আমরা দেশে বিদেশের কত কত কবি সাহিত্যিকদের খবরা খবর জেনে থাকি। আমাদের ভারতবর্ষে জন্ম নেওয়া কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের অস্তিমজ্জার অংশ। কবি শামসুর থেকে কবি নির্মলেন্দু গুণ পর্যন্ত কত কত কবি সাহিত্যিক আছেন, যাদের নাম, কথা-কাহিনী বেশ জেনে থাকি, কিন্তু এই সময়ে একজন শক্তিমান কবি তার নাম খুব জানা হয়নি। তিনি জাতীয় মর্যাদার বৈশ্বিক চেতনার কবি হলেও তিনি মফস্বলের কবি হিসাবেই থেকে গেছেন। এই কবির নাম দিলওয়ার। তার আসল নামটি ছিল দিলওয়ার খান। পৈত্রিক নামে খান উপাধি যুক্ত থাকলেও তার জ্ঞান বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে নাম থেকে খান উপাধি বর্জন করেন। কবি মানব জাতির পাঠ ঠিকমতো বুঝে নেওয়ায় পদ পদবী আভিাজাত্য গুরুত্বহীন হয়ে উঠে। তার ভাষায় পৃথিবীর সকল মানুষই একদা ‘গণমানুষ’ তার কাছে মানুষের ইতিহাসই সঠিক হয়ে উঠে।
তার জন্ম ১৯৩৭ সালের ০১ জানুয়ারী সিলেটের খানমঞ্জিলস্থ ভার্থখোলা গ্রামে। এখন শহরতলী বা শহর হলেও সেই সময় পাড়া গায়ের মধ্যেই ছিল। তার পিতার নাম হাসান খান মাতার নাম রহিমুনেড়বছা। তার পরিবারে তারা চার ভাই চার বোন ছিলেন। তার পরিবার রক্ষণশীল পরিবার হিসাবেই স্বনামখ্যাত ছিল। বনেদী কায়দায় পরিবারের লোকজন একটা পারিবারিক ঐতিহ্যকে বহন করেছেন। এই হিসাবে দিলওয়ারের জীবন গড়ে উঠে। দিলওয়ারের প্রাথমিক লেখাপড়া শুরু হয় সিলেটের ঝালুপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সিলেটের রাজা গিরীশ চন্দ্র হাইস্কুলে এবং সিলেট মুরারি চাদ কলেজে। স্কুল জীবন থেকে তার লেখালেখির স্ফুরন ঘটে। তিনি ইংরেজী সাহিত্যের ছাত্র হলেও শারীরিক অসুস্থতার জন্য উচ্চ শিক্ষার জন্য চূড়ান্তভাবে উচ্চশিক্ষা শেষ করতে পারেন নি। ছাত্র জীবনে তার কবিতা, লেখালেখি শুরু, তার প্রথম কবিতার নাম ‘সাইফুল্লাহ হে নজরুল’। অসুস্থতা তখন থেকেই তার পিছ ধরে এমন অবস্থায় তিনি এক উর্দুবাসী মহিলার সঙ্গে পরিচয় ঘটলে পরিণয়ে রূপ নিলে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিদূষী এই নারীর নাম আনিছা খাতুন। তিনি তার জীবন সঙ্গী হওয়াতে তার কবিতা ফল্গুধারার মতো বইতে থাকে। এই সময় তিনি শিক্ষকতার চাকুরীতে যোগদান করে কিছুদিন পর চাকুরি থেকে ইস্তফা দেন। তিনি দৈনিক সংবাদ এর সহকারী সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালনে ঢাকায় অবস্থান করে পারিবারিক কারণে সিলেট চলে আসেন। তিনি সেভিয়েত দূতাবাসে অনুবাদকের চাকুরি পেয়েও বেশীদিন থাকতে পারেন নি। শেষ পর্যন্ত সিলেটই হয়েছে তার স্থায়ী আস্তানা। তবে শত সমস্যা ঝড়ঝঞ্জার মাঝে তার লেখা লেখিতে ছেদ পড়েনি। তিনি একজন প্রগতিশীল চিন্তার কবি হিসাবে নানা সংগঠনে যুক্ত থাকেন। উদীচী, খেলাঘর সিলেটে তার হাত দিয়েই সঞ্জীবনী সুধার মতো শক্তি পেয়ে উঠে। তার উদ্যোগে গণসংগ্রামী সংগঠন হিসাবে ‘সমস্বর শিল্পী সংস্থা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে গড়ে উঠা এই সংগঠন সিলেটে গানে গানে যে গণ মিছিল অনুষ্ঠান করে তা ইতিহাসের অংশ হয়ে আছে। এই ‘সমস্বর’ গড়ে উঠার ভেতর দিয়ে সিলেটে তরুণদের প্রগতিশীল প্রতিশ্রুতিশীল সাহিত্যের একটা বলয় তৈরী হয়। মুক্তিযুদ্ধে দিলওয়ার হয়ে উঠেন পশ্চিমা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর টার্গেট বা লক্ষ্যবস্তু। তিনি শহর ছেড়ে ভাটি অঞ্চল সমূহের দূর গ্রামে আত্মগোপনে চলে যান।
তিনি মুক্তিযুদ্ধে তরুণদের অনুপ্রেরণা দ্বারা তাড়িত করেন। এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে তার তিনটি গান রণসংগীত হিসাবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নিয়মিত ভাবে প্রচার হতে থাকে। রনাঙ্গনে তার এ গান চেতনার দ্বীশিখা হয়ে উঠে।
মুক্তিযুদ্ধে দিলওয়ারের অবদান স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর দৃষ্টি থেকে এড়ায় নি। বাংলাদেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশে হাতে গুনা মাত্র ক’জন কবি সাহিত্যিকদের মধ্যে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসাবে বঙ্গবন্ধুর সরকার তাকে ‘পলিটিক্যাল পেনশন’ ভাতা প্রদান করে সম্মানিত করেন। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দিলওয়ার এ ভাতা থেকে সরে আসেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি দিলওয়ার এর অগাধ আস্থা ও ভালবাসা ছিল। তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে দিলওয়ার দেশের পরিস্থিতি আঁচ করে তাকে উদ্বেগ জানিয়ে টেলিগ্রাম পাঠান, যা অধুনা সিকন্দর আবুজাফর সম্পাদিত সমকাল পত্রিকায় ছাপা হয়। মূলত মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমাজতান্ত্রিক চেতনা বহন করে দিলওয়ার এর মানসজগত গড়ে ওঠে। তিনি আজীবন শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে তার কলম সোচ্চার রেখেছেন। তিনি বরাবর একটি শোষনহীন মানবিক সমাজ আকাঙ্খা করেছেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে তার প্রত্যাশার দেশ খোঁজে না পেয়ে ক্ষোভে ও মর্মবেদনায় পীড়িত হয়েছেন।
দিলওয়ার বাংলাদেশ ও ভারতে একজন বিবেচ্য শক্তিমান কবি ছিলেন। তিনি এলিট বিদ্বানদের একটা অংশে উপেক্ষিত হয়েছেন। অনেকটা বিপরীত ¯্রােতে থেকে দিলওয়ার কবিতায় বাংলা একাডেমী ও একুশের পদক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। এছাড়া তিনি ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী উৎসবে সম্মানিত হয়েছেন। দেশের ভেতরে ও দেশের বাইরে নানা সংগঠনের ধারা সম্মানেও আখ্যায়িত হয়েছেন।
এই দিলওয়ার কবিতার পাশাপাশি একজন শক্তিমান ছড়াকার। কবিতায় তার নিজস্ব স্টাইল রয়েছে। তেমনি ছড়া রচনায়ও তার নিজস্ব একটা স্টাইল আছে দিলওয়ার কিভাবে আধুনিক কবি, কতটুকু আধুনিক কবি এই নিয়ে বিদ্বান মহলে (দিলওয়ার চর্চা নয়) কানাঘুষা আছে। ছোটদের জন্য দিলওয়ার খুশির ও আনন্দের কবি ও ছড়াকার। তিনি ছড়ার জগতে গতানুগতিক ছড়ার বাইরে স্বতন্ত্র ধারার ছড়া নিয়ে এসেছেন। তিনি তার ছড়ায় ছোটমনিদের ভুল পাঠ দিতে চান নি। ছড়ার মিলঝিল এর কারণে যেমন খুশি তেমন হয়ে উঠুক তা তিনি পচ্ছন্দ করেন নি। এইজন্য তারছড়া ঝংকিত ছন্দের তালের ভেতর জীবনের তাল খোঁজে পাওয়া যায়। তিনি ছড়ায় কোন অসত্য বার্তা দিতে চান নি। এখানে তার শিশুতোষ ছড়ার উদাহরন টানা যেতে পারে-যা বই আকারে ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত হয়। এই বইটির প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য বইয়ে তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবী রাখে। অথচ দিলওয়ার এই বই রচনার খবর হয়তো পাঠ্যবোর্ডের জানা বুঝায় নেই। দিলওয়ারে ছড়ায় অ, আ, ক, খ থেকে উদাহরণ তুলে ধরা হলো-
অ অলিওই উড়ে দেখি আ আকাশে নাবিল ভাস
গুণ গুণ করে দিন আর রাতে
মধু খোজে ফুলবনে পাখী উড়ে তারা ফোটে
মৌচাক গড়ে। মন তার মাতে।
ই ইটে ইটে গড়া হয় ঈ ঈদ নামে রমজান
কত ইমারত হয় যেই শেষ
ইটে মাটি কথা কয় ঈদুল ফিতর নাম
মন তার সৎ। ছড়ায় আবেশ।
ক ক-হরফে কথা কয় খ খাটে শুয়ে হাসে শিশু
বনের কোকিল মা যে তার পাশে
কুহু কুহু ডাক দেয় জানালার পথ ধরে
মনে আনে মিল। চাঁদ ঘরে আ ।
এভাবে দিলওয়ার বাংলা অক্ষর সবকটি ছড়ায় নিয়ে আসেন। ছড়া পাঠের মধ্যে দিয়ে শিশুরা অক্ষর চিনে নিতে পাবার সুযোগ পাবে। তিনি শিশুর মনে ছড়াতে মনের পরিপুষ্টি ও সৌন্দর্য্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন। বাংলা ভাষার সব কটি হরফেই তিনি ছড়ায় শিশু মন গঠনের বৃত্ত রচনা করেছেন।
দিলওয়ারকে এক সময় বলা হতো ছড়ার রাজা। তার একহাজার লাইনের একটা ছড়াও রয়েছেÑ‘এই দেশ কোন দেশ’ ছড়াটি এখন হাতের কাছে নেই। তার রচনা ‘শতছড়া’ বই আকারে প্রকাশিত হলেও ছড়ার হিসাবে বিন্দুমাত্র তার প্রকাশিত, অপ্রকাশিত, ছড়া শত শত। উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা যায়।
হাতের দিকে হাত বাড়াও
বুকের মাঝে বুক মিলাও
এক কাতারে সব দাড়াও
প্রাণে প্রাণে সুখ বিলাও
কিশোর তরুণ ভগিড়ব ভাই
রক্তে আসার অগিড়ব চাই।
পুকুরে নয় সিন্ধুতে
জীবন তো নয় বিন্দুতে
আওয়াজ তুলো সিন্ধু চাই
অফুরন্ত বিন্দু চাই
বিন্দু বিন্দু সূর্যরস
মরণ জয়ী দীপ্ত রস।
তেমনি আরেকটি ছড়া
তোমায় দেব একটি বাড়ী
ঝড়ের মুখে উড়বে না
ঐ বাড়ী ঐ বসুন্ধরা
দু:খে মাাথা খুড়বে না।
তোমায় দেবো একটি বাতি
সুর্য্যনামে সুখ্যাত
এই বাতিতেই তাড়িয়ে চলো
নিকষ আঁধার কুখ্যাত।
তোমায় দিলাম একটি চাবি
মানবতা নামটি তার
এই চাবিতে খুলবে তুমি
সকল কালের সিংহদ্বার।
এভাবে ছড়ায় অসংখ্য উদাহরণ টানা যায়। কিন্তু তার ছড়া বাংলা সাহিত্যে পাঠ্য তালিকায় শিশুতোষ ছাত্রদের নাগালের বাইরে থেকে গেছে। শিশুমন শিশুর জগতের মানচিত্র, স্বদেশ ও স্বজাতি তথা বিশ্বপ্রেম গড়ে উঠার জন্য দিলওয়ার এর ছড়ার জুড়ি নেই। কবিতা ও ছড়ায় সমকালীন সাহিত্যে তিনি এখনো উপক্ষিত বলে তিনি যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে আছেন। ছড়া সম্পর্কে দিলওয়ার এর চমৎকার উদাহরন হচ্ছে।
ছড়া নয় পানি পড়া
নয় কিছু মাদুলি
সেতো নয় ভিখারীর
আনা শিখি আধুলী
ছড়া বয় রক্তের কনাতে
অপমানে ফুসে উঠা ফনাতে
অলস সংগ্রামী আশাতে
একজোট মানুষের ভাষাতে
ছড়া তাই ঘরে ঘরে বিল্পব
অগ্রণী জীবনের উৎসব।
দিলওয়ার কত বড় কবি ছিলেন তা এখানে সহজে বিবেচনা যেমন কঠিন। তেমনি যোগ্যতারও ঘাটতি আছে। অতি সংক্ষেপে দিলওয়ার এর শক্তিমত্তা অনুমান করার জন্য একটিমাত্র উদাহরণ তুলে ধরার প্রয়াস নেওয়া হলো।
কবি নর্ম্যান রস্টন বিশ শতকের একজন মার্কিন কবি ও বিখ্যাত নাট্যকার আর্থার মিলার পরম্পর ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন। রষ্টন এত বড়ো মর্যাদারসম্পনড়ব কবি যে, তার কবিতার পংক্তি খোদাই করা আছে ব্রকলিন ব্রীজের গোড়ায়। হলিউডের লাস্যময়ী নায়িকা মেরেলিন মনরো আর্থার মিলার এর জীবন সঙ্গী। এক সময়ে রোস্টনের সঙ্গে মেরিলিন মনরোর প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠে। মেরেলিন মনরো যে গুটিকয়েক কবিতা লিখেন তা রস্টনের কাছেই ছিল। মেরেলিন মনরোর আত্মহত্যার পর মার্কিন ম্যাগাজিন ‘লাইফ ফটোস্টোরি’ রচয়িতা নর্ম্যান রস্টন Ñযে প্রতিবেদন পাঠ করে দিলওয়ার একটি কবিতা লিখেন মার্কিন ম্যাগাজিনেÑ যা পড়ে রস্টন চমকে উঠেন। এই সুত্রে দিলওয়ার এর সঙ্গে রস্টনের এক গভীর সম্পর্ক গড়ে উঠে।
দিলওয়ার এর কবিতার শক্তিমত্তাকে সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করেন। দিলওয়ার এর ইংরেজী কবিতার নাম ছিল ‘এ গ্লান্স অব এম.এম’
“ ইউ মে কল হার
অ্যা ব্যড গার্ল
অ্যা ম্যাড গার্ল
অ্যা মরবিড হিউম্যান ফ্রাইট
বাট আই নো, ও লিসন টু মি
সি ইজ এ স্যাড গার্ল
অ্যা রেড গার্ল
অ্যা জোডিয়াক্যাল অব লাভ অ্যান্ড লাইট
মধ্যের পংক্তিগুলো ছিল-
হোয়েন দি নাইট ইজ ডিপ
অ্যান্ড স্লিপ ইজ রেয়ার
আই ফাইন্ড হার হার্ট স্যাড
আই ফাইন্ড হার ইন প্রেয়ার
সো আইনো, ও লিসন টু মি
সি ইজ এ স্যাড গার্ল
এ রেড গার্ল
অ্যা জোডিয়াক্যাল অব লাভ অ্যান্ড লাইট
এ প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক গবেষক মুফিদুল হক এর একটা উদ্ধৃতি উল্লেখ করা যেতে পারে “যখন আমোরিকাতেও খুব সামান্য কজন ব্যাক্তিত্ব উপলবিদ্ধ করতে পেরেছিলেন গ্লামার কন্যা মেরেলিন মনরোর অর্ন্তগত বিষাদ, তখন বাংলার সংবেদনশীল কবি হয়েছিলেন সেই বেদনার রূপকার এবং সেই সুবাদে মেরেলিন সুহৃদ লেখক নর্ম্যান রস্টনের সঙ্গে তার গড়ে উঠে নিবিড় বন্ধুত্ব।….মেরেলিন মনরোকে বুঝতে মার্কিন সমাজের লেগেছিল কয়েক দশক, দিলওয়ারকে বুঝতেও আমাদের প্রয়োজন হবে তেমনি সাধনার।”
দিলওয়ার সম্পাদনা, ইসকহাক কাজল ও আহমদ সিরাজ। পৃষ্টা ১২৮
দিলওয়ার কবিতার পাশাপাশি প্রবন্ধ, গল্প, নাটক, গান, ছড়া, লিখেছেন। তার প্রবন্ধ, বাংলাদেশ জন্ম না নিলে, নাটক রুধিরাক্তকাল। উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ জিজ্ঞাসা-১৯৫৩, ঐক্যতান-১৯৬৪, পূবাল হাওয়া (গানের বই)-১৯৬৫, উদ্বিনড়ব উল্লাস-১৯৬৯, বাংলা তোমার আমার (গানের বই)-১৯৭২, ফেইসিং দ্যা মিউজিক (ইংরেজী কাব্যগ্রন্থ)-১৯৭৬, স্বনিষ্ঠ সনেট-১৯৭৯, রক্তে আমার অনাদি অস্থি-১৯৮১, দিলওয়ারের শতছড়া-১৯৮৯ প্রভৃতি।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের একাডেমীসিমিয়ান এলিট বিদ্বান মহলে দিলওয়ার অনেকটা চেপে কবি হলেও মৌলভীবাজার-কমলগঞ্জে দিলওয়ার এর কবিতার স্পন্দন পাওয়া যায়। এ জায়গা সমূহ দিলওয়ার এর হৃদয় এর মতো হয়ে উঠে। এখানকার সাহিত্যানুরাগীদের কাছে তিনি এক অভিনড়ব ঘর হয়ে উঠেন। দিলওয়ার কবিতার হোল্ড টাইমার ছিলেন। শরীর তার দূর্বল থাকলেও সদা লেখালেখিতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি সুহৃদ অনুরাগীদের কা প্রতিনিয়ত ফোনে ম্যাসেজ পাঠাতেন যা সাহিত্যের কবিতার বার্তা বহন করেছে। বাংলাদেশে এমন সব কবিতার উদাহরণ কমই আছে। মৃত্যুর কিছুদিন আগে দিলওয়ার তার প্রিয় এক সুহৃদ ডক্টর সেলু বাসিতকে মোবাইল ম্যাসেজে পাঠানঃ ২০ মে ২০১৩ খ্রিস্টাব্দ। সমাধিলিপি হিসাবেঃ
দেহের মানুষ আমি
দেহান্তের খুব কাছাকাছি
হে পৃথিবী, হে মানুষ
অলৌকিক প্রত্যাশায় আছিঃ
স্বজ্ঞানে নিখোজ হবো
প্রাকৃতিক এই অভিজ্ঞান
মানুষ আমার কাছে রেখে যাই
আমার সন্ধান।
মৃত্যু ১০ অক্টোবর ২০১৩ খ্রি.
লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক।
মন্তব্য করুন