বিশেষ প্রতিনিধিঃ
সভাপতি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুল মনসুর বলেন- মণিপুরী নৃত্যকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় কাজ করেন৷ ইউনেস্কো আমাদেরকে কিছু গাইড লাইন দিয়েছে সেই হিসেবে কাজ করছি আশাকরি আমরা মণিপুরী নৃত্যকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবো৷ ।
বর্ণাঢ্য আয়োজনে তুমুল হৈ চৈ, আনন্দ-উৎসাহে ঢাক-ঢোল, খোল-করতাল আর শঙ্খ ধ্বনির মধ্য দিয়ে মৌলভীবাজারের সীমান্তবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ও আদমপুরে মণিপুরি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব মহারাসলীলা ৮ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। মণিপুরী সম্প্রদায়ের এ বৃহত্তম উৎসব উপলক্ষে মণিপুরী ললিতকলা একাডেমি নতুন ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সভাপতি বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মোঃ আব্দুল মনসুর এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মণিপুরি সম্প্রদায়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে আলাদা ঔজ্জ্বল্য নিয়ে অবস্থান করছেন বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। মণিপুরিদের নৃত্যকলাকে ধর্মীয় আচারের গণ্ডি থেকে বের করে এনে বিশ্বমণ্ডলে স্থান করে দিয়েছিলেন তিনি। তাঁর পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই মণিপুরি জাতি ও তাদের নৃত্যকলা বিশ্বের কাছ পরিচিতি লাভ করেছে। উল্লেখ্য, ১৯১৯ সালে নভেম্বরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটে এলে প্রথমে মণিপুরী হস্তশিল্প ও এর কারুকাজ দেখে তিনি অভিভূত হন। পরে তিনি জানতে পারেন এই হস্তশিল্পের কাপড় মণিপুরীদের তৈরি। তিনি সিলেটের মাছিমপুরে মণিপুরীপাড়ায় গিয়ে মণিপুরী রাখাল নৃত্য দেখে মুগ্ধ হয়ে রাসলীলা নৃত্য দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ‘রবীন্দ্রনাথ মণিপুরী নৃত্যকলায় এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন যে, কলকাতায় ফিরে কবিগুরুর আমন্ত্রণে যোগ দেন মণিপুরী রাসনৃত্যের গুরু কমলগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের নীলেশ্বর মুখার্জ্জী।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যের জন্য আলাদা শাখা গঠন করা হয়। পরবর্তীকালে রবীন্দ্ররচনাতেও পাওয়া যায় মণিপুরি নৃত্যের প্রভাব। রবীন্দ্রনাথের চিত্রাঙ্গদা, চণ্ডালিকা, মায়ার খেলা, নটীর পূজা, শাপমোচন নৃত্যনাট্যে মণিপুরি নৃত্যেও সুর ও তাল অনুসরণ করা হয়েছে। ১৭৬৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজা ভাগ্যচন্দ্র সিংহের আয়োজনে মণিপুরিরা প্রথম রাসলীলা পালন করেন। সে সময় মণিপুরি রাজা স্বপ্নাদীষ্ট হয়ে কন্যা লাইরোবিকে রাধার ভূমিকায় অবতীর্ণ করে রাস অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন। মৈথিলি ও ব্রজবুলি ভাষার বিভিন্ন পদের মণিপুরি সংগীতের নিজস্ব গায়কী ও মুদ্রা-পদবিক্ষেপে জটিল এবং ধ্রপদি ধারার গীতি-নৃত্যধারায় তা পালন করা হয়েছিল। মণিপুরিদের আদিভূমি ভারতের মণিপুর থেকে এই রাস উপমহাদেশে তথা সমগ্র বিশ্বের নৃত্যকলার মধ্যে একটি বিশেষ স্থান করে দিয়েছে। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান হলেও এর নৃত্যশৈলী বরাবরই সব ধর্ম ও জাতির মানুষকে আকর্ষণ ঘটছে।
মন্তব্য করুন