মাহবুবুল আলম
আরবিতে ইসলামী উপবাসের নাম সাওম, বহুবচনে সিয়াম, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে সংযম বা রোজা আত্মনিয়ন্ত্রণ বা বিরত থাকা। পবিত্র রমজান মাসে
মুসলিম জাহানে যাদের ওপর রোজা ফরজ সেসকল মুসলিম নর-নারী সুবহে সাদেকের পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত
পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থেকে মহান আল্লাহপাকের দিদার বা সন্তুষ্টি লাভের আশায় একমাসব্যাপী রোজা পালন বা উপবাস করে থাকে।
রমজানের একটি বিশেষ ফজিলত বা মাহাত্ম্য হচ্ছে, এই পবিত্র রমজান মাসে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এর বরকতে রমজান মাসের রোজা মানুষকে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি দেয়, মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধুয়ে মুছে সাফ করে, আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে ঈমানের শাখা প্রশাখা সঞ্জিবীত করে। সর্বোপরি রোজা মানবদেহের বিপাকীয় ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করে তুলে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য ও সন্তুষ্টি লাভ করা যায়।
এটা হলো রোজা রাখার ধর্মীয় দিক, এছাড়াও রোজা বা উপবাসের অনেক উপকারিতা রয়েছে। আধুনিক বিজ্ঞানেও রোজা উপবাস বা অটোফেজি বিশেষ স্থান লাভ করে আছে। এ আলোচনায় রোজা ও অটোফেজির বিভিন্ন দিক তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আলোচনার শুরুতেই রোজার শাব্দিক অর্থ এবং তাৎপর্যের ওপর কিছুটা আলোকপাত করেছি এখন আমি অটোফেজি কী, এবং এর বিভিন্ন দিক নিয়ে কিছুটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করবো।
অটোফেজি এমন এক জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া যে প্রক্রিয়ায় দেহের ক্ষয়িষ্ণু ও অপ্রয়োজনীয় কোষাণুগুলো ধ্বংস ও পরিচ্ছন্ন হয়। আসলে এটা হলো কোষের এক আবর্জনা পরিচ্ছন্নকরণ প্রক্রিয়া! কোষের কার্যক্ষমতাকে ঠিক রাখতে যে প্রক্রিয়ার কোনও বিকল্প নেই। দেহ যখন বিশেষ সংকটাবস্থায় থাকে, তখন এই অটোফেজিই দেহকে বাঁচিয়ে রাখে! আর অটোফেজি হয় রোজা বা উপবাস পালনের মধ্যদিয়েই।
রোজার সাথে মানুষের শত শত বৎসর যাবত পরিচিতি থাকলেও ২০১৬ সালে জাপানি বিজ্ঞানী ইউশিনোরি ওশুমি অটোফেজি নিয়ে গবেষণা করে নোবেল পুরস্কার পাবার পর বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয় ও মানুষের আরো আগ্রহ বাড়ে। এনিয়ে ঔষধ কোম্পানি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণায় লেগে যায়, যাতে এমন একটা ওষুধ তারা আবিষ্কার করতে পারে, যা অটোফেজিকে ত্বরান্বিত করবে। অন্যদিকে ফিটনেস ও ডায়েট বিশেষজ্ঞরা বলতে থাকেন- রোজা রেখে, ভারী ব্যায়াম করে ও শর্করাজাতীয় খাবার কম খেয়ে অটোফেজিকে ত্বরান্বিত করা যায়।
রোজা দেহের জন্যে একটা বিশেষ অবস্থা বলা যেতে পারে, কারণ একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে বাইরে থেকে দেহে কোনও খাবার বা পানীয় পায় না। এমতাবস্থায় অটোফেজি সক্রিয় হয়ে ওঠে, এ কারণেই অটোফেজির সময় দেহ সচল থাকে। অটোফেজি কোষের আবর্জনা, জীবাণু ইত্যাদিকে ভেঙে রিসাইক্লিংয়ের মধ্য দিয়ে অটোফেজি প্রক্রিয়াই দেহের জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করে থাকে। অর্থাৎ বাইরের রসদের ওপর নির্ভর না করে দেহ তখন নিজেই নিজের রসদ দিয়ে নিজেকে চালায়।
সাধারণভাবে উপবাসের ১৮তম ঘণ্টা থেকে অটোফেজি সক্রিয় হয়। কোনো কোনো গবেষণায় অবশ্য ওঠে এসেছে, ১৩ তম ঘণ্টা থেকেও অটোফেজি সক্রিয় হয়েছে। কাজেই একথা বলা যায় যে, উপবাসের ১৩ তম থেকে ১৮ তম ঘণ্টায় গিয়ে আমাদের দেহে অটোফেজি প্রক্রিয়া সক্রিয় হয়। তখন কোষের আবর্জনা ও ক্ষয়ে যাওয়া কোষ রিসাইক্লিং হয় এবং নতুন কোষাণু তৈরি ও শক্তি উৎপন্ন হয়।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরাও এখন বলছেন, রোজা রাখার মাধ্যমে অটোফেজির প্রক্রিয়া রোজার বৈশিষ্ট্যের সাথে আরও বেশি সাজুস্যপূর্ণ। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-শাবান মাসের বেশির ভাগ দিনে রোজা রাখাকে রমজানে প্রবেশ করার আগেই ফ্যাট অ্যাডাপ্টেশন, রমজানের রোজাকে অটোফেজির পূর্ণতা, এরপর রমজান-পরবর্তী শাওয়ালের রোজা এবং সারা বছরে সপ্তাহে দুদিন রোজার বিধানকে স্বাস্থ্য সুরক্ষার মেইন্টেন্যান্স প্রক্রিয়ার জন্য নফল ইবাদত হিসেবে ঘোষণা করেছেন ।
রোজা মহান আল্লাহপাকের বিধান একই সাথে পবিত্র রমজান মাসের ৩০ দিনের রোজায় স্বল্পাহারের ফলে ডায়াবেটিস, হার্ট ডিজিজ, ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, উচ্চ রক্তচাপ এবং ক্যান্সারের মতো রোগ নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর বলে আধুনিক বিজ্ঞানেই প্রমাণিত হয়েছে।
ড. ওশোমির অটোফেজির ব্যাখ্যামতে, অটোফেজি প্রক্রিয়ায় কোষের অপ্রয়োজনীয় অংশ খেয়ে ফেলার পর নতুন করে কোষ উজ্জীবিত হয় এবং শক্তি উৎপাদিত হয়। তিনিই প্রথম বলেছেন, অটোফেজির মেকানিজমের জন্য দায়ী অন্তত ১৫টি জিন। বিস্তারিত তথ্য আবিষ্কারের জন্য জাপানি এই বিজ্ঞানী ও সেল বায়োলজিস্ট ড. ইয়োশিনরি ওশোমি ২০১৬ সালে নোবেল প্রাইজ পান। তিনি বলেন, অটোফেজির জন্য যে জিন দায়ী তাতে মিউটেশন হলে নানা ধরনের অসুখ হয়। তিনি ক্ষুধার সময় কোষ কিভাবে সাড়া দেয় তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর যুগান্তকারী আবিষ্কার আমাদের কোষগুলোর পুষ্টিহীনতা, ইনফেকশন, নির্দিষ্ট কিছু বংশগত রোগ, নিউরোলজিক্যাল ডিজিজ এবং ক্যান্সারে কিভাবে কাজ করে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁর এই আবিষ্কারকে ‘নিজের কোষ নিজেই খাবার’-এর গবেষণা আবিষ্কার। তিনি বলেন-অটো মানে ‘নিজে’ ফেজি মানে ‘খেয়ে ফেলা’। তার মানে নিজের কোষকে নিজেই খেয়ে ফেলা।
তিনি অটোফেজিকে অধিকতর সহজ করে এভাবে বুঝিয়েছেন যে, ঘরে যেমন ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন থাকে, কম্পিউটারে যেমন রিসাইকেল বিন থাকে, তেমনি আমাদের প্রত্যেকটি কোষে ডাস্টবিনসদৃশ মেমব্রেন বাউন্ড একটি গোলাকার ঝুরি বা অঙ্গাণু থাকে, যাকে বলা হয় লাইসোজোম। ঘরের ময়লা-আবর্জনা দিয়ে ডাস্টবিন ভরে গেলে আমরা বাইরে ফেলে দিই; না ফেলে দিলে ঘরে দুর্গন্ধ ছড়ায়। তেমনি শরীরের কোষের ভেতর নানা ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় যা কিছু আবর্জনা জমা হয়, তা এই লাইসোজোম থেকে নির্গত হাইড্রোলাইটিক এনজাইম কাজে লাগিয়ে খেয়ে ফেলে, যেন জমা আবর্জনা কোষের ভেতরকার ক্রিয়া-বিক্রিয়ায় প্রভাব ফেলতে না পারে। মানুষ যত বেশি খাবে তত আবর্জনা তৈরি হবে। সারা বছর মানুষের এই কোষগুলো আবর্জনা পরিষ্কার করতেই থাকে। কিন্তু খাবারের কারণে বেশি আবর্জনা জমা হয়ে গেলে তা পরিষ্কার করার মতো ক্ষমতা লাইসোজোমের থাকে না। শরীর কোষের এই অঙ্গাণু অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায় এবং অতিরিক্ত বর্জ্য জমা হওয়ার কারণে ক্যান্সার বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।”
সে হিসেবে রমজানে নিয়মিত একটি দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে শরীরের কোষগুলো সক্রিয়তা কম দেখায় এবং এসব আবর্জনা কম তৈরি হয়; বরং জমা আবর্জনা খেয়ে ফেলে শক্তি উৎপাদন করে। এই সময়ে শরীরের কোষগুলোর অন্যান্য ক্রিয়া-বিক্রিয়া কমে গেলেও কোষের আবর্জনা পরিষ্কারে লাইসোজোমেরও নিজের আবর্জনা নিজেই খেয়ে ফেলার শক্তি বেড়ে যায়।
রোজার ৩০ দিন একটা নির্দিষ্ট সময়ে কোষের বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ চলে। প্রতিদিন একই সময়ে কোষগুলো অটোফেজির মাধ্যমে বর্জ্য পরিষ্কারের কাজ করার কারণে অনেকটা ট্রেনিংপ্রাপ্ত সৈনিকের মতো খুব সুচারুরূপে বর্জ্য পরিষ্কারের কাজটি করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। রেগুলার না হয়ে হঠাৎ যদি এই না খাওয়া হয়, তাহলে অটোফেজি প্রক্রিয়া শুরু হয় আরো পরে। রোজায় তো না খেয়ে থাকা হয় ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা। এ জন্য রোজা রাখার প্রথম দিকে অটোফেজি প্রক্রিয়া তেমন একটা হয় না। রেগুলার না খেয়ে থাকার কারণে আস্তে আস্তে একটা নির্দিষ্ট সময়ে আগে ভাগেই অটোফেজি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
তবে কেউ যদি মনে করে যে সে একটু বেশি না খেয়ে থেকে বেশি অটোফেজি সক্রিয় রাখবে, তাহলে হিতে বিপরীত হবে। কারণ দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকলে কোষ আবার বর্জ্যগুলো খাওয়ার পর না পেয়ে কোষের ভালো অংশও খেতে শুরু করে। অর্থাৎ অটোফেজি আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না। সুতরাং মাত্রাতিরিক্ত বেশি না খেয়ে থাকলে অটোফেজি প্রক্রিয়ার যে সুফল পাওয়ার কথা, তা না পেয়ে বরং উল্টোটাই পাবে। এ জন্য প্রতিদিন ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা না খেয়ে ৩০ দিনের রোজা রাখার যে নিয়ম আল্লাহ বেঁধে দিয়েছেন তা ই সবচেয়ে বৈজ্ঞানিক উপায় কোষের ডাস্টবিন পরিষ্কার করার।
জাপানি সেল বায়োলজিস্ট নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী ড. ওশোমি ঠিক এ কথাটাই সুপারিশ করেছেন। তিনি বলেছেন, দিনের পুরো অংশ নয়, বরং একটা অংশ (১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা) না খেয়ে থাকলে তা শরীরের জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে আনে। তিনি আরো বলেছেন, মুসলমানদের ৩০ দিন একনাগাড়ে দিনের একটা অংশে রোজা রেখে অন্য একটা অংশে ভেঙে ফেলা খুবই বৈজ্ঞানিক ও কার্যকর।
এপর্যায়ে আমি রোজা ও অটোফেজির উপকারিতা
নিয়ে আলোচনা করবো এর মাধ্যমে পাঠকরাই রোজা এবং অটোফেজির উপকারিতার সাজুস্য খুঁজে পাবেন।
রোজার উপকারিতা :
( এক ). রোজা ওজন কমতে সাহায্য করে: শরীরে যাদের বাড়তি ওজন, তারা এই সময়ে বিশেষভাবে উপকৃত হয়ে থাকেন।
( দুই ). ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে রোজা: রমজানে রোজা রাখার অন্যতম সুবিধা হলো এটি আপনার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে। রোজা গ্লুকোজকে ভেঙে দেয়, যাতে শরীর শক্তি পেতে পারে যা ইনসুলিনের উৎপাদন হ্রাস করে।
( তিন ). উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রোজা:
রোজা এথেরোস্ক্লেরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করতে সাহায্য করতে পারে। দেহ খাদ্য এবং পানি থেকে বঞ্চিত হওয়ার পরেও শরীরে সঞ্চিত ফ্যাট শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। রোজার সময় বিপাকের হারও হ্রাস পায়।
( চার ). পেশীশক্তি সংরক্ষণ করে: আপনার পেশীগুলিতে সঞ্চিত ফ্যাট ব্যবহৃত হবে। আপনি যখনই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করেন, তখন গ্লাইকোজেন (ফ্যাট সেল) যুক্ত হয়, যা ওজন বাড়িয়ে তোলে। তবে রমজানের রোজার সময় ফ্যাট কোষগুলি শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
( পাঁচ). রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে: রোজার সময় মানুষ সাধারণত সেহরি ও ইফতারে মাঝে স্বাস্থ্যকর খাবার খায়। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, টক্সিন নির্মূল করতে এবং চর্বি হ্রাস করতে সহায়তা করে। রোজা ভাঙার জন্য যখন খেজুর এবং ফল খাওয়া হয় তখন এগুলি শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজগুলির সঞ্চয় বাড়ায়।
( ছয়). প্রদাহ দূর করে: রমজানে রোজা রাখার আরেকটি শারীরিক সুবিধা হলো এটি প্রদাহজনিত রোগ এবং অ্যালার্জির সারাতে সহায়তা করে। প্রদাহজনিত রোগের কয়েকটি উদাহরণ হলো- আর্থারাইটিস এবং ত্বকের রোগ যেমন সোরিয়াসিস। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, রোজার ফলে আলসারেটিভ কোলাইটিসের মতো প্রদাহজনক পেটের রোগ নিরাময়ের উন্নতি হতে পারে।
( সাত). মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে: অনেক গবেষণায় দেখা গেছে যে, রোজা কিছু নির্দিষ্ট প্রোটিনের উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে পারে, যা মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের জন্য উপকারী। এই প্রোটিনগুলো মস্তিষ্কের স্টেমসেলগুলো সক্রিয় করতে সহায়তা করে, যাতে তারা ভালোভাবে কাজ করতে পারে।
(আট). আত্মনিয়ন্ত্রনের মানসিকতা তৈরি করে: নিজেকে নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দেয় পবিত্র মাহে রমজান। রমজানের সময় রোজার এটি অন্যতম বিশেষ একটি শিক্ষা- আপনার শরীরের চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষা থাকা সত্বেও খাদ্য, পানীয় এবং কামনা বাসনা ইত্যাদি পূরণ না করে কীভাবে মনের এসব চাহিদাকে নিয়ন্ত্রণ করবেন তা শেখার জন্য প্রস্তুত করে। এই প্রক্রিয়াতে, মস্তিষ্ক সেই অবস্থার সাথে মানিয়ে নেয় এবং কীভাবে আরও ধৈর্যশীল হতে হয় তা রমজান আমাদের শেখায়।
অটোফেজির উপকারিতা :-
( এক). প্রদাহ কমানো: বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী থাকে প্রদাহ। আর অটোফেজি এই প্রদাহ কমিয়ে দেয়।
(দুই). রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো: এক গবেষণায় ডা. লোঙ্গো দেখান যে, কোনো ব্যক্তি টানা চারদিন উপবাস করলে (পানি ছাড়া কিছু না খাওয়া), তাহলে তার রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা পুরো নতুনভাবে বিন্যস্ত হয়।
( তিন). বার্ধক্য প্রতিরোধ: অটোফেজির কারণে ত্বক বার্ধক্যের প্রভাবমুক্ত হয় এবং ত্বককে প্রাণবন্ত দেখায়। এটি ত্বকে বলি রেখা পড়তে দেয় না।
( চার). জীবাণু ধ্বংস: দেহের জন্য ক্ষতিকর প্যাথোজেন, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি জীবাণুকে ধ্বংস করে অটোফেজি। ফলে দেহ থাকে সুস্থ। তাছাড়াও ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে অটোফেজি। আর এই উপকারি প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে রোজা।
( পাঁচ) . মস্তিষ্ক শাণিত : সক্রিয় অটোফেজি ব্যবস্থা আপনার মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার হতেও সাহায্য করে। এমনকি জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির কিছু গবেষণা থেকে দেখা যায়- আলঝেইমার বা পার্কিনসন্স জাতীয় বয়সজনিত রোগগুলো যে কারণে হয়, তার প্রতিরোধও করে অটোফেজি।
( ছয়) . দীর্ঘ জীবন : আর এসব কিছুর মিলিত ফল হলো আপনার দীর্ঘজীবন। মানে, আপনার যদি প্রদাহ কমে যায়, ক্যান্সার, হৃদরোগ না হয়, তাহলে আপনার সুস্থ দীর্ঘজীবন হবে সেটাই তো স্বাভাবিক।
পরিশেষে শেষ করবো এই বলেই যে, পবিত্র রমজান মাস হলো মুসলমান প্রত্যেক নর-নারীর জন্য বরকত ও নেয়ামতের মাস, রোজা বা সিয়াম সাধনা হলো রমজানের প্রাণ। কোরআন, হাদিস এমনকি বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণেও রোজার উপকারিতা প্রমাণিত। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর রোজা রাখাই তোমাদের জন্য অধিক কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝে থাকো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৪)।
তাই কেবল ধর্মীয় দিক দিয়েই রোজার মাস মহিমান্বত নয়, স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও মানব দেহের জন্য রোজা যে কত উপকারী তা অটোফেজি বিষয়ে ব্যাখার মাধ্যমে রমজানের গুরুত্ব ও তাৎপর্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। অটোফেজি নিয়ে জাপানি বিজ্ঞানী ও সেল বায়োলজিস্ট ড. ইয়োশিনরি ওশোমি ২০১৬ সালে অটোফেজির জন্য নোবেল প্রাইজ পেলেও এর প্রায় দেড় হাজার বছর আগে আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ (সাঃ) রোজার গুরুত্ব বিবেচনায় তাঁর প্রিয় উম্মতদেরকে রোজা উপহার দিয়েছিলেন তাই একথা বলতেই হয় মুসলমান হিসেবে আমরা সত্যি বড়ই সৌভাগ্যবান। মহান আল্লাহপাক আমাদেরকে আসন্ন পবিত্র রমজান মাসে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য লাভের সুযোগ করে দিন! আমিন।
তথ্যসূত্রসমূহ:
১। বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওহশোমি ও অটোফেজি
২। ডা. মো. তৌহিদ হোসাইন, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ডিপার্টমেন্ট অব হিস্টোপ্যাথলজি, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি, শেরেবাংলানগর, ঢাকা এর আর্টিকেল
“রোজায় উপবাস, অটোফেজি ও মানবদেহে প্রভাব”।
৩। বিভিন্ন পত্রিকা, নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত অটোফেজি বিষয়ক প্রবন্ধ নিবন্ধ!
৪। চিকিৎসা বিষয়ক জার্নালে অটোফেজি সংক্রান্ত৷ আর্টিকেল
৫। উইকিপিডিয়া ও ইন্টারনেট।
লেখক: কবি-কথাসাহিত, কলামিস্ট ও গবেষক।
মন্তব্য করুন