মোনায়েম খান, ইংল্যান্ড প্রবাসী লেখকঃ অবশেষে আমার মৃত্যু হলো । একটি বর্নাট্য জীবনের অবসান হলো । না , বিভ্রান্তিতে ভুগবেন না । আমি কোন মহান ব্যক্তি নই । তারপরও নিজের জীবনকে বর্নাট্য বললাম এই জন্য যে , আমার উথ্থান ছিল বর্নিল । ঢাকার এক অন্ধগলির দালালি দিয়ে যাত্রা শুরু করি । তারপর চুরি চিনতাই গাজা মদসহ সকল অবৈধ পথে বিচরন । উদ্দেশ্য একটিই, টাকা রুজি । সে টাকা কালো না সাদা তা দেখার কোন অভিপ্রায় বা ইচ্ছা আমার ছিল না । তোয়াক্ষাও করিনি কখনও ।সামনে যা পেয়েছি সব লুঠে নিয়েছি । এতে কোন লাজ লজ্জার বালাই ছিল না ।
আরো পড়ুনঃ দেশের প্রথম ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ হচ্ছে সিলেটে
একসময় রাজনীতিতে পদার্পণ করি । আমি যোগ দিয়েছি , এমন কথা বললে ভুল হবে । কারন , রাজনীতির জন্য নুন্যতম অক্ষরজ্ঞানের প্রয়োজন হয় । কিন্তু দুর্ভাগ্য , তাও আমার ছিল না ।তবে নিষিদ্ধ দুনিয়ায় আমার আধিপত্য ছিল চোখে পড়ার মত । আর সেই গুনটির জন্যই সমকালীন উঠতি রাজনীতিকদের নজর কাঁড়তে সক্ষম হই । তাঁরা নিজেদের প্রয়োজনেই আমাকে দলে টেনে নেয় । রাজনীতির ময়দানে সুষ্ট রাজনীতি চর্চার চেয়ে পেশীশক্তির নির্ভরতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে আমার মত সড়কছাপদের গুরুত্ব বেড়ে যায় । কালবিলম্ব না করে আমিও সময়ের সাথে সুযোগের সদব্যবহার করে নেই । তারপর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি । অগনিত লাশের উপর পা রেখেই রাজনীতির পিচ্ছিল জমিনে নিজের সুদৃঢ় একটি জায়গা করে নিয়েছিলাম যা অনেকের কাছে সিনেমার গল্পের মত ঠেকায় ।
অত:পর , এম.পি হলাম , মন্ত্রী হলাম , আরও কত কি । দলের নীতি নির্ধারকও হয়েছি । শিক্ষিত সচিবকে ডেকে এনে দাঁড় করিয়ে রেখেছি ।কতই না ক্ষমতার দম্ভ । জ্ঞাতসারে জনকল্যান কিছু করেছি বলে আমার মনে হয় না । অতি সাধারণ ভদ্রতাও আমার মাঝে খুঁজে পাওয়া মুশকিল । কিন্তু আমি বিস্মিত হ্তাম তখন , যখননি মন্ত্রী হিসেবে কোন সম্বর্ধনা সভায় হাজিরা দিতাম । কারন, বক্তারা যখন বিনয়ের সাথে আমার সম্পর্কে বলতো , আমি তখন নিজেকেই চিনতে পারতাম না । যে লোকের উথ্থানের নেপথ্যে হাত রক্তস্নাত , নিগৃহীত ষোড়শির ঘামে সিক্ত , নির্ঘাত , সে লোক সমাজে ধিকৃত হওয়ার কথা। অথচ বক্তাদের অতিরঞ্জিত স্তুতিবাক্য আমাকে মহামানবদের সারিতে পৌঁছে দিত । কি বিস্ময় !
নগরের ক’টি অভিজাত ক্লাব আর মদের দোকান আমার আর্থিক স্বচ্ছন্দের একটি অন্যতম উৎস । সমাজের প্রভাবশালী ও বিত্তবানরা আমার জলসাঘরে অবগাহন করে পুণ্যস্নাত হতো । রাজনীতির চত্রছায়ায় এখানে সকল অপকর্ম সুরক্ষিত । প্রশাসনই পাহারাদার । এমন যাঁর অবস্হান , কারও কি সাধ্য আছে তাঁর প্রতি আঙ্গুলি উঠায় । সমাজের বিবেক বলে আখ্যায়িত বুদ্ধিজীবীদের একাংশকে পয়সার ডোরে বেঁধে নিয়ে আসি আমার মিডিয়া ভুবনে । তাঁদের বর্ননায় আমি খুঁজে পাই নিজের নব্য পরিচিতি । আৎকে উঠি, আমার অনেক অজানা কথা আমি নিজেই জানিনি আগে । ধন্য আমার স্তাবকদের দল ।
অনেক মসজিদ মাদ্রাসায় আমার বদন্যতা রয়েছে । ক’টির আবার সভাপতির আসনও অলংকৃত করেছিলাম । বিভিন্ন ইসলামী মাহফিলে প্রধান অতিথির মর্যাদা শুধু পাইনি বরং তৌহিদী জনতাকে নসিহত করারও সুযোগ হয়েছিল ।যদিও আমি শুদ্ধভাবে কলিমা পড়তে অপারগ ।
আজ আমার শোক সভায় আমার প্রতি স্হাবকদের প্রশংসা শুনে আমি লজ্জিত । প্রায় বুদ্ধিভ্রষ্ট , কারন একটি কথার কোন হিসাব মিলাতে পারছিনা । জীবদ্দশায় হয়তো ওরা আমার ভয়ে আমাকে তোষামোদী করতো , কিন্তু আমার অবর্তমানে কা’কে খুশি করার জন্য এমন ডাঁহা মিথ্যা কথা বলছে । তবে কি ওরা মজ্জাগতভাবেই গোলামীর জিণ্জির গলায় পড়ে রেখেছে । নতুবা একটি লোকও কেন আমার সঠিক চরিত্রের কথা বলেলো না । আমি আজ সত্যই ব্যথিত ।
মন্তব্য করুন