রফিকুল ইসলাম জসিম,
বাংলাদেশে মণিপুরী মৈতৈ সম্প্রদায়ের অন্যতম আবেগঘন উৎসব ‘নিঙোল চাকৌবা’ উদযাপন করা হয়েছে। এটাকে মনিপুরী সম্প্রদায়ের মহিলা দিবস হিসেবেও গন্য করা হয়। আক্ষরিক অর্থে ভাইয়ের বাড়িতে বোনকে ভূরিভোজের আমন্ত্রণই এ উৎসব।
মীতৈ মণিপুরীদের বিবাহিত ও অবিবাহিত বোন দের একত্রে নিমন্ত্রন করে একসাথে মধাহ্ন ভোজের আয়োজন এবং তার সঙ্গে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও তারপর সবার হাতে উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে এবারও আবেগঘন অনুষ্ঠানটি প্রতিপালন করা হয় আজ বৃহস্পতিবার (২৭ অক্টোবর) দিনব্যাপী মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুর ইউনিয়নস্থ মণিপুরি কালচারাল কমপ্লেক্স ভারতে মনিপুরের`পেট্রিয়টিক রাইটার্স ফোরাম ‘ও বাংলাদেশ মণিপুরী ইয়ুথ ফোরামের এ মণিপুরীদের অন্যতম উৎসব ‘নিঙল চাকৌবা’ ফেস্টিভ্যাল – ২০২২ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘নিঙল চাকৌবা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ভারতের মণিপুর রাজ্যের খাদ্য প্রতিমন্ত্রী লৈশাংথেম সুচিন্দ্র মৈতৈ।মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স এর সভাপতি এল জয়ন্ত সিংহ এর সভাপতিত্বে এল সুচনা সিনহা ও মাইবম প্রেমজিতের যৌথ সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের মনিপুরী রাজা ও রাজ্যসভার এমপি লৈশেম্বা সানাজাউবা, মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ড. নাওরেম স্বানাতম্বা, মণিপুর (ভারত) পেট্রিওটিক রাইটার ফোরামের পেট্রোন সভাপতি নাওরোইবম খাম্বালোয়াং, সাবেক সভাপতি ড. ওয়াইস্কুল খোয়াইরাকপম, বিএসইসি এর সাবেক অতিরিক্ত সচিব কংখাম নিলমনি সিংহ, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন, কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সঞ্জয় চক্রবর্তী, বাংলাদেশ মণিপুরী ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি হিজম সুশীল সিংহ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, মণিপুর (ভারত) পেট্রিওটিক রাইটার ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাকেশ নাওরেম, মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক সমরজিত সিংহ, মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্সের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইবুংহাল শ্যামল, বাংলাদেশ মণিপুরী ইয়ুথ ফোরামের সাধারণ সম্পাদক হাউবম সৌরব প্রমুখ।
আলোচনা সভায় আলোচকদের আবেগঘন আলোচনা শুরু হতেই উপস্থিত সকল বোনদের চোখ দিয়ে বেড়িয়ে আসে আনন্দ ও ভালবাসা মিশ্রিত অশ্রুধারা। অনুষ্ঠানে মণিপুরী ৫ শতাধিক নারী পুরুষ অংশগ্রহণ করেন। পরে মণিপুরের বিখ্যাত সংগীত শিল্পী সরি সেনজম এর একক সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, কমলগঞ্জের মণিপুরী কালচারাল কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে নানা আয়োজনে এ বছর ‘নিঙোল চাকৌবা’ উৎসবের আয়োজন করা হয়। উৎসবে বাংলাদেশের মণিপুরী অধ্যুষিত বিভিন্ন অঞ্চলের প্রায় দু শ ‘নিঙোল’ বা বোনদের আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রায় দু শ ‘পিবা’ বা ভাইদের উপস্থিতিতে ভূরিভোজ ও উপহারসামগ্রী প্রদানের আয়োজন করা হয়।
নিঙোল অর্থ বোন, আর চাকৌবা-র অর্থ মধাহ্ন ভোজের নিমন্ত্রন। বাঙ্গালী ও অনান্য হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাইদের সম্মানার্থে ও মঙ্গল কামনায় যেভাবে ভাই ফোঁটা দেওয়া হয় ঠিক এই একই ভাবে মনিপুরী সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের বাড়িতে ভাইয়েরা বোনদের সম্মানার্থে ও মঙ্গল কামনায় বোনদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজের আয়োজন করে।
মন্তব্য করুন