হবিগঞ্জপ্রতিনিধি ॥
‘আমরা বনকে বাঁচাব আগামী প্রজন্মের জন্য’। এই শ্লোগানকে সামনে রেখে সাতছড়ি বনের জীববৈচিত্রকে আরো সমৃদ্ধ করতে আমেরিকা দাতা সংস্থা ইউএসআইডি’র অর্থ ও কারিগরি সহায়তায় ২৪১ হেক্টর বনকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বন এলাকার লোকজন, জনপ্রতিনিধি ও সরকারি লোকদের নিয়ে গঠন করা হয় সহব্যবস্থাপনা কমিটি। দাতা সংস্থার টাকায় বনে ভেতর কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়। প্রকৃতি সংরক্ষণের নামে ওয়াচ টাওয়ার ও কিছু বনের ভেতর নির্মাণ করা হয়, পাকা দালান ও মোটা অংক ব্যয়ে নির্মিত করা হয় ছড়ার উপর সেতু। এখন উল্টো জীব বৈচিত্র্য প্রাণ প্রকৃতির আরো সংকটে পড়েছে। বনবিভাগ, সহব্যবস্থাপনা কমিটি এনজিওর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারনে এখন সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বনে পাখি ও পশুখাদ্য বৃক্ষ রাজি কমতে শুরু করেছে। বনের পাশাপাশি লোকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে সমিতি করে সুফল প্রকল্পের আওতায় ঋণ ও লোকদের বন পাহাড়ায় নিয়োজিত করা হয়েছে। এতসব করার পরও বনের কোন উন্নতি নেই। বরং সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান ও তেলমাছড়া বনে গাছ চুরির অভিযোগ উঠেছে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে। আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) স্বেচ্ছাসেবী বন্যপ্রাণী সংগঠন ‘পাখি প্রেমিক সোসাইটি’র আহ্বায়ক মুজাহিদ মসি হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ মামলা করেন।
বিচারক মুহাম্মদ শাহেদুল আলম দীর্ঘ শুনানি শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে পিবিআই হবিগঞ্জকে তদন্ত করে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
মামলায় অভিযুক্তরা হলেন সাতছড়ি উদ্যানের রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ, জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট নূর মোহাম্মদ, তেলমাছড়া বিট কর্মকর্তা মেহেদী হাসান ও বন রক্ষক সুমন বিশ্বাস।
এজাহারে বলা হয়েছে, গত ২ মার্চ, ২০ মার্চ ও ৯ আগস্ট সাতছড়ি ও তেলমাছড়া বিট থেকে বিপুল পরিমাণ সেগুনসহ মূল্যবান বনজ গাছ কেটে বিক্রি করা হয়। এছাড়া বন্যপ্রাণী পাচার, শিকারিদের সহযোগিতা, বনের ফল বিক্রি করে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট সৃষ্টি এবং বনে প্রবেশের টিকিট থেকে প্রাপ্ত রাজস্ব আত্মসাতের অভিযোগও আনা হয়েছে। এর আগে সাতছড়ি সেগুন বাগান থেকে দু’বার গাছ পাচারের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা গাছের মোতার ছবি তুলতে গেলে বনবিভাগের লেকজন কালবেলার প্রতিনিধি মোজাহিদ মসি ও ত্রিপুরারি দেবনাথ নামে দু’সাংবাদিককে মারধোর করে ও ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ ও নবী হোসেনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা হয়েছে।
পাখি প্রেমি সোসাইটির সভাপতি মোজাহিদ মসি বলেন, সাতছড়ি ও তেলমাছড়া সংরক্ষিত প্রাকৃতিক বন। কিন্তু বনবিভাগ উদাসিনতা, দায়িত্ব অবহেলা ও গাছ পাচারের সাথে জড়িত থাকার কারনে বন আজ ধ্বংসের মুখে। এ সম্পর্কে সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে তারা উল্টো আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে হয়রানি করছে। বন বিভাগ তাদের অপরাধ আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত হলে গাছ চুরির প্রমাণ পাওয়া যাবে।
সাতছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুন অর রশিদ বলেন, তার সময়কালে কোন সেগুন গাছ চুরির ঘটনা ঘটেনি। যে গাছের মোতা রয়েছে। এগুলো তার আমলের নয়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মৌলভীবাজার বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবুল কালাম জানান, কিছু দিন গতহল আমি দায়িত্ব নিয়েছি। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বনবিভাগ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় গুরুত্ব সহকারে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করছে। কোন ধরনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :