
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের পাত্রখোলা চা বাগানের ইছামতি শ্রমিক পাড়ায় প্রথম বারের মত
স্বাধীনতা সংগ্রামী ও আদিবাসী নেতা ধরতি আবা বীরসা মুন্ডার ১৫০ তম জন্মজয়ন্তী গৌরবময় দিবস হিসাবে উদযাপন করেছে নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী মুন্ডা সম্প্রদায়ের লোকজন। গত মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) মুন্ডা সমাজকল্যাণ পরিষদ ও মাধবপুর ললিতকলা একাডেমির যৌথ আয়োজনে ঊষালগ্নে পার্শ্ববর্তী ধলাই নদী থেকে জল নিয়ে এসে বীরসা মুন্ডার মূর্তিকে স্নান করিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনটি পালন করে মুন্ডা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। এদিন রাত সাড়ে আট টায় ধরতি আবা বীরসা মুন্ডার ১৫০ তম জন্ম জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় মুন্ডা সমাজকল্যাণ পরিষদের আহ্বায়ক তিরথ মুন্ডার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন মাধবপুর ললিতকলা একাডেমির উপ-পরিচালক প্রভাস চন্দ্র সিংহ।
চা জনগোষ্ঠী উন্নয়ন ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক লিটন গঞ্জুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আসহাবুজ্জামান শাওন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম মৌলভীবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জনক দেববর্মা, বাংলাদেশ চা ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পংকজ কন্দ, সিলেট বিভাগ মুন্ডা সমাজকল্যাণ পরিষদের সম্পাদক লক্ষণ মুন্ডাসহ পাত্রখোলা চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি শ্যামল ভৌমিক প্রমুখ।
বক্তারা বলেন বীরসা মুন্ডা ভারতের অধিকার ও স্বাধীনতার প্রতীক। বীরসা মুন্ডার জন্মদিন আমাদের স্মরণ করার একটি গৌরবময় দিন। তিনি কীভাবে মুন্ডা ও আদিবাসীদের অধিকারের জন্য লড়াই করেছিলেন। বীরসা মুন্ডা একজন মহান নেতা, যিনি ভারতের আদিবাসীদের স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বীরদর্পে লড়াই করেছেন।
বক্তারা আরো বলেন, বীরসা মুন্ডা ছিলেন আদিবাসী আন্দোলনের একজন বীর নেতা, তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন তিনি। ১৫ বছর বয়সেই মুন্ডা ও আদিবাসীদের সংগঠিত করে প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলেন আদিবাসীদের উপর ইংরেজ শাসকদের দীর্ঘদিনের নানাবিধ অত্যাচারের বিরুদ্ধে। তিনি মুন্ডা সমাজের ধর্ম ও সংস্কৃতির পুনরুজ্জীবনের চেষ্টা করায় ‘ধরতি আবা’ (পৃথিবীর পিতা) নামে তাদের কাছে পরিচিতি লাভ করেন।
ব্রিটিশ ও জমিদারদের শোষণ, অতিরিক্ত কর চাপানো এবং উপজাতীয় জমি দখলের বিরুদ্ধে মুন্ডা ও আদিবাসী সম্প্রদায়কে সংগঠিত করা ১৮৭৫ সালের ১৫ নভেম্বর জন্মগ্রহন করা এই মহানায়ক বীরসা মুন্ডা ১৯০০ সালের ৯ জুন মাত্র ২৫ বছর বয়সে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়ার কিছু পর তাকে বন্দী অবস্থায় খাবারের সাথে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করে ব্রিটিশরা। কিন্তু তাঁর বীরত্বগাঁথা সংগ্রাম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে তিনি আজও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের এক অনুপ্রেরণামূলক ব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত হয়ে আছেন।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন এলাকা থেকে আদিবাসী নেতা ধরতি আবা বীরসা সংন্ডার জন্ম জয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দেন মুন্ডা ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন। সবশেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মুন্ডাদের নিজস্ব ভাষায় গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়।
আপনার মতামত লিখুন :