হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৫৭ জনের স্থলে মাত্র ২০ জন ডাক্তার


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : মে ৭, ২০২৫, ১০:০৪ পূর্বাহ্ন /
হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ৫৭ জনের স্থলে মাত্র ২০ জন ডাক্তার

নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে অভিযান চালিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা।

মঙ্গলবার (৬ মে)বেলা ১১টায় তারা হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন এবং অসংখ্য সমস্যা ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হবিগঞ্জ জেলা শাখার মুখপাত্র রাশেদা বেগম এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, জরুরি বিভাগে স্লিপ কাটার সময় নির্ধারিত ৫ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকা এবং ভর্তি স্লিপের ক্ষেত্রে ১৫ টাকার স্থলে ২০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্লাড টেস্টের ক্ষেত্রে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে। যেখানে টেস্ট কার্যক্রম দুপুর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত চলার কথা, সেখানে তা দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যেই বন্ধ করে দেওয়া হয়।

হাসপাতালের ওষুধ সরবরাহ ব্যবস্থায়ও রয়েছে চরম অব্যবস্থা। ওষুধের তালিকা থাকলেও প্রতিদিন কোন ওষুধ মজুত আছে, তার হালনাগাদ তথ্য দেওয়া হয় না। গ্যাস্ট্রিক, প্যারাসিটামল, ক্যালসিয়ামের মতো কিছু সাধারণ ওষুধ ছাড়া বাকি সব ওষুধ বাইরের ফার্মেসি থেকে কিনে আনতে হয়।

গাইনী ওয়ার্ডে সন্তান প্রসবের পর নার্স ও আয়ারা ‘মিষ্টি খাওয়ার’ নামে ১ থেকে ২ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করেন। এমনকি অনেক সময় ইনজেকশন দেওয়া ও চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজ আয়া বা ঝাড়ুদারদের দিয়ে করানো হয়, যাদের কোন চিকিৎসা-সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ বা অনুমোদন নেই।

নবজাতক শিশুদের জন্য নেই কোন বিশেষ কেয়ার সার্ভিস বা স্ট্যান্ডার্ড ভিত্তিক বেড। মায়েদের সঙ্গে নবজাতকদের মেঝেতে বিছানা পেতে রাখা হয়, যেখানে পরিবেশও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। গাইনী ওয়ার্ডে স্ট্যান্ডিং সিট রয়েছে মাত্র ১৭টি এবং মেঝেসহ সর্বমোট ৩০-৩৫টি শয্যা। সেখানে রোগীর সংখ্যা ছিল ৬৬ জন, সাথে প্রতিটি রোগীর সঙ্গে ২-৩ জন স্বজন থাকায় ওয়ার্ডে ছিল প্রচণ্ড ভিড় ও বিশৃঙ্খলা।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালটিতে ৫৭ জন ডাক্তারের প্রয়োজন থাকলেও বর্তমানে মাত্র ২০ জন কর্মরত রয়েছেন। অনেক ডাক্তারই সকাল ১২টার আগে হাসপাতালে আসেন না। এছাড়া হাসপাতালে দালালচক্র সক্রিয় রয়েছে, যাদের মাধ্যমে রোগীদের মোবাইল ও টাকা-পয়সা চুরির ঘটনা প্রায়ই ঘটে।

পর্যাপ্ত ওষুধ, ডাক্তার, এবং টেকনিক্যাল সহায়তা না থাকায় রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। এমনকি রোগীদের কাটা-ছেঁড়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজও অভিজ্ঞতা বা সনদবিহীন আউটসাইডারদের দিয়ে করানো হচ্ছে। বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা হচ্ছে।

সবশেষে তারা হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোহাম্মদ আমিনুল হক সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি আশ্বাস দেন, এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।