মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
সমন্বয়ক আবদুল কাদের শেখ হাসিনার পতনের নয় দফা ডাকসুর বর্তমান শিবির সভাপতি এস এম ফরহাদ এর বলে তখন স্বীকার করলেও এখন সে ভিন্ন কথা বলে দ্বিচারিতার প্রমাণ দিচ্ছে। অন্যদিকে নাহিদ-আখতার-মাহফুজ গংরা ২০২৩ সালের ৪ অক্টোবর গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি গঠনের সময় থেকে শিবিরের সহযোগিতা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এখন তারা হিংসা ও বিভেদের রাজনীতিসহ চরম দুর্নীতি করছে।
বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় জামায়াত শিবির অনেক এগিয়ে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্তের কারণে তাদেরকে সাফারার হতে হয়। সতর্ক ও কৌশলী না হলে ভবিষ্যতেও তাদের অনেক মূল্য দিতে হবে। ১৯৯১ সালে সংরক্ষিত সব আসন জামায়াতকে দেওয়ার শর্তে বিএনপিকে সমর্থন দিলে বিএনপি জামায়াতের বিপক্ষে গিয়ে জামায়াতের সাথে ঝামেলা করার তখন সাহস করতো না। গোলাম আজম জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে আসলেও জিয়া কিংবা এরশাদ কেউ তাঁকে গ্রেফতার করেননি। কিন্তু জামায়াতের সমর্থনে সরকার গঠন করে বিএনপি ১৯৯২ সালে সেই গোলাম আজমকে গ্রেফতার করে। ১৯৯১ সালে সরকার গঠনের পূর্বে একাধিক মন্ত্রীত্ব দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামীলীগ জামায়াতের সমর্থন পেতে গোলাম আজমের কাছে গিয়েছিল। জামায়াত যদি আওয়ামীলীগকে সমর্থন দিতো তখন বিএনপির পরিবর্তে আওয়ামীলীগই সরকার গঠন করতো। যদি সংরক্ষিত ৩০ (তখন সংরক্ষিত আসন ৫০ ছিল না) আসনের বিনিময়ে জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন দিতো তাহলে সংসদে বিএনপি সংখ্যাগরিষ্ঠ হতে পারতো না এবং জামায়াতের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করলে এবং জামায়াতের সাথে ঝামেলা করলে জামায়াতের (১৮+৩০) সমর্থন প্রত্যাহার করে নিলে আওয়ামীলীগ জোট তা লুফে নিয়ে সংসদে অনাস্থা প্রস্তাব এনে সরকারের পতন ঘটিয়ে দিতো। সরকারের পতন ঘটানোর জন্য আওয়ামীলীগ-জামায়াতের ১৭৩ দিন হরতাল দেওয়ার প্রয়োজন পড়তো না। ৫ বছর তথা ১৯৯৬ পর্যন্ত সরকার পতনের প্রহর গুনতে হতো না।
জামায়াত নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন দিলেও বিএনপি জামায়াতকে মাত্র ২টি সংরক্ষিত আসন দেয়। বাকী ২৮টি আসন বিএনপির ১৪০ আসন এর সাথে যুক্ত হয়ে বিএনপির মোট আসন দাঁড়ায় ১৬৮। তারমানে সংসদে বিএনপির একক আসন সংখ্যা অর্ধেকের বেশি তথা বিএনপি সংসদে সংখ্যা গরিষ্ঠ আসনধারী দল। যখন জামায়াত, বিএনপি-আওয়ামীলীগ উভয়ের কাছে অপরিহার্য তখন জামায়াত হাতেম তায়ি হয়ে সুবিধা নেয়নি। ফলশ্রুতিতে জামায়াত নিজেদেরকে তখন অনিরাপদ করে ফেললো। অন্যদিকে জামায়াত অপরিহার্য না হওয়া সত্ত্বেও ২০০১ সালে দুইটি মন্ত্রণালয় নেয়। জামায়াতের দুইজন মন্ত্রী শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত থাকলেও একটা গোষ্ঠী সুযোগ পেয়ে পরিকল্পিতভাবে বিএনপির আমলের যাবতীয় দুর্নীতি ও ব্যর্থতার দায়ভার বিএনপির পাশাপাশি জামায়াতের উপরও চাপিয়ে দেয়৷
আখতার-নাহিদদের গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি ৪ অক্টোবর ২০২৩ সালে গঠিত হয়। গঠনের পূর্বে তারা শিবিরের সাথে আলাপ করে গঠন করেছিলো বলে ঢাবি এক শিবির নেতা মিডিয়াতে কিছু দিন পূর্বে জানান দেয়। দেশের রাজনীতিবিদদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বারবার ব্যর্থতা এবং দেশের মানুষ যে পরিবর্তনের অপেক্ষায় আছে তা বুঝতে পেরে এবং কাজে লাগাতে ছাত্রশক্তি গঠনের লক্ষ্যে কয়েকজন ছাত্র সর্বপ্রথম শিবিরকে জানিয়ে ও শিবিরের সমর্থন নিয়ে যাত্রা শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০/১২ জন শিক্ষার্থী ব্যতীত দেশ ব্যাপী তাদের কোনো কর্মী কিংবা সমর্থক না থাকলেও তারা প্রথম দিকে শিবিরের বেকিং পেয়ে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও আসিফ গংদের সাথে গোপনে শলাপরামর্শ করে এগিয়ে যায়। তাদের পরিকল্পনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুরু থেকে ছিলো। তারা মেটিকুলাসলি এডভান্স হয়েছিল। ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর সাথে তাদের যোগাযোগ থাকলেও শিবির যাতে বুঝতে না পারে তারজন্য ৫ আগস্ট কৌশলে তখনকার ঢাবি শিবির সভাপতি সাদিক কায়েমকে দিয়ে তারা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর নিকট প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার প্রস্তাব পাঠায়। ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে হাসিনা পরবর্তী দেশের প্রধান নির্বাহী হবেন তা আমি ৫ আগস্ট এর একমাস পূর্বে তখন আমেরিকায় থাকা একজনের সাথে দীর্ঘক্ষণ আলাপে জানতে পারি। আমেরিকায় থাকা সেই ব্যক্তি এখন বাংলাদেশে বড় পদ নিয়ে আছেন। সবকিছু মেটিকুলাসলি ডিজাইন করা থাকলেও জামায়াত-শিবির জানতো না। তবে আন্দোলনে তথা সরকার পতনের জন্য জামায়াত শিবির মনপ্রাণ উজার করে সর্বতোভাবে কাজ করেছিলো। অন্য অনেকদলসহ জামায়াত-শিবিরকে ব্যবহার করে সরকারের পতন ঘটানোটা দোষের ছিল না। দোষ হলো: তারা দেশের রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের আখের গোছানোতে ব্যস্ত হয়ে দেশকে এখন অন্য আরেক রকম সংকটে ফেলা দেয়া।
মুখোশধারী, সুযোগ সন্ধানী ছাত্র উপদেষ্টারাসহ তথাকথিত সমন্বয়করা আকন্ঠ দুর্নীতিতে জড়িত না হলে দেশে তাদের গ্রহণযোগ্যতা অটুট থাকতো ফলশ্রুতিতে তাদের দ্বারা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়া সম্ভব ছিল কিন্তু এখন তারা সব শেষ করে দিয়েছে। দেশবাসীকে আশাহত করেছে। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিচারের কাঠগড়ায় কে দাঁড় করাবে? দেশের সুপ্রিমো ড. মুহাম্মদ ইউনূস থেকে আমরা লি কুয়ান ইউ কিংবা মাহাথির মোহাম্মদ এর মতো সফলতা প্রত্যাশা করলেও তিনি ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে তেমন সফলতা উপহার না দিয়ে উল্টো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ দুর্নীতিতে জড়িত।
হতাশ চলে চলবে না। আমাদেরকে উপায় বের করতেই হবে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উৎকৃষ্ট ফর্মূলা দেশবাসীর নিকট উপস্থাপন করে দেশবাসীর সমর্থন নিয়ে ভূমিধস বিজয় নিয়ে স্বাধীনতার পর থেকে এই পর্যন্ত যে স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে আমরা স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়বোই। ইনশাআল্লাহ।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
মুখপাত্র
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
আপনার মতামত লিখুন :