
নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে।
হবিগঞ্জে শতাধিক অবৈধ ইটভাটা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় দুষিত হচ্ছে বায়ু, নষ্ট হচ্ছে কৃষিজমি, হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র। আইনের তোয়াক্কা না করে, নবায়নকৃত লাইসেন্স ও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটাগুলো চালু রেখেছেন মালিকরা। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে চলছে নতুন করে ইটকাটা ও পোড়ানোর কাজ। প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ, তদবিরে ব্যস্ত হবিগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা।
হবিগঞ্জ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, হবিগঞ্জে বর্তমানে ৯০টি ইটভাটা সক্রিয়। অধিকাংশেরই নবায়নকৃত লাইসেন্স বা পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। তারপরও এই ইটভাটাগুলো দিনে-রাতে ধোঁয়া ছড়িয়ে চলছে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে। পরিবেশ, কৃষি, জীববৈচিত্র সবকিছুর উপরই এর প্রভাব মারাত্মক।
পরিবেশবাদীরা বলছেন, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের নিজস্ব আইন থাকলেও তার কোনো প্রয়োগ দেখা যায় না। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল বলেন, কোনো ইটভাটাই সরকারি নিয়ম-নীতি অনুসরণ করছে না। ফলে এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত নির্দেশনা অনুযায়ী, ইটভাটা স্থাপনের জন্য কেবল অকৃষি জমি ব্যবহার করা যাবে।
ইট পোড়ানোর নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৮৯ (ধারা ৯-এর উপধারা ৫) অনুযায়ী, কোনো ইটভাটা উপজেলা সদর, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, আবাসিক এলাকা বা ফলজ বাগান থেকে অন্তত ৩ কিলোমিটার দূরে থাকতে হবে। কিন্তু হবিগঞ্জের বাস্তবতা উল্টো। বাহুবল ও চুনারুঘাট উপজেলার অধিকাংশ ইটভাটা উপজেলা সদর বা জনবসতিপূর্ণ এলাকার মধ্যেই স্থাপিত। বাহুবলের মিরপুর-ধুলিয়াখাল, মিরপুর-বাহুবল, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের মিরপুর-শায়েস্তাগঞ্জ অংশ এবং শায়েস্তাগঞ্জ-চুনারুঘাট, হবিগঞ্জ-শায়েস্তাগঞ্জ সড়কের পাশে সারি সারি ইটভাটা দৃশ্যমান। স্কুল, মসজিদ ও বাজারের পাশেও জ্বলছে চুল্লি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, জেলায় কোনো ইটভাটারই নবায়ন বৈধ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ইটভাটা মালিক স্বীকার করেছেন, সংশ্লিষ্টদের “ম্যানেজ” করেই চলছে এই অবৈধ ব্যবসা। হবিগঞ্জ ইটভাটা মালিক সমিতির কিছু প্রভাবশালী সদস্য প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে সরকারি দিবস ও অনুষ্ঠানে অনুদান দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশ লাইসেন্স, ডিসি লাইসেন্স নাই, তবুও ইট ভাটা বন্ধ হয় না।
বাহুবল ও চুনারুঘাটের বসিনা, বানিয়াগাঁও, দৌলতপুর, মুগকান্দি, শ্রীরামপুর, শ্রীকুটা, গোগাউড়া প্রভৃতি এলাকায় শত শত বিঘা ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে ইট তৈরির জন্য। এর ফলে ফসল উৎপাদন কমে গেছে, জমির উবরতা নষ্ট হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, আম-কাঁঠালসহ মৌসুমি ফলের গাছে আর আগের মতো ফল আসে না। ধুলার আস্তরণে গাছের পাতা বিবর্ণ হয়ে গেছে। হবিগঞ্জের সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক ড. ফরিদুর রহমান বলেন, যেসব ইটভাটা পরিবেশনীতি লঙ্ঘন করছে, তাদের বিরুদ্ধে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর হবিগঞ্জের উপপরিচালক ড. মো. ইউসুফ আলী জানান, “অবৈধ ইটভাটার তালিকা তৈরি করে বিভাগীয় অফিসে পাঠানো হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আদেশ পেলে অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
আপনার মতামত লিখুন :