নূরুজ্জামান ফারুকী, হবিগঞ্জঃ নবীগঞ্জ উপজেলায় হারিয়ে যেতে বসেছে প্যাডেল রিক্সা। যান্ত্রিকতার এই আধুনিক যুগে কর্মজীবী মানুষের জন্য এখন পেশীশক্তির বদলে আবিষ্কার হয়েছে ইলেক্ট্রনিক ও সহজলভ্য যানবাহন।
পেশীশক্তিকে কাজে না লাগিয়ে যতটা আরাম আয়েশে কর্ম করা যায় মানুষ এখন সেই দিকেই ধাবিত হচ্ছে। কম শিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষত কিংবা দিনমজুরের কাজ করা লোকেরাই এখন বেশিরভাগ ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার চালক। এক্ষেত্রে অলস মানুষের পেশা হিসেবে ব্যাটারি চালিত রিক্সাই বেশি পছন্দের বলে ধারণা করছেন অনেকেই।
তাই পায়ে রিক্সার প্যাডেলের পরিবর্তে মানুষ এখন ঝুঁকে পড়েছে যান্ত্রিক এই ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সার প্রতি। এজন্য হারাতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী এই রিক্সা।
তবে বেপরোয়া ব্যাটারি চালিত রিক্সাই দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকে বেশি। এছাড়া অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেরা ব্যাটারি চালিত রিক্সা চালিয়ে বিভিন্ন দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে।
এক সময় নবীগঞ্জের আনাচে কানাচে দেখা যেত রিক্সা। রিক্সার প্যাডেল ঘুরিয়ে সংসার চালাত শত শত মানুষের। কিন্তু বর্তমান সময়ে গোটা উপজেলায় হাতেগোনা কয়েকটি রিক্সা চলে।
যে রিক্সাগুলো শহরের মধ্যে চলে সেগুলোর চালকরাও বেশ বয়স্ক। ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা আসার পর প্যাডেল রিক্সার জায়গা পুরোটাই দখল করে নিয়েছেন তারা।
বছর তিনেক আগেও নবীগঞ্জ পৌর শহরের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় ছিল রিক্সা। বর্তমান সময়ে শহরের উপজেলা রোড, নতুন বাজার,থানা পয়েন্ট চৌমহনী এলাকায় একটা দু’টো রিক্সা দেখা যায়। যে দু’একটি দেখা যায় সেগুলোও হয়ত অল্প দিনের মধ্যেই চোখে পড়বে না।
শহরের রিক্সা চালক কবির হোসেন বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে নবীগঞ্জ শহরে রিক্সা চালাই। এখনো রিক্সা চালিয়ে যাচ্ছি। গত ৭-৮ বছর আগেও প্রতিদিন ৫০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা আয় করতে পারতাম। এখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রিক্সা চালিয়ে একহাজার থেকে একহাজার দুইশত’ টাকা আয় হয়। আবার কোনো কোনো দিন সেটা হয়ও না। মানুষ এখন আর রিক্সায় উঠতে চায় না। আমাদের অটো রিক্সা কেনার টাকা নেই এজন্য বাধ্য হয়ে প্যাডেল রিক্সাই চালাতে হয়।”
বাজার এলাকারএকজন রিক্সা চালক রঙ্গিলা (৪৫)বলেন, “এখন মানুষ অলস হয়েছে। মানুষের সময় কমে গেছে। কেউ রিক্সা চড়ে দূরে কোথাও যেতে চায় না। আমরা দিনরাত যে টাকা আয় করি তা দিয়ে সংসার চলে না। দীর্ঘদিন ধরে রিক্সা চালিয়ে আসছি। এটা ছেড়ে দিয়ে এখন অন্য কোনো পেশায় যাব তারও উপায় নেই।”
এ বিষয়ে একজন সাংবাদিক বলেন, “আমরা যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন নবীগঞ্জ শহরে রিক্সাতেই ঘুরে বেড়াতাম। সেই সময় আমাদের মোটরসাইকেল ছিল না। মানুষের মধ্যে বর্তমানে অলসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অটো চালকরা পায়ের উপর পা তুলে অটো চালায়। এতে দুর্ঘটনাও ঘটে। কিন্তু বর্তমানে শহরে যে পরিমান ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা চলাচল করে তাতে এই শহর থেকে প্যাডেল রিক্সা-ভ্যান বিলুপ্ত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।”
মন্তব্য করুন