সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। সাংবাদিক মানুষের আস্থা, বিশ্বাস আর বিচার নিশ্চিতের মাধ্যম। বিচারহীন সভ্যতায় সাংবাদিকতাই ন্যায় বিচার নিশ্চিতের হাতিয়ার। বর্তমানে সাংবাদিকতাকে অনেকেই ধান্ধা হিসেবে বেঁচে নিয়েছেন। সাংবাদিক হলেন ন্যায় বিচার নিশ্চিতের নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সাংবাদিক দেখলে মানুষ সম্মানের সাথে মূল্যায়ন করতো। সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির দর্পন বা আয়না। অর্থাৎ সাংবাদিকদের মাধ্যমেই ফুঁটে উঠে সমাজ, দেশ, জাতির বাস্তব অবস্থা।
বিভিন্ন কারনে সাংবাদিকতা এখন সম্মানের জৌলুস হারাচ্ছে। দেশে সাংবাদিকতার তেমন কোন নীতিমালা না থাকায় যে কেউ সহজেই নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। এদের কর্মকান্ড অপসাংবাদিকতা বা হলুদ সাংবাদিকতাকেও হার মানাচ্ছে। না আছে লিখার যোগ্যতা, নাই লেখাপড়া, এক লাইন লিখলে অর্ধেক বানান ভুল. তারাও এখন দাপটের সহিত সাংবাদিক। যে কারনে প্রকৃত সাংবাদিকদের কেউ কেউ সাংবাদিকতা থেকে নিজেকে গুছিয়ে নিচ্ছেন। দেশপ্রেমের ব্রত নিয়ে অন্যায়, অবিচার, অনাচার, চলমান ঘটনা, সমস্যা, সম্ভাবনার খবরে না ছুটে বর্তমানে নামধারী কথিত সাংবাদিকের অনেকেই ছুটছেন ধান্ধায়।
মফস্বল সাংবাদিকদের অবস্থা তো আরো করুন। প্রতিষ্ঠান থেকে অধিকাংশই পান না কোন সম্মানী বা বেতন। এর মাঝে দেখা যায় চাল খেতে খেতে যাদের দিন যায়, তারা সাংবাদিকতাকে পুঁজি করে এখন চিকন চালের ভাত খান। কেউ কেউ তো বাড়া বাসায় পর্যন্ত থাকছেন। অথচ দেখা যায় এদের আয়ের কোন নির্দিষ্ট উৎস নাই। কেউ কেউ তো নিজের ব্যক্তিত্বকে বিসর্জন দিয়ে হয়েছেন প্যাকেট সাংবাদিক। রাজনৈতিক চেতনার লালন না করে নেতাদের প্যাকেট বন্ধী সাংবাদিক হিসেবে পরিগনিত হচ্ছেন। এদের কারনে ক্ষুন্ন হচ্ছে সাংবাদিকতার মান, সম্মান, ইজ্জ্বত। সাংবাদিকতার মতো মহান শব্দের সম্মান রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রযন্ত্রের পাশাপাশি সবার। যে কোন মূল্যে একটি নীতিমালা প্রয়োজন। সাংবাদিক যেহেতু লিখালিখা করবেন, সেজন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার মানদন্ড নির্ধারণ এখন সময়ের দাবী। যিনি সাংবাদিক তাকে ভাল আর মন্দের বিচার করার ক্ষমতা রাখতে হবে। সাংবাদিকতা মানে ধান্ধা নয়, সাংবাদিকতা মানে সত্যকে তুলে ধরা। রুটি রুজির সাংবাদিকতা আর ধান্ধার সাংবাদিকতা এক নয়। সাংবাদিকতার নাম করে যারা ধান্ধাবাজি, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন তাদের রুখতে হবে সবাই মিলে। মনে রাখা দরকার ধান্ধাবাজের কোন ধর্ম নাই, স্রেফ ধান্ধাবাজ। ধান্ধাবাজদের দাপুটে তৎপরতায় ‘সাংবাদিকতা’ হেরে যেতে পারে না।
শাহিন মিয়া, সাংবাদিক
মন্তব্য করুন