নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জঃ রঙ আর তুলির আঁচড়ে সাজিয়ে তোলা হয়েছে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সজ্জিত বড় শাখোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ডিজিটাল জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে। রঙ তুলিতে সাজিয়ে তোলা হয়েছে বিদ্যালয়ের শ্রেণি কক্ষ, দেওয়াল, বারান্দা, প্লিয়ার, ফোর, সিঁড়িসহ বিভিন্ন স্থান। শোভা পাচ্ছে জ্ঞান ভিত্তিক বাংলা স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, ইংরেজীবর্ণ, রোমান সংখ্যা ও মনিষীদের বাণী। ফ্লোরে হাতের নকশায় কারুকাজ করা হয়েছে। সিঁড়িগুলি নামতা ও ক্রমবাচক সংখ্যা দিয়ে সজ্জিত হয়েছে। বারান্দায় রয়েছে শিক্ষার্থীদের প্রতি নির্দেশনা ও নৈতিক শিক্ষামূলক বাণী। নানা রঙ, বর্ণ, সংখ্যা, বাণীতে নয়নাভিরাম সাজে সজ্জিত করে বিদ্যালয়টি শিশুদের শিক্ষার শিশুস্বর্গে রূপ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা সদরের কাছেই বড় শাখোয়া বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বিদ্যালয়ের দ্বিতল ভবনের অফিস রুম সহ ৬ টি কক্ষ ও একটি লাইব্রেরী রয়েছে। বিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ২৭৫ জন। প্রধান শিক্ষক সহ মোট ৫ জন দক্ষ শিক্ষক, একজন দপ্তরী রয়েছে।
দেওয়ালে রয়েছে শিশুবান্ধব শিক্ষামূলক ছবি। সাথে রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের কর্ণার। যাতে শিক্ষার্থীদের পড়ার আসনসহ মুক্তিযোদ্ধা ভিত্তির বিভিন্ন বই দিয়ে সাজানো। বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের হাত-মুখ ধোয়ার জন্য রয়েছে একটি আধুনিক সুন্দর ওয়াশব্লক। সাথে আছে শিশুদের খাবার উপযোগী বিশুদ্ধ নিরাপদ পানি। বিদ্যালয়ে আধুনিক মানের স্বাস্থ্য সম্মত স্যানেটেশন ব্যবস্থা। ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য রয়েছে পৃথক পৃথক বাথরুম ও টয়লেট। কক্ষে রয়েছে দেওয়াল ঘড়ি ও ড্রেসকোট দেখার জন্য দেওয়াল আয়না। রয়েছে বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল ব্যবস্থা।
স্কুলের অভিভাবক ও পিটিও কমিটির সহ- সভাপতি ডাঃ কিরণ সূত্র ধর জানান, নতুন সাজে বিদ্যালয় দেখে সকলে প্রশংসা করছে। এখন স্কুলে আসার জন্য ছাত্রছাত্রীরা আগে আগে তৈরী হয়। এখানের শিক্ষকরা ভীষণ দক্ষ। প্রতিটি শিশুকে স্নেহ-মমতা দিয়ে তারা পড়ান। স্কুলের শিক্ষার্থী ৫ম শ্রেণির ছাত্র মিঠু রায় জানান, রঙ আর শিক্ষা উপকরণ দিয়ে সাজানোয় বিদ্যালয়টি খুব ভাল লাগছে। ৫ম শ্রেণির ছাত্রী তৃষা পাল জানান, এখন স্কুলে আসলে খুব ভাল লাগে। বিদ্যালয়টি থেকে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ সহ বৃত্তি লাভ করে থাকে। বিভিন্ন জাতীয় অনুষ্ঠানে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন প্রদর্শনী প্রশংসা লাভ করেছে। প্রতিবছর স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সফরে নিয়ে যাওয়া হয়। স্কুলে সুন্দর একটি ফুলের বাগান, ফলদ ও বনোজ বৃক্ষ রয়েছে। পরিবেশ ও পাখি সু-রক্ষায় গাছে মাটির পাত্র স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবেল মিয়া জানান, শিশুদের উপযোগী ও শিশুবান্ধব শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আগামীতে বিদ্যালয়টিকে আরও আকর্ষনীয় ও পড়াশুনার মান আরও উন্নত করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ডিজিটাল বাস্তবায়ন করতে শিক্ষকরা নিরালস কাজ করছেন। ঝড়েপড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা ও শিক্ষাবান্ধব মনোরম পরিবেশে ছাত্র-ছাত্রীদের বিদ্যালয়ে আসার প্রবণতা বাড়ছে। উপজেলার দুইবারের শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রুবেল মিয়া বলেন, আমরা স্বপ্ন দেখেছি এমন একটি বিদ্যালয়ের, যেখানে শিশুরা আনন্দের সঙ্গে শিখবে। বিদ্যালয়টি হবে সজ্জিত, ঠিক যেন স্বর্গের মতো। আমাদের সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন হয়েছে। দক্ষ শিক্ষক, অভিভাবক ও কমিটির সহযোগিতায় আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে পড়তে এসে ওরা বিন্দুমাত্রও আতঙ্কের মধ্যে থাকে না। আনন্দে সঙ্গে ওদের পাঠদান করা হয়। স্কুলের সহকারী শিক্ষক লাভলী রাণী দাশ বলেন, পরিকল্পনা মেধা, মনন ও সৃজনশীল কর্মে শিক্ষার মান ও বিদ্যালয়ের উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের বিদ্যালয়ে সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করাতে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের বিদ্যালয়ের পড়ালেখার মান ভালো থাকায় অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে আগ্রহ নিয়ে ভর্তি করছেন।
আমাদের প্রধান শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বিদ্যালয়টি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। আনন্দঘন এমন পরিবেশে নবীগঞ্জ শহরের বড় শাখোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান চলছে। উপজেলাজুড়ে বিদ্যালয়টি আনন্দের এক রঙিন ফুল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। জানা যায়, ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠা হয় নবীগঞ্জ পৌরএলাকা থেকে একটু সামনে বড় শাখোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়টি উপজেলার সুনাম বয়ে এনেছে বেশ কয়েকবার। লেখাপড়ায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রশংসা অর্জন করেছে। শ্রেণিকক্ষগুলোর নামকরণ করা হয়েছে কবি-সাহিত্যিকদের নামে। সেখানে তাদের ছবির সঙ্গে সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত লেখা আছে। শিক্ষকরাও সন্তানের স্নেহে পড়াচ্ছেন শিক্ষার্থীদের। তাই প্রতিদিনের উপস্থিতিও শতভাগ। শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এগিয়ে যাওয়া এই বিদ্যালয়টি উপজেলায় একটি মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রতিক রায়, নদী রায় ও আরাফাত রহমান বলে, সকালে বিদ্যালয়ে আসার পরে আনন্দে পড়ালেখা করে সময় কেটে যায়। শিক্ষকরা আমাদের খুব ভালোবাসেন। আমাদের বিদ্যালয়ের সব শ্রেণিকক্ষ সাজানো-গোছানো। আমাদের প্রধান শিক্ষকের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণে বিদ্যালয়টি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :