মাহবুবুল আলম
বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরও একটি রাজনৈতিক দলের জন্ম হলো “গণ অধিকার পরিষদ” নামে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের নাম ঘোষণা করেছেন নুর রেজা সাহেব। ২৬ অক্টোবর ২০২১ নতুন এ দলটি আত্মপ্রকাশ করে। গণ অধিকার পরিষদ নামে এ দলটির ১০১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন রেজা কিবরিয়া এবং সদস্যসচিব নুর।
অনেকেই মনে করছে ড.ইউনুস, ড.কামাল হোসেন, ফেরদৌস আহমেদ কোরেশী, কাজী ফারুক আহমদ এরও আরও আগে খন্দকার মোশতাক, অলি আহাদ, ওবায়দুর রহমান, আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেকেই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলেন। কিন্তু কেউই কখনো সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারেননি । থাক সে-কথা।
বাংলাদেশে বর্তমানে এক ধরণের রাজনৈতিক খরা চলছে। সরকার দল আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় থেকেও শক্তিশালী বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে একতরফা মাঠ দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তবু মাঠপর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা কাউয়া দাপটে কোণঠাসা বলে মাঝে অভিযোগ তোলছে। তাই দেশে কার্যকর এবং ক্রিয়াশীল কোন বিরোধী দলের অভাবেই রাজনীতির এই খরা বিদ্যমান। বিএনপি রাজপথেই দাঁড়াতে পারছেনা। দলটির চেয়ারম্যান অসুস্থ। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দন্ডিত আসামী হয়ে বিদেশে পলাতক। অনেক অনেক নেতা ও ত্যাগী কর্মী অগ্নিসন্ত্রাস ও বিভিন্নরকম নাশকতার মামলায় জর্জরিত। অবমূল্যায়নের শিকার হয়ে বেশিরভাগ প্রবীণ নেতা নিস্ক্রিয় কেউ বা আবার ভেতরে ভেতরে সরকারের মন্ত্রীদের সাথে সুসম্পর্ক রেখে দিব্যি চালিয়ে যাচ্ছেন।
আর বিএনপির প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ এবং নির্ভরশীল মিত্র জামায়াত যুদ্ধাপরাধের দায়ে দন্ডিত শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, দীর্ঘমেয়াদে দন্ডিত হওয়ার কারণে অনেকটাই কাবু। এর মধ্যেই দলের নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে দলটিতে দ্বন্দ্ব ও চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ প্রশ্নে নতুন প্রজন্মের জামাতিদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে যার সমীকরণ সমাধান খুব সহজ নয়।
বিএনপি ও জামাতের গোপন পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুকল্যে গড়ে ওঠা হেফাজতে ইসলাম হলো পরনির্ভরশীল রাজনীতির ধারক। মাদ্রাসাকেন্দ্রিক এ দলটি মাঝে মাঝে নিভতে থাকা বাতির মতো ধপ করে জ্বলে ওঠে আবার ধপ করে নিভে যায়। পুরোপুরি ছাত্র ও ধর্মনির্ভর এ দলটির স্থায়িত্ব বিএনপি জামায়াতের স্থায়িত্বের ওপরই বেশিরভাগ নির্ভরশীল। মামুনুল হক কান্ডের পর, হেফাজতে ইসলাম কিছুটা চুপসে থাকলেও বিএনপি জামাতের ঘাড়ে ভর করে কুমিল্লায় দুর্গাপূজা মণ্ডপে কোরআন অবমাননার কথিত অভিযোগে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাঁধানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে মুখ বন্ধ করে বসে আছে। আর বাম দল যারা ” সময়ে নিরব, অসময়ে সবর ” তারাতো বড় আশ্চর্যবোধক চিহ্ন হয়ে রাজনীতির মাঠ পর্যবেক্ষণরত। ইস্যু যায় ইস্যু আসে কিন্তু তাদের পর্যবেক্ষণের দূরবীণে কিছুই ধরা পড়ছে না। এমন এক পরিস্থিতিতে রেজা-নুর সাহেবদের “গণ অধিকার পরিষদ” নামে নতুন রাজনৈতিক দলটি রাজনীতিতে কতটা অবদান রাখতে পারবে তা নিয়ে সন্ধিহান দেশের মানুষ।
নিশ্চয়ই সবারই মনে আছে নূরুল হক নূর ডাকসু’র ভিপি নির্বাচিত হয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধান মন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে আবেগে তাঁকে পা ছুঁয়ে সালাম করে ‘মা’ সম্ভোধন করেছিলেন। কিছু কিছুদিন যেতে না যেতেই তার মাতৃভক্তি উবে গেল। আর রেজা সাহেব তো ইতোমধ্যে কয়েক ঘাটের পানি খেয়ে ইমেজ সংকটে রয়েছে। তাদের নিয়ে পর্দার আড়ালে কারা আছে এ মুহূর্তে বলা না গেলেও হয়তো কিছুদিনের মধ্যেই জানা যাবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন নতুন দলের হাঁক ডাক নতুন নয়। তারা বুঝি ৩০০ আসনে নমিনেশনও দেবে। ছাত্রলীগের ঘরপোড়ানো কোন্দল, বিএনপি- জামাতের প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতা, অতি ডান ও অতি বামদের গোপন সমর্থনে ডাকসু’র ভিপি নির্বাচিত হয়ে “আমি কী হনুরে” ভাবসব চলে আসে নূরের মধ্যে। তাই কারো না করো মদদে রাজনীতির খরার সুযোগটা কাজে লাগাতে নুরু ও সাবেক সফল অর্থমন্ত্রীর এসএমএএস কিবরিয়া সাহেবের পুত্র রেজা কিবরিয়ার সাথে রাজনীতির গাঁটছড়া বেঁধেছেন। “জনতার অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার” স্লোগানকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করা গণ অধিকার পরিষদ-এর মূলনীতি ঠিক করা হয়েছে চারটি। এর মধ্যে আছে: গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ। এখন দেখার বিষয়
কতদূর যেতে পারেন তারা। নতুন এ দলের জন্য শুভকামনা থাকলো।
লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক
আপনার মতামত লিখুন :