মাহমুদ হাসান, বড়লেখা প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের জুড়ি উপজেলার ছোট-বড় আঁকাবাঁকা পাহাড়ি টিলাগুলোয় রয়েছে চাষিদের স্বপ্নের কমলা বাগান। বাগানের ছোট-বড় গাছে দোল খাচ্ছে পাকা ও আধাপাকা কমলালেবু। ঋতুরাণী শরতের বাতাসে ছড়াচ্ছে কমলার সুস্বাদু ঘ্রাণ।
এমন সৌন্দর্যে কৃষকের বুকে অপার আনন্দ হওয়ার কথা থাকলেও এবার তা অনেকটা কমে গেছে। কারণ একদিকে এ বছর খরা বেশি ছিল অন্যদিকে প্রস্তাবিত সাফারি পার্কের কারণে জমিসহ বাগান হারানোর শঙ্কা। এজন্য কমলা চাষে আগ্রহ হারিয়ে বাগানের পরিচর্যা আগের মতো করেননি কৃষকরা। ফলে এবার কমলার ফলনও হয়েছে কম।
উপজেলার গোয়ালবাড়ি ইউনিয়েনের লালছড়া, শুকনাছড়া, ডুমাবারই, লাঠিটিলা, লাঠিছড়া, হায়াছড়া, কচুরগুল, সাগরনালস ইউনিয়নের পুটিছড়া ও পূর্বজুড়ি ইউনিয়নের কালাছড়া এবং জায়ফরনগর ইউনিয়নের বাহাদুরপুরসহ অন্য গ্রামের টিলা বাড়িগুলোয় কমলা, বাতাবি লেবু, আদালেবু, শাসনি ও জাড়া লেবুর বাগান রয়েছে। বাগান পরিচর্যা করা ওই গ্রামগুলোর মানুষের নেশায় রুপান্তরিত হয়েছিল। কমলাচাষে যেমন খরচ কম, তেমন শ্রমও দিতে হয় না। তাই আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ও সঠিক পরিচর্যায় এক একটি বাগান থেকে প্রতি বছর ৫-৮ লাখ টাকার ফলন বাজারজাতকরণ করা যায়।
জানা গেছে, এবারেও কিছু কিছু কৃষক পোকামাকড় নিধনে ‘সেক্সফরমুন ফাঁদ ও আলোক ফাঁদ’ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এটি পোকামাকড় দমনের সঠিক ও পরীক্ষিত একটি পদ্ধতি। যার ফলে, অনেক বাগানে কমলার আকার বড় ও ফলন হয়েছে।
লালছড়া গ্রামের কমলা চাষি কবির আহমদ বলেন, কমলা এ বছর ফলন বেশি হয়নি। অন্য বছরের তুলনায় ফলন কম হয়েছে। এবার কমলার বাজার মূল্য গত বছরের চেয়ে ভালো। তবে সাফারি পার্ক প্রস্তাবিত হওয়ায় আগ্রহ কমেছে কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ৯১ হেক্টর জমিতে ৮৪টি কমলা বাগান রয়েছে। তন্মধ্যে গোয়ালবাড়ি ইউপিতে শতকরা ৮০ ভাগ ও বাকি ২০ ভাগ বাগান অন্য ইউনিয়নে রয়েছে। অত্রাঞ্চলের অধিকাংশ কমলা খাসি জাতের চাষাবাদ হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার জসিম উদ্দিন জানান, কমলা একটি ছায়া পছন্দকারী বৃক্ষ। কৃষকরা যদি সঠিকভাবে সুষম সার ব্যবহার করে এবং পোকা-মাকড় ও রোগবালাই দমনের জন্য নিয়মিত বালাইনাশক স্প্রে ব্যবহার করে তাহলে ফলন ভালো হওয়ার পাশাপাশি আকারও বড় হবে।
এ বছর কমলার ফলন কম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার খরা অন্য বছরের চেয়ে বেশি ছিল। আর সাফারি পার্ক প্রস্তাবিত হওয়ায় চাষিদের আগ্রহও কমেছে। আগ্রহ কমে যাওয়ায় সঠিক পরিচর্যা করেনি চাষিরা।
মন্তব্য করুন