পঞ্চগড় প্রতিনিধি:
পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতা, কর্তব্যে অনীহা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার গাফিলতির কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত দুঃস্থ ও অসহায় মানুষরা ত্রাণসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি খেয়াল খুশিতে অফিস করেন , প্রকল্প তদারকি করতে দেখা যায় না, প্রকল্প কাজ শেষ না করেই বিল উত্তোলন এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে অনিয়মের মাধ্যমে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে ।
পিআইও মাইদুল ইসলাম নিজ কর্মস্থল তেঁতুলিয়ায় না থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দুরে নিজ বাড়ী নীলফামারী জেলায় থাকেন। মাঝে মধ্যে অফিস করলেও আসা যাওয়া করেন প্রাইভেট কারে। অফিসে আসেন বিলম্বে আবার প্রকল্প দেখার নাম করে সময় কাটান অফিসের বাহিরেই। তিনি নিয়মিত অফিস না করায় সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। অল্প সময়ের জন্য অফিসে এলেও ত্রাণ সেবা প্রত্যাশী জনগণের সমস্যার প্রতি তার উদাসীন মনোভাব স্পষ্ট। করেন না।
এ উপজেলায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ আসা শুকনো খাবার, ঢেউটিনসহ নানা ত্রাণসামগ্রী সময়মতো বিতরণ না করায় ক্ষতিগ্রস্তরা তাদের প্রাপ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বিতরণ না হওয়ায় অনেক ত্রাণসামগ্রী জন্য বরাদ্দ মজুদেই পড়ে আছে। এতে প্রশ্ন উঠেছে পিআইও’র আন্তরিকতা ও দায়িত্ব পালনের প্রতি তার উদাসীনতার ব্যাপারে।
এছাড়া এ উপজেলায় টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের নামে বরাদ্দ পাওয়া অর্থের সঠিক বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। নামমাত্র কাজ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হচ্ছে। বাংলাবান্ধা, শালবাহান, বুড়াবুড়িসহ কয়েকটি ইউনিয়নে প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন ও শেষ না হলেও বিল উত্তোলনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। একাধিক জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সভাপতির অভিযোগ, পিআইও মাইদুল ইসলামকে প্রকল্প বিল ছাড়ের জন্য টাকা দিলেই তিনি সেই বিল পাশ করে দেন৷
এদিকে দেবনগড় ইউনিয়নের ব্রহ্মতোল এলাকায় প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি এইচবিবি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, সড়কে প্রশস্ত, কাজের মান নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে৷
এদিকে গত ১১ মে তেঁতুলিয়া সদর ইউনিয়নের দর্জিপাড়া গ্রামে ঝড়ে আব্দুল বাসেদ নামের এক বৃদ্ধ পাথর শ্রমিকের ঘর ঝড়ো বৃষ্টিতে ভেঙে যায়। একমাত্র বসতঘর হারানোর একমাস অতিবাহিত হলেও তিনি কোনো সরকারি সহায়তা পাননি। এবিষয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সাংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং উপজেলায় জানানো হলেও ত্রাণ সেবা সহায়তকারী দপ্তর প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস থেকে কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি। এমন উদাহরণ শুধু একটিই নয়, তেঁতুলিয়া উপজেলায় ত্রাণ সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ থাকলেও পিআইও মাইদুল ইসলাম নিয়মিত অফিস না করায় ও উদাসীনতার কারনে সেগুলো বিতরণ করা হচ্ছেনা বলে জানা গেছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের অসংখ্য পরিবার ত্রাণ সহায়তা থেকে বঞ্চিত।
আব্দুল বাসেদ বলেন, “ঝড়ে ঘর ভেঙে যাওয়ার পর কেউ আমার খোঁজ নেয়নি। উপজেলা থেকেও কেউ আসেননি। শুধু ঘর নয়, আমার বাঁচার আশাও হারিয়ে ফেলেছি।” তার প্রতিবেশী জাকির হোসেন বলেন, “আমরা নিজেরাই খবর দিয়েছি। কিন্তু কোনো সরকারি লোকজনই এসে দেখেননি।”
একাধিক জনপ্রতিনিধি ও প্রকল্প সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, টিআর, কাবিখা, কাবিটা প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ গুলো থেকে গ্রামীন পর্যায়ে ছোট ছোট প্রকল্প নেয়া হয়। কিন্তু পিআইও মাইদুল ইসলাম কৌশলে চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে সেসব প্রকল্প পরিবর্তন করে একই কাজের বিপরীতে প্রয়োজনের তুলনায় তিন চার গুণ বেশী অর্থ বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্প অনুমোদন দেন। যাতে নামে মাত্র কাজ করে বেশী টাকা আত্মসাত করা যায়। নামে বেনামে এসব প্রকল্প নিয়ে সরকারি অর্থের অপচয় করা হচ্ছে। প্রতিটি প্রকল্পে অফিস খরচের নামে টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে প্রকল্প অনুমোদন বা বিল ছাড় করেন না। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে এবং ক্ষতিগ্রস্তরা বঞ্চিত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে এক ইউপি সদস্য বলেন, বিল উত্তোলনে কত টাকা দিবে তার ভাউচার/ টাকা কত বলে দিয়েছে যার যার প্রকল্পের। তার অফিসের লোক ব্যাংকে থাকে, সেখানে টাকা নেয়া হয়৷ নয়তো পরে তাকে দিতে হয়৷
এ বিষয়ে পিআইও মাইদুল ইসলামের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, “শুকনো খাবারের দুটি বরাদ্দ এসেছে, প্রায় ৬ লক্ষ টাকার। একটি কমিটি করা হয়েছে, যারা এখনো ক্রয় করতে পারেনি। ঈদের আগে বিতরণ করা গেলে ভালো হতো। আমরা প্রকল্প তদন্ত করে বিল দেওয়ার চেষ্টা করছি।”
আপনার মতামত লিখুন :