বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মঞ্জু পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “টার্মিনাল নির্মাণ আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি। মাধবপুরে একটা টার্মিনাল হলে বানিজ্যিকভাবে উপজেলাটির উন্নয়ন হবে। বাজারের যানযট হ্রাস পাবে। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।গত দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোকলেসুর রহমান বাস টার্মিনালের জন্য একটা জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। সেখানে ৫/৬ মাস ঐ জায়গায় বাস রাখার পর উল্লেখিত জায়গাটির মালিকানা দাবি করে এক ব্যক্তি আদালতের একটি রায়ের মাধ্যমে বাস রাখা বন্ধ করে দেয়। এরপর থেকে মহাসড়কেই থামছে গাড়ি।” টার্মিনালের ব্যাপারে মাধবপুর পৌরসভার মেয়র মো. হাবিবুর রহমান মানিক জানান, “আমি মাধবপুর পৌরসভায় সবেমাত্র মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহন করেছি। তবে পৌরসভাকে যদি টার্মিনাল করার জন্য সরকারিভাবে জায়গা নির্ধারণ করে দেয়া হয় তবে আমরা টার্মিনাল নির্মাণ করবো।”
এইদিকে স্থানীয়রা মনে করছেন মাধবপুরে একটি নির্দিষ্ট বাসটার্মিনাল করা হলে অর্থনৈতিকভাবে অনেক এগিয়ে যাবে উপজেলাটি এবং সরকারিভাবে রাজস্ব আদায়ের পরিমান বৃদ্ধিপাবে বহুগুণে। উপজেলা সদরের পৌরসভাতে অনেক খাশ জমি আছে যেখানে সরকার চাইলেই একটি সুন্দর ও পরিকল্পিত টার্মিনাল নির্মাণ করতে পারবে। টার্মিনাল নির্মাণ করার ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মঈনুল ইসলাম মঈন এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “টার্মিনাল নির্মাণের জন্য যে জায়গা নির্ধারিত করা হয়েছিল সেই জায়গাটি নিয়ে এক ব্যক্তির সাথে ঝামেলা থাকায় তা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। পূর্নাঙ্গ রায়ের পর বুঝা যাবে করনীয় কি। আর টার্মিনাল নির্মাণ হচ্ছে একটি মেঘা প্রজেক্ট যেটি উপজেলা পরিষদ বা প্রশাসনের আওতার মধ্যে পড়ে না। সড়ক ও জনপদ বিভাগ ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক নির্মান করার সময় মাধবপুরে বাস টার্মিনাল করার ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহন করতে পারে।” টার্মিনালের ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলার সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, ইতিমধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের চার লেনের কাজ অনুমোদিত হয়েছে।কিছুদিনের মধ্যে দরপতনের মাধ্যমে কাজ শুরু হবে। উর্ধতন কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছে চার লেনের কাজ করার সময় উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ স্লো মুভিং যানবাহনের জন্য রাস্তা করা হবে ফলে যানযট কিছুটা কমবে তাছাড়া চার লেন রাস্তা করার সময় যানবাহনের জন্য রাস্তা করা হবে। ফলে যানযট কিছুটা কমবে তাছাড়া চার লেন রাস্তা করার সময় মাধবপুরে বাস রাখার জন্য আলাদাভাবে একটা বাস টার্মিনাল করার পরিকল্পনা আছে।
মন্তব্য করুন