কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
কৃষিতে জৈব সারের বিকল্প নেই। কৃষি নির্ভর বাংলাদেশে এ জন্য জনগনের একটা বিশাল অংশ কৃষির উপর নির্ভর করে চলে তাদের জীবন। বর্তমানে দেশে হাইব্রিড খাবারের একক আধিপত্য চলছে। চাষিরা ফসল তাড়াতাড়ি বাজারে তোলার জন্য অধিক পরিমাণে রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করছেন। যা মানব স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, ঠিক তেমনি মাটির উর্বরতা কমতে থাকে। কম সময়ে ফসল উৎপাদনের জন্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ চরম মাত্রায় বেড়েছে এককালের বৃহত্তর সিলেটের শস্যভান্ডার খ্যাত কমলগঞ্জ উপজেলায়। ধান থেকে শুরু করে রবি ফসলসহ অন্যান্য যে কোনো সবজি চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগ স্বাভাবিক নিয়মে পরিণত হয়েছে। ফলে নানান কারনে রোগ জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি জমির স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। তাই মানবদেহে স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য পেতে মাটিতে জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর কোনো বিকল্প নেই।
মাটির প্রাণ হচ্ছে জৈব সার। কমলগঞ্জ উপজেলায় আস্তে আস্তে জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর প্রক্রিয়া কৃষকের কাছে জনপ্রিয় হচ্ছে। জৈব সার বিভিন্ন প্রাণীর ধ্বংসাবশেষ, গোবর সার, সবুজ সার, খৈল ইত্যাদি ছাড়াও গাছের প্রায় সব খাদ্য উপাদান দিয়ে প্রস্তুত করা যায় ।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, জৈব সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। কৃষকের অনেক খরচ সাশ্রয় হয়। জৈব সার ব্যবহারের ফলে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং সবজির উৎপাদন খরচ রাসায়নিক সারের চেয়ে শতকরা ৩৫-৪০ শতাংশ কমিয়ে আনে। জৈব সার ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি অনেকটাই রোগ পোকার আক্রমণ কমায়। জৈবসার প্রয়োগে উৎপাদিত সবজি ও অন্যান্য ফসল তুলনামুলক বেশি দামে বাজারে বিক্রি করা যায়। ফলে অনেকটাই লাভবান হন কৃষক। জৈবসার উৎপাদন করার জন্য কৃষকদেরকে নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক চাষের সবজি বাজার থেকে আমরা কিনে নিচ্ছি তার বেশিরভাগের মধ্যে রয়েছে রাসায়নিক মিশ্রিত সার, যা মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক। এই সব সারের ক্ষতিকারক প্রভাব আমাদের উপর পড়ছে। অতিমাত্রায় কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন ব্যবহারের ফলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিকসহ নানা রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর প্রভাব পড়ছে।
গবেষকরা বলেছেন, জৈব সার উৎপাদিত খাদ্যে অনেক বেশি পুষ্টি পাওয়া যায়, এছাড়াও শরীরের মেদ কমায়, ক্যালসিয়াম এবং পেশির শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। সাধারণ সারমিশ্রিত ফসলের চেয়ে জৈব সার ফসলে কীটনাশকের পরিমাণ এক চতুর্থাংশের চেয়েও কম থাকে। ফলে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বেশি পাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাবারের থালিকায় জৈবসার ফসলের কয়েকটা খাবার থাকলে স্বাস্থ্যগত অনেক সুবিধা বাড়িয়ে দেয়।
কমলগঞ্জ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার বিশ্বজিৎ রায় জানান, জৈব সার হচ্ছে মাটির প্রাণ, একজন কৃষক সর্বোচ্চ রাসায়নিক সার ৪ থেকে ৫টা ব্যবহার করেন। কিন্তু একটা গাছের জন্য প্রায় ১৭টা খাদ্য উপাদান প্রয়োজন। একটা গাছ তিন থেকে চারটা নিউট্রন উপাদান নেওয়ার কারণে মাটিতে ঘাটতি তৈরি হয়। কিন্তু জৈব সারে ১২ থেকে ১৩ টি বা আরও বেশি নিউট্রন থাকে। যার ফলে বছরের পর বছর চাষ করার পর মাটিতে যে শুন্যতা তৈরি হয় তা কয়েক বছরের মধ্যে পূরণ হয়ে যায়। জৈব সার ব্যবহারের কারণে মাটির পূর্ণতা ফিরে পায়। বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে আরও ভালো জৈব সার বানানো সম্ভব। আমাদের পক্ষ থেকে জৈব সার উৎপাদনের জন্য কৃষকদেরকে উৎসাহ দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন