তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অপারেশন, প্যাথলজি এবং আল্ট্রাসনো কার্যক্রম মাসের পর মাস বন্ধ
দ্যা সিলেট পোস্ট
প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২, ২০২১, ১১:৫৭ অপরাহ্ন /
০
সুমন কর্মকার,, তালা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধিঃ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি মানসম্পন্ন অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। অপারেশন থিয়েটারে প্রয়োজনীয় অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি-ও রয়েছে। কিন্তু ব্যবহার না থাকায় লক্ষ-লক্ষ টাকা মূল্যমানের যন্ত্রপাতিগুলো নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। এতে একদিকে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হচ্ছে, অপরদিকে জনভোগান্তি বাড়ছে। ফলে সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তালা হাসপাতাল ৫০শয্যায় উন্নীত হবার পর নতুন ভবনের নতুন অপারেশন থিয়েটারে নব-উদ্যোমে রোগীদের অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে আকস্মিক অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। অভিযোগ ওঠে- নিজেদের বিশেষ স্বার্থে কতিপয় ডাক্তার এবং কর্মচারী যোগসাজসে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। এর বহু মাস পর জনদাবীর মুখে হাসপাতালের স্বাস্থ্য কমিটি এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. মুস্তফা লুৎফুল্লাহ উদ্যোগ নিয়ে অপারেশন কার্যক্রম পুনরায় শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতে আবারও সেই কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
জানাগেছে, অ্যানেস্থেশিয়া এবং অপারেশন বিশেষজ্ঞ নেই- এমন অযুহাত দিয়ে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম পরিকল্পিত ভাবে মাসের পর মাস বন্ধ রাখা হয়েছে। আর এখানকার অপারেশন কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ রাখার জন্য কর্তৃপক্ষ সবধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে! যার ধারাবাহিকতায় অপারেশন থিয়েটারের পাশ্ববর্তী অপারেশন যোগ্য রোগীদের রাখার স্থান “পোষ্ট অপারেটিভ রুম” পরিবর্তন করে সেমিনার কক্ষ করা হয়েছে।
তালা নাগরিক কমিটির সাধারন সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, তালা হাসপাতালে অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে রোগীদের পাশ্ববর্তী বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে প্রেরন করা হয়। সেখানে যেয়ে হাসপাতালের ডাক্তাররা ওই রোগীদের অপারেশন করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এমনকি অফিস সময়ে কোনও এক ডাক্তার ক্লিনিকে যেয়ে অপারেশন করেন বলে তথ্য রয়েছে।
নাগরিক নেতা শফিকুল ইসলাম বলেন, তালা হাসপাতালে বছরের পর বছর ধরে চরম দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়ম চলে আসছে। এসব দেখার কেউ নেই! তিনি বলেন, তালা হাসপাতালের সাবেক এক স্টাফের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট এখনও হাসপাতালের অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। মূলতঃ তার মাধ্যমে লুটপাট করে হাসপাতালকে ধ্বংসের দিকে নেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, পরিকল্পিত ভাবে হাসপাতালের অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখার পাশাপাশি প্যাথলজি ও আল্ট্রাসনো সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে রাখা হয়েছে। ফলে হাসপাতালে অপারেশন বা প্যাথলজি বা আল্ট্রাসনো সেবা পেতে যে খরচ হয় তা বাইরের থেকে করতে এখন ক্ষেত্রে বিশেষ ৮/১০ গুন বেশি খরচ হচ্ছে। অতিরিক্ত এই টাকার একটি অংশ কমিশন হিসেবে সংশ্লিষ্ট কতিপয় ডাক্তার হিসেব করে পেয়ে যান। যে কারনে, হাসপাতালের অতিগুরুত্বপূর্ন সেবা কার্যক্রমগুলো চালু হচ্ছে না।
তবে, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার এই অভিযোগগুলো অস্বীকার করে বলেন, অ্যানেস্থেশিয়া এবং কনসালটেন্ট না থাকায় দীর্ঘদিন অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া এখানকার ল্যাব টেকনিশিয়ান মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় প্যাথলজি বন্ধ। আর আপাতত সপ্তাহে দু’দিন আল্ট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন, বন্ধ থাকা এইসব সেবা কার্যক্রম অচিরেই আবার চালু করা হবে। এছাড়া একটি মহল হাসপাতাল ও তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং ষড়যন্ত্র করছে বলে তিনি জানান।
এব্যপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আলাউদ্দীন জোয়াদ্দার বলেন, হাসপাতালে দূর্নীতি, অনিয়ম এবং লুটপাট চলছে। এগুলো বন্ধে দিনের পর দিন আন্দোলন, সংগ্রাম করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালে মাদক সেবন, ডাক্তারদের কমিশন বাণিজ্য বন্ধ করতে না পারলে হাসপাতালের উন্নতি হবেনা। এই হাসপাতালে ডাক্তার খুবই কম। যে ক’জন ডাক্তার রয়েছে তাদের সকলের কাছে রোগীরা যায়না, আবার অনেকে নিয়োমিত হাসপাতালে আসেননা। বর্তমানে ডা. আল আমীন সোহান এবং ডা. অতনু ঘোষ অন্যদের তুলনায় নিরলস পরিশ্রম করে রোগী দেখেন।
তালার বিশিষ্ট রাজনীতিক মীর জিল্লুর রহমান বলেন, তালা উপজেলার সাড়ে ৩লক্ষ সহ সংলগ্ন কয়েকটি উপজেলার মানুষের চিকিৎসার আশ্রয়স্থল তালা হাসপাতাল। এখানে প্রতিদিন দুরদুরান্ত থেকে অনেক রোগী আসেন। অথচ, সকল যন্ত্রপাতি থাকার পরও অপারেশন, প্যাথলজি এবং আল্ট্রাসনো কার্যক্রম বন্ধ রাখায় রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। এছাড়া এই হাসপাতালে নানান দূর্নীতি এবং অনিয়মসহ বহু সমস্যা রয়েছে। এগুলো নির্মূল না করলে মানুষের ভোগান্তি কমবেনা। এজন্য তিনি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের অপর একটি সূত্র জানায়, দূর্নীতি এবং অনিয়মের যাতাকলে পড়ে হাসপাতালের অনেক সৎ ডাক্তার এবং স্টাফরা হয়রানীর শিকার হয়েছেন। দূর্নীতির প্রতিবাদ করায় অনেককে শোকজ করা সহ রাতারাতি হয়রানীকর বদলি করা হয়েছে। আবার মূখ বন্ধ রাখার জন্য এখনও অনেককে হুমকির মুখে রাখা হয়েছে।
ওই সূত্র আরও জানায়, কনসালটেন্ট বা ল্যাব টেকনিশিয়ান না থাকলেও অনেক হাসপাতালে বিকল্প ব্যবস্থায় সেবা কার্যক্রম চলমান রাখা আছে। কিন্তু এখানকার কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিত ভাবে অর্থ হাতিয়ে নেবার জন্য এসব সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে রেখেছে।
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রাজিব সরদার পূর্বের কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে স্বচ্ছতার সাথে হাসপাতাল পরিচালনায় সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে তালা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমার বলেন, হাসপাতালের একটি স্বাস্থ্য কমিটি রয়েছে। কমিটির সভা অনেকদিন হয়নি। এখানে অপারেশন কার্যক্রমসহ প্যাথলজি এবং আল্ট্রাসনো বন্ধ রয়েছে তা’ আমার জানা নেই।
আপনার মতামত লিখুন :