প্রতিশোধ-পাল্টা প্রতিশোধ এর সংস্কৃতির কবর রচনা করতে হবে


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ৯:৪০ অপরাহ্ন /
প্রতিশোধ-পাল্টা প্রতিশোধ এর সংস্কৃতির কবর রচনা করতে হবে

“তুই দিয়েরে- মুই দিয়ে।” আপনি দিয়েছেন – তাই আমিও দিচ্ছি, আপনি করেছেন-আর তাই আমিও করছি, আপনি দেখিয়েছেন আর তাই আমিও দেখাচ্ছি। হিংসা-বিদ্বেষ, প্রতিশোধ-পাল্টা প্রতিশোধ এর বিপরীতে সহনশীলতা, ক্ষমা ও সম্প্রীতির জয়গানের মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে নতুন রাজনৈতিক আদর্শের যাত্রা শুরুর কোন বিকল্প নাই।

Politics of Bangladesh!
বর্তমানে দেশে প্রতিশোধ পরায়ণ দুইটি পক্ষ মুখোমুখি এবং তাঁদের কার্যকলাপে মনে হচ্ছে আজীবনই মুখোমুখি থাকবে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে কেউ কাউকে ছাড় না দিয়ে দেশকে ভ্রাতৃঘাতী গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিবে। লাখ লাখ মানুষ খুন হবে। এতে করে দেশ ও নিজেরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকাসহ অদূর ভবিষ্যতে দেশ একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়ে যাবে।

উপরোক্ত ধারণার কারণঃ
অতীতে যা দেখলাম!
বিবদমান দুই দলের একদল ক্ষমতায় এসে আংশিক সিন্ডিকেট প্রথা চালু করেছিলো-পরবর্তীতে অন্যদল তা থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরোপুরি সিন্ডিকেট প্রথা চালু করলো।
একদল বাংলাদেশে বিরাজমান সকল দলকে অগ্রাহ্য করে ১৫ ফ্রেব্রুয়ারি-১৯৯৬ ভোটারবিহীন একক নির্বাচন করে বসলো-আবার অন্যদল ক্ষমতায় এসে ২০১৪ ও ২০১৮ পরপর ২টি নির্বাচন বলতে গেলে এককভাবে করে বসলো। রাস্তায় একদল অন্যদলের কর্মীদের প্রকাশ্য দিবালোকে দিগম্বর করার চেষ্টা করেছে-পিঠিয়েছে আবার অন্যদল ক্ষমতায় এসে প্রতিশোধ হিসেবে পিঠানোসহ পুরোপুরি দিগম্বর করেই ছেড়েছে। এ যেন প্রতিশোধ – পাল্টা প্রতিশোধ এরই খেলা।

Tit for tat, তুই দিয়েরে- মুই দিয়ে। আপনি দিয়েছেন – তাই আমিও দিচ্ছি, আপনি করেছেন-আর তাই আমিও করছি, আপনি দেখিয়েছেন আর তাই আমিও দেখাচ্ছি। এই দেখাদেখিতে দেশের ৯৩% জনগণ কি সন্তুষ্ট? তাঁরা কি বিরক্ত হচ্ছেন না? এসব দেশের জন্য আদৌ কোন কল্যাণ কি বয়ে আনছে?
দেশে বিবদমান ২টি পক্ষের এরকম দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ এড়িয়ে উভয় পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির মাঝামাঝি আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি দাঁড় করাতে হবে-যা উভয় পক্ষের কট্টরপন্থীরা না মানলেও উভয় পক্ষের বাকী সবাই যাতে মেনে নিতে পারেন- দৃষ্টিভঙ্গি যাতে সেরকম হয়-সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

পাল্টাপাল্টি সংস্কৃতি দেশের অস্তিত্বের স্বার্থে বন্ধ হওয়া খুবই জরুরি।

বিবদমান দুই দলের দৃষ্টিভঙ্গি এড়িয়ে তৃতীয় গ্রহণযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে উভয় দলের সহনশীলদের এক প্ল্যাটফর্মে আনা গেলেই কেবলমাত্র দেশের মুক্তি সম্ভব অন্যথায় দেশ অনিবার্য সংঘাত থেকে বাঁচতে পারবে না। আর তাই সময় থাকতে এবং দেশকে বাঁচানোর স্বার্থে প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধ এর সংস্কৃতি ভুলে গিয়ে সহনশীল ও ক্ষমাশীল হয়ে যদি আমরা মধ্যপন্থী, মডারেট ও সার্বজনীন তৃতীয় আদর্শকে সত্যিকারভাবে ধারণ ও লালন করে রাজনীতিতে একটিভ হই-তাহলে বিবদমান দুই পক্ষের নিরীহ সমর্থকরা দলে দলে তৃতীয় আদর্শকে গ্রহণ করতে থাকবেন অন্যদিকে বিবদমান দুই দলের সমর্থক কমতে কমতে এক পর্যায়ে উভয় দলে স্বার্থবাদী ও কট্টরপন্থীরা ছাড়া আর কেউ থাকবে না। বিবদমান দুই দলের আদর্শের লোক ব্যাপকভাবে কমে গিয়ে দল ২টির আদর্শের অনুসারীরা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়ে যাবে অন্যদিকে উভয় দলের কট্টরপন্থী নয়-এরকম ব্যাপক মানুষ তৃতীয় আদর্শের দিকে ঝুঁকে পড়ার কারণে তৃতীয় আদর্শের সমর্থক বিবদমান দুই দলের সমর্থককে ছাড়িয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতে পরিণত হয়ে যাবে। তখন বিবদমান দুই দল তাঁদের পিছনে জনগণের শক্তি কিংবা সমর্থন দেখতে না পেয়ে ক্ষান্ত হয়ে যাবে আর এতে করে দেশ ভ্রাতৃঘাতী গৃহযুদ্ধ থেকে বেঁচে যাবে।

দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সহনশীল, ক্ষমাশীল ও সার্বজনীন তৃতীয় আদর্শের জয় হোক-এই প্রত্যাশা করছি।

লেখক
সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি
চট্টগ্রাম মহানগর শাখা