সিলেট প্রতিনিধিঃ
দেশ, সমাজ ও আর্তমানবতার কল্যাণে অনেক কিছু করে গেছেন। জীবনসঙ্গীকে সাথে নিয়ে সমাজসেবার ব্রত নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছেন ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের বিভিন্ন প্রান্তে। কিন্তু, আজ ১৫টি বছর তিনি নেই। তবে, তিনি বেঁচে আছেন তাঁর মহৎ কাজের জন্য। সমাজসেবামূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন মানুষের হৃদয়ে। তিনি সমাজসেবামূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলীর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী।
সিলেটের প্রথম বেসরকারি মেডিকেল কলেজ জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহীয়সী নারী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর পঞ্চদশ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল সোমবার তাঁর স্মৃতি বিজড়িত প্রতিষ্ঠানটি আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। জীবনসঙ্গিনীর জন্য সবার কাছে দোয়া চাইতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা, সমাজসেবামূলক অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান দানবীর ড. রাগীব আলী । মেডিকেল কলেজের ১ নম্বর লেকচার গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দানবীর ড. রাগীব আলী বলেন, এই প্রতিষ্ঠানের উজ্জ্বল পরিচিতি আজ শুধু সিলেট বিভাগে নয়, সারা বাংলাদেশে এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বিস্তৃত। দেশি শিক্ষার্থী ছাড়াও প্রতিবছর বিদেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী এই প্রতিষ্ঠানে পড়তে আসেন। এই প্রতিষ্ঠানের সুনাম ও প্রসিদ্ধির পেছনে বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর অবদান সবচেয়ে বেশি। সেবা নিতে আসা রোগীসহ এখানে কর্মরত সকলকে তিনি নিজের পরিবারের মতো মনে করতেন। প্রাতিষ্ঠানিক অথবা ব্যক্তিগত সমস্যা সমাধানে তিনি এগিয়ে আসতেন। যার কারণে তাঁর উপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত থাকতাম। আজ তিনি আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু তাঁর রেখে যাওয়া এই প্রতিষ্ঠান যত উন্নতি করবে, সেবার মান তত উন্নত হবে; বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর স্বপ্ন ও শ্রম স্বার্থক হবে।
মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ আবেদ হোসেনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক একে এম দাউদ, হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ,
মানবকল্যাণে নিবেদিত প্রতিষ্ঠান রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার আব্দুল হাই, হাসপাতালের উপপরিচালক অধ্যাপক মো. আব্দুল হাই, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মইজ উদ্দিন আহমদ, রাগীব-রাবেয়া নার্সিং কলেজের অধ্যক্ষ ড. আয়শা বেগম, সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী, মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্র ও সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ, ২৫তম ব্যাচের ছাত্র আব্দুর রাজ্জাক আল মাছুম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চর্ম ও যৌন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. শামীমা আক্তার।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোঃ আবেদ হোসেন বলেন, মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী ছিলেন এই মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সবার কাছে মাতৃসম। প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি ইট-বালুকণায় তাঁর পরিশ্রম, মেধা ও স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তিনি প্রতিদিন একা নিভৃতে কলেজ ও হাসপাতালের করিডোরে হাঁটতেন। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যা খুঁজে বের করতেন। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যা শুনে সমাধান করতেন। অসহায় রোগীদের ব্যক্তিগতভাবে তাৎক্ষণিক অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন। অধ্যক্ষ আরও বলেন, অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতালসহ সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠাণের প্রতিষ্ঠাতা দানবীর ড. রাগীব আলী একজন জীবন্ত কিংবদন্তি। যিনি অসংখ্য মানুষের হৃদয়ে আসীন হয়ে আছেন। প্রতিদিন এসব সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠানের সেবাগ্রহিতা অসংখ্য মানুষ দানবীর ড. রাগীব আলী ও তাঁর প্রয়াত সহধর্মিণী বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে স্মরণ করছে ও তাঁদের জন্য দোয়া করছে। যারা দানবীর ড. রাগীব আলী ও বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীকে দেখেনি তাঁদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সেবার মাধ্যমে মানুষের মুখে এ দু’টি নাম উচ্চারিত হয়।
অধ্যাপক একে এম দাউদ বলেন, রাগীব-রাবেয়া দম্পতি লন্ডনে কেবল নিজেকেই প্রতিষ্ঠা করেননি, সেখান থেকে দেশের, জাতির বিপদের মুহূর্তেও সক্রিয় সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসে কর্তব্যবোধ ও দেশপ্রেমের পরিচয় রেখেছেন। তাঁদের প্রতিষ্ঠিত সেবামূলক এসব প্রতিষ্ঠান দেশ ও জাতির উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখছে। এসব প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুনাম কুড়িয়েছে , বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জল করছে।
অধ্যাপক ডা. তারেক আজাদ বলেন, বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর জীবনকাল ছোট হলেও তাঁর কর্মময় জীবন ছিল অনেক সমৃদ্ধ। তাঁর দানের হাত ছিলো প্রসারিত। এই প্রতিষ্ঠানকে চারা গাছ থেকে মহীরুহে পরিণত করেছেন। এই প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়তই তারঁ কথা মনে করিয়ে দেয়।
রাগীব-রাবেয়া ফাউন্ডেশনের ট্রেজারার আব্দুল হাই বলেন, মা-বাবার সমাজসেবা ও মানুষের উপকারের কথা শুনে তাদের সন্তান হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন, আমিও যেন আমার মা-বাবার মতো সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিতে পারি। তিনি পিতা দানবীর ড. রাগীব আলীর সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর জন্য এবং মা মরহুমা বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর রুহের মাগফেরাতের জন্য সকলের কাছে দোয়া কামনা করেন।
সিলেট অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহিত চৌধুরী বলেন, সিলেট অঞ্চলে মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ার সংখ্যা কম। এক্ষেত্রে দানবীর রাগীব আলী সকলকে ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি বলেন, বেগম-রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর মতো মহৎ একজন জীবনসঙ্গী পাওয়ায় দানবীর ড. রাগীব আলী নিজেদের কষ্টার্জিত ধন সম্পদ মানুষের কল্যাণে বিলিয়ে দিতে উৎসাহ পেয়েছেন।
সভায় কোরআন তেলাওয়াত করেন কলেজের ২৪তম ব্যাচের ছাত্র হাফিজ দেওয়ান মাহবুবুর রহমান। দোয়া পরিচালনা করেন জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের ইমাম মাওলানা এ বি এম লুৎফুর রহমান। সভায় বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরীর স্মৃতিতে জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে প্রকাশিত ‘তুমি আলোকিত সমাজ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা-তুমি মুক্তির অগ্রদূত’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিবৃন্দ।
আপনার মতামত লিখুন :