মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মারাত্মক শক্তিশালী দুইটি পক্ষ সৃষ্টি হতে চলছে। ডাকসুতে না জিতলে জামায়াতের জোটের পক্ষে তেমন হাইপ সৃষ্টি হতো না। তারা তেমন শক্তিশালী হতো না। কিন্তু ডাকসু নির্বাচন পরবর্তী জামায়াত জোটের পক্ষে হাইপ সৃষ্টি হওয়াতে আওয়ামীলীগ – বিএনপির দেশপ্রেমিক অংশসহ সাধারণ সমর্থক জামায়াত জোটে যোগ দিবে। অন্যদিকে বিএনপি ভাটা পড়া ঠেকাতে না পারলেও অনৈতিক শক্তি বৃদ্ধির লক্ষ্যে তাদের আওয়ামীলীগের খারাপ অংশের মতো হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সৎ বিকল্প থাকলেও অসততার কারণে তারা সৎ বিকল্প বেছে নেবে না। তারমানে বিএনপি ফ্যাসিবাদী হয়ে উঠবেই।
৫ আগস্ট পরবর্তী বিএনপির বিভিন্ন কথাবার্তা ও আচরণে ফ্যাসিবাদের আলামত স্পষ্ট লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা বিএনপির পদধারী অনেকে বিএনপির সমালোচনা করে প্রকাশ্যে বলছে। তার উপর ডাকসু নির্বাচন তাদেরকে শেখ হাসিনার চেয়েও বেশী ফ্যাসিবাদী হওয়ার খোরাক জোগিয়েছে। কেন্দ্রীয় রাজনীতিবিদদের সিংহভাগ অসৎ হওয়ায় সৎ বিকল্প থাকলেও তারা তা গ্রহণ না করে অসৎ বিকল্পের সন্ধানে ছোটে বিধায় বিএনপির সামনে ফ্যাসিবাদী হওয়ার বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেছি।
প্রত্যেক দলে বেশ আর কম স্বার্থপর ও দেশপ্রেমহীন বিশ্বাসঘাতক রয়েছে। আওয়ামীলীগের বিশ্বাসঘাতক অংশসহ সব দলের লোভী ও বিশ্বাসঘাতকরা বিএনপির সাথে একাট্টা হয়ে ভারতের সহযোগিতা নিয়ে জামায়াতের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। ঐদিকে ভারত জামায়াত জোটকে ঠেকাতে দুই পায়ে খাড়া হয়ে আছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারত থেকে ইতোমধ্যেই অস্ত্র আসা শুরু হয়েছে।
ভারত ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার কথা বলেছে। জামায়াতকে চিতা বাঘের সাথে তুলনা করে ভারতের সাবেক কূটনৈতিক হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন যে, জামায়াত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে না। এর দ্বারা তারা (ভারত) বুঝাতে চাচ্ছে যে, জামায়াত মুখে সুসম্পর্কের কথা বললেও ভারত বিশ্বাস করবে না।
দেশে জামায়াত বিরোধীদের ঐক্য বিভিন্ন কারণে বর্তমানে তেমন দৃঢ় নেই। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবির জিততে থাকায় তিন/চার মাসের মধ্যে পারস্পরিক সমঝোতা করে তাদের ঐক্য খুবই দৃঢ় হবে এবং সম্মিলিতভাবে তারা জামায়াত শিবির জোটের মোকাবিলা করবে। ডাকসু নির্বাচনে ৪৫ জন ভিপি প্রার্থী ছিলো। সাদিক কায়েম ১৪০৪২ ভোট পেয়েছিলো। ডাকসুতে তাদের কর্মী-সমর্থক সর্বমোট ৪০০০ হতে পারে। বাকী ভোটগুলো তাদের সামাজিক কাজ, সততা, অন্য প্যানেলের প্রার্থীদের অনৈক্য এসব কারণে পেয়েছে। অন্য ৪৪ ভিপি প্রার্থীদের সবাই শিবির বিরোধী।
১৯৯০ এর ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রশিবির মুকুল–মুজিবর প্যানেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। তাদের প্রাপ্ত ভোট সংখ্যা ছিল এক হাজারের কিছু বেশি। শিবির ভালো করবে এটা শিবির বিরোধীরা জানলেও ১৯৯০ এ প্রাপ্ত (এক হাজার ভোট) এর ১৪ গুণ বেশী ভোট পেয়ে ভূমিধস বিজয়ী হবে সেটা তাদের জানা ছিল না, যদি জানতো তারা সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রচারণা চালালে সাদিক কায়েমের ভোট অনেক কমে যেতো। সাদিক কায়েমের ভোট না কমলেও এই নির্বাচনে ৪ জন ভিপি প্রার্থীর (আবিদ ৫৭০৮, উমামা ৩৩৮৯,শামীম ৩৮৮৩, কাদের ১১০৩) ভোট মোট ১৪০৮৩ যা শিবিরের নির্বাচিত ভিপি সাদিক কায়েম থেকে বেশী। তারমানে ডাকসু নির্বাচনের আগে বুঝতে পারলে এবং পারস্পরিক সমঝোতা করার পর্যাপ্ত সময় পেলে শিবির যতোই ভালো হোক না কেনো শিবিরের সাদিক কায়েমসহ কেউ নির্বাচিত হতে পারতো না।
বিএনপি এতোদিন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে নিশ্চিত বিজয়ী হবে মনে করে সংসদে জামায়াত যাতে প্রধান বিরোধী দলও হতে না পারে তারজন্য জামায়াতকে তিন নম্বর দলে পরিণত করার চেষ্টা করে আসছিলো। আওয়ামীলীগ নিষিদ্ধ হওয়ায় জাতীয় পার্টি বিএনপির পর ২য় দল হোক সেটা বিএনপি চাচ্ছিল কিন্তু এখন বিএনপির ভয় ঢুকে গেছে যে তৃতীয় দলে পরিণত করা তো দুরের কথা উল্টো জামায়াত জোট সরকারে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি করে ফেলেছে। এখন জামায়াত জোটকে ঠেকাতে বিএনপি অন্যান্য দলকে আরো বেশী ছাড় দিয়ে পক্ষে এনে ভারতের সহযোগিতা নিয়ে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবে।
নানাবিধ কারণে হিন্দুদের ভোট বিএনপি পাবে। ডাকসু’র (অমুসলিম হল) জগন্নাথ হলে ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী একচেটিয়া সর্বোচ্চ ভোট ১২৭৬ পায়, অন্যদিকে শিবিরের সাদিক কায়েম মাত্র ১০ মোট। তারমানে অমুসলিম সম্প্রদায়ের স্বল্প সংখ্যক ব্যক্তি ব্যতীত প্রায় সবাই জামায়াত জোটকে ঠেকাতে অবশ্যই বিএনপিকে ভোট দিবে।
ভারত থেকে কোনো হিন্দুকে পুশ ব্যাক করা হয় না অন্যদিকে বাংলাদেশের নাগরিক না হলেও মুসলিমদের বাংলাদেশে পুশ ইন করা হয়। তারমানে ভারত বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের আস্থা ও ভরসার জায়গা। ভারতের ইচ্ছার বাইরে তারা না যাওয়ার সম্ভাবনা বেশী তবে তাদের আতংকের জায়গাগুলোতে সত্যিকারভাবে নজর দিতে পারলে তাদের (হিন্দু সম্প্রদায়ের) অবস্থান অবশ্যই পরিবর্তন হবে।
সুন্নী নিবন্ধিত দুইটি রাজনৈতিক দল ইসলামি ফ্রন্ট ও ইসলামিক ফ্রন্ট আগে পরস্পর বৈরী থাকলেও এখন তারা এক প্লাটফর্মে এসে গেছে। ৫ আগস্ট পরবর্তী কোণঠাসা থাকা অনেক মত ও দলের ব্যক্তিরা জামায়াত জোট বিরোধী একটা বৃহৎ ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে ৫ আগস্ট এর পর থেকে চেষ্টা চালিয়ে আসছে। ডাকসু নির্বাচন পরবর্তী তাদের ঐক্য প্রক্রিয়া আরো বেগবান হয়ে শীঘ্রই চূড়ান্ত ঐক্য হয়ে যাবে। এদিকে প্রশাসনের প্রায় সবাই বিএনপিকে আহলান সাহলান জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে।
জামায়াত জোটের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও শক্তি অন্যদিকে বিএনপি জোটের সম্প্রসারণ, প্রশাসন পক্ষে থাকা ও বিদেশি বেকিং! তারমানে বিএনপি জোট বনাম জামায়াত জোটের মধ্যে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনের সময় ও নির্বাচন পরবর্তী প্রায় সমানে সমানে লড়াই হবে। কেউ কাউকে হারাতে না পারলেও দেশ তো নিশ্চিত হেরে যাবে। চীনের বিনিয়োগ ৩০০ শতাংশ বাড়ায়, চীনে বিএনপিসহ অন্যান্য দল গেলেও তাতে ভারত কিংবা আমেরিকা তেমন বিচলিত না হলেও জামায়াতের যাওয়াতে বিচলিত হওয়া, ভূরাজনৈতিক কারণে চীনের বিরোধিতায় আমেরিকা ও ভারত একই লাইনে থাকায় বিএনপি জোট ও জামায়াত জোট মারাত্মকভাবে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়ে যাবে। যা দেশের ধ্বংস ডেকে আনবে। উত্তরণে ভারসাম্যপূর্ণ সর্বজনীন ফর্মূলা নিয়ে উভয় জোটের মধ্যবর্তী একটি দল কিংবা জোটকে জনপ্রিয় করে জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় পাঠানোর কোনো বিকল্প নেই।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
দেশীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
আপনার মতামত লিখুন :