আব্দুল কুদ্দুস, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) থেকে: সরকারের অগ্রাধিকার উদ্যোগ বাস্তবায়নের অন্যতম খাত বিদ্যুতের উত্তরণ এখন অনেকটা দৃশ্যত। তারপরেও পল্লীবিদ্যুতের নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার গ্যাড়াকলে গ্রাহক ভোগান্তি যেন নিত্য সঙ্গী হয়ে আছে। মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির আওতায় কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের (বর্তমানে কুলাউড়া সাব জোনাল অফিস) গ্রাহকদের ভুতুড়ে বিল, মিটার রিডিং-এ চরম স্বেচ্চাচারিতা, বিদ্যুৎ বিল পরিশোধে পর্যাপ্ত সময় না দেওয়াসহ নানা অনিয়ম এ প্রতিষ্ঠানে যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখনই এই অনিয়মের লাগাম টানা
না গেলে গ্রাহকদের দুর্ভোগ বেড়েই যাবে। বিশেষ করে এই অনিয়মের ফলে গ্রামাঞ্চলের মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বেশী। এতে পল্লীবিদ্যুতের প্রতি মানুষের ক্ষোভ ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
জানা গেছে, মৌলভীবাজার পল্লীবিদ্যুতের আওতায় কুলাউড়া সাব জোনাল অফিসের অধীনে রয়েছে কুলাউড়া (সাব অফিস), বরমচাল, রবিরবাজার, নছিরগঞ্জ ও টিলাগাঁও অভিযোগ কেন্দ্র। কুলাউড়া সাব জোনাল অফিসের আওতায় অন্তত ৫০ হাজার পল্লীবিদ্যুৎ গ্রাহক রয়েছেন গ্রাহকদের অভিযোগ, মনগড়া বিলের খড়গ চাপিয়ে নানান ভোগান্তিসহ গ্রাহকের পকেট কেটে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি। গ্রাহকরা জানান, পল্লী বিদ্যুতের মিটার রিডাররা মাঝে-মধ্যে আসেন রিডিং নিতে। তাদের মতে, বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাদের মনগড়াভাবে গ্রাহকের বিল তৈরি
করেন। এছাড়া মিটারে রিডিং কম থাকলেও বিলের কাগজে তা বেশি লিখে গ্রাহকদের হাতে বিল ধরিয়ে দেয়া হয়। তাছাড়া চলতি মাসের মিটার রিডিংয়ে চলতি মাসেই বিল প্রস্তুত করা হয়। অধিকাংশ বিল পরিশোধের শেষ তারিখও দেওয়া হয় ওই মাসে। সেক্ষেত্রে দেখা যায়, গ্রাহকদের হাতে বিল পৌছে পরিশোধের তারিখের মাত্র একদিন বা দুইদিন আগে। এতে অনেক গ্রাহকরা ওই সময়ের ভিতর বিলের টাকা যোগাড় করতে না পারায় বিলম্ব গুণতে হয়। আবার কেউ কেউ তাড়াহুড়ো করে বিল পরিশোধ করতে গিয়েও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক গ্রাহক জানান, পল্লী বিদ্যুতের অনিয়মে আমরা অতিষ্ট। কোথায় গেলে এ অনিয়ম দূর হবে জানিনা। আমাদেরকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার পর এক/দুইদিন সময় থাকে। এর মধ্যে বিল পরিশোধ না করলে বিলম্ব মাশুল দিতে হয়। গ্রাহকরা আরো জানান, পল্লীবিদ্যুতের মিটার উপরে থাকায় নিচ থেকে মিটারের রিডিং ঠিকমতো দেখা যায়না। রিডাররা এক পলকে রিডিং দেখে মনগড়া বিদ্যুতের ইউনিট বসিয়ে দেয়। অন্যদিকে পল্লীবিদ্যুতের একটি সূত্র জানিয়েছে, রিডাররা ঠিকমতো করেই মিটারের রিডিং নেয়। কিন্তু যারা (বিলার) অফিসে বসে বিল করে তারা তাদের মনগড়া অর্থাৎ মিটারের নির্দিষ্ট ইউনিটের (রিডিং) চেয়ে অনেকটা বেশি পরিমাণ লিখে দেয়। আর এতে করে অতিরিক্ত বিলের দায়ভার গ্রাহকের উপর পড়ে যায়। তাছাড়া বিল হাতে পৌঁছার পর নির্দিষ্ট সময় অর্থাৎ পরিশোধের শেষ সময় পর্যন্ত মাত্র এক/দুইদিন সময় থাকে যা গ্রাহকদের জন্য পর্যাপ্ত সময় নয়।
গ্রাহকদের অভিযোগ, গত কয়েক মাস এভাবেই অতিরিক্ত বিলের বোঝা তাদের ঘাড়ে চেপেছে। উর্দ্ধতন কর্মকর্তার কাছে মৌখিক অভিযোগ করলেও পরবর্তী মাসে বিল সমন্বয় করে দেওয়ার পাল্টা জবাব গ্রাহকদের শুনতে হয়। কিন্তু পরবর্তী মাসেও ঠিক একই অবস্থা থাকে।
গ্রাহকদের এমন অভিযোগ মানতে রাজী নন কমলগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মীর ফারুক। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, এ ধরনের কোন অভিযোগ তিনি পাননি। তবে সেপ্টেম্বর মাসের বিলে সমস্যা হওয়ায় তিনি বিষয়টি কুলাউড়া সাব জোনাল অফিসের উপর চাপিয়ে দেন।
জানতে চাইলে পল্লীবিদ্যুতের কুলাউড়া সাব জোনাল অফিসের এজিএম মেহেদী মাসুদ মুঠোফোনে জানান, মাত্র একমাস হচ্ছে সাব জোনাল অফিসে কার্যক্রম চলার। প্রথমত একটু সমস্যা হতে পারে। দু’একটি বইয়ে এরকম সমস্যা ছিল, পরে তা
সংশোধন করা হয়েছে। তবে কোন গ্রাহক নির্দিষ্ট করে অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে আমরা তা দেখব। গ্রাহকদের হাতে বিদ্যুৎ বিল বিলম্বে পেঁছার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন- কমলগঞ্জ জোনাল অফিস থেকে বিল আসে তো; এজন্য একটু দেরী হয়ে যায়।
মন্তব্য করুন