হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ॥
পলো বাওয়া উৎসব শত বছরের পুরনো ঐতিহ্য। আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার পুরো সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে নবীগঞ্জ উপজেলার বিজনা নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে পলো বাওয়া উৎসব। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে দীর্ঘদিন ধরে চলে প্রস্তুতি। উৎসবে যোগ দিতে দূর দুরান্ত থেকে আসেন শিকারীরা। মঙ্গলবার(৭ জানুয়ারি) দুপুরে নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের বিজনা নদীতে একসঙ্গে পলো নিয়ে নদীর পানিতে ঝাঁপ দিয়ে পলো বাওয়া উৎসব করেন মাছ শিকারীরা।জানা যায়- প্রাচীনকাল থেকে পৌষ-মাঘ মাসে বিল বা উন্মুক্ত হাওরে দল বেঁধে মাছ শিকার করা হতো। যাকে বলা হয় পলো বাইছ বা পলো উৎসব। জলাশয় শুকিয়ে যাওয়ায় এবং কালের পরিক্রমায় এখন সেই পলো উৎসব হারিয়ে গেছে। গ্রাম বাংলা প্রাচীন সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে গতকাল মঙ্গলবার নবীগঞ্জ উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের বনগাঁও, লামরোহ, গজনাইপুর, কান্দিগাঁও, রুদ্রগ্রাম নিয়ে গঠিত পাঁচ মৌজার উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় পলো বাওয়া উৎসব। এতে গজনাইপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন-গ্রাম, আউশকান্দি ইউনিয়নের আউশকান্দি গ্রামসহ পাশ্ববর্তী বাহুবল, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার শেরপুর ও কাগাবালা এলাকা থেকে আগত নানা বয়সের কয়েক শতাধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন। এ সময় তাদের হৈ-হুল্লোড়ে অন্যরকম আমেজ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দুই ঘণ্টা মাছ ধরা শেষে একে একে উঠে আসেন তারা। সবার হাতে ছিল নানা ধরনের দেশীয় মাছ। কারো হাতে ছিল বড় বোয়াল, কারো হাতে ছিল কাতলা, শোল, গজার কিংবা রুই মাছ। আর জাল দিয়ে ছোটরা শিকার করেন টেংরা-পুঁটিসহ ছোট মাছ।বাহুবল উপজেলা থেকে আসা আকবর মিয়া বলেন- ছোটবেলায় দেখতাম অনেক বড় করে এই পলো উৎসব অনুষ্ঠিত হতো। কিন্তু এখন আর আগের মতো হয় না, আর মাছও পাওয়া যায় না। তবুও পলো উৎসবের কথা শুনে এতেদূর থেকে এসেছি মাছও পেয়েছি।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলার কাগাবালা গ্রামের মিজান মিয়া বলেন- পলো উৎসবে মাছ ধরাটা মুখ্য নয়। হাজার হাজার মানুষের সাথে মাছ ধরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পেরে খুব ভালো লাগছে।
বনগাঁও গ্রামে সৈয়দ মিছবা উজ্জামান বলেন, আমাদের পাঁচ মৌজার পক্ষ থেকে পলো বাইছ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে, অনেক ভালো লাগছে, এই উৎসবে শত-শত মানুষ বিভিন্নস্থান থেকে অংশ নিয়েছেন। আশা করছি প্রতিবছর এমন পলো বাওয়া উৎসব আয়োজন করা হবে।
দিনারপুর কলেজের প্রভাষক মোশারফ আলী বলেন- একটা সময় শুষ্ক মৌসুমে হাওর ও বিলের পানি শুকিয়ে আসতো। গ্রামের মানুষ তখন দল বেঁধে পলো ও ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরার উৎসবে মেতে ওঠেন। গ্রাম-বাংলার প্রাচীন এই সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পলো বাওয়া উৎসবের এমন আয়োজন সত্যি প্রশংসনীয়।
মন্তব্য করুন