স্টাফ রিপোর্টার
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রো ভাইস চ্যান্সেলর বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ প্রফেসর শিব প্রসাদ সেন আজ ১৭ অক্টোবর সকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর।
প্রফেসর শিব প্রসাদ সেন ১৯৪৭ সালের ১ জানুয়ারি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে কুমিল্লা বোর্ডের অধীন এইডেড হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ এবং ১৯৬৫ সালে সিলেটের এমসি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ অর্জন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১২ তম স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অধিভুক্ত সিলেটের এম.সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় দ্বিতীয় শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন এবং ১৯৬৯ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে এম.এ পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন।
৫০ বছরেরও বেশি সময়ব্যাপী কর্মজীবনে প্রফেসর শিব প্রসাদ সেন বাংলাদেশের বিভিন্ন খ্যাতিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদান এবং প্রশাসনিক ক্ষমতায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তিনি সিলেট মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজ এবং সিলেট এমসি কলেজে কর্মজীবনের অধিকাংশ সময় কাটান। তিনি ছিলেন হবিগজ্ঞ সরকারি বৃন্দাবন কলেজের অধ্যক্ষ।
২০০৩ সালে প্রফেসর সেন সিলেটের মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির অধ্যাপক ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে কোষাধ্যক্ষ ও প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন সময় তিনি ভারপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত তিনি একাডেমিক সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর দক্ষতা এবং আবেগকে উৎসর্গ করে যান। একাডেমিক প্রচেষ্টার পাশাপাশি অধ্যাপক শিব প্রসাদ সেন গবেষণা এবং প্রকাশনার প্রতি গভীর প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেন। তিনি গবেষণা সহযোগী হিসেবে ’শাহজালাল শ্যামল সিলেট রিসার্চ প্রজেক্ট’এ অবদান রাখেন এবং বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যাবিষয়ক ৭২টি নিবন্ধ লিখেছেন। শিক্ষায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রফেসর সেন শিক্ষা সপ্তাহ-২০০৪-এ ‘সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ’ হিসেবে সম্মানিত হন। তিনি সরকারি প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ কমিটির একজন ’শিক্ষাবিদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
প্রফেসর শিব প্রসাদ সেনের মৃত্যুতে শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে সংবাদ পত্রে বিবৃতি দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. তৌফিক রহমান চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর রহমান চৌধুরী, ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক।
দুপুর সাড়ে ১২ টায় প্রফেসর শিব প্রসাদ সেনের মরদেহ তাঁর দীর্ঘ দিনের কর্মস্থল মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বটেশ্বরস্ত স্থায়ী ক্যাম্পাসে নেয়া হলে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শেষ শ্রদ্ধা জানান। এ সময় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ভাইস চ্যান্সেলর ও স্পোর্টস ক্লাবের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পন করা হয়। পরে ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক, ট্রেজারার প্রফেসর ড. সুরেশ রঞ্জন বসাক, স্কুল অব বিজনেস এন্ড ইকোনোমিক্স এর ডিন প্রফেসর ড. তাহের বিল্লাল খলিফা, প্রক্টর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, রেজিস্ট্রার তারেক ইসলাম সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, “আমরা অধ্যাপক শিব প্রসাদ সেনের মৃত্যুতে শোকাহত। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী শিক্ষাবিদ যার প্রভাব মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি এবং বৃহত্তরভাবে একাডেমিক সম্প্রদায়ের ওপর অপরিসীম। তাঁর উত্সর্গ, আবেগ এবং শিক্ষা আমাদের প্রতিষ্ঠানে এবং অগণিত ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনে একটি অমোঘ চিহ্ন রেখে গেছে। আমরা তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই। প্রফেসর সেন একাডেমিক জগতের একজন নক্ষত্র। তাঁর বিয়োগের ফলে এমন একটি শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে যা একাডেমিক সম্প্রদায় এবং এর বাইরেও দীর্ঘদিন গভীরভাবে অনুভূত হবে।
মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির পর তাঁর মরদেহ নেয়া হয় নগরীর শিবগঞ্জের সেনপাড়ার বাসায়। সেখানে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক, সিলেট এমসি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আবুল আনাম মো. রিয়াজ, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, সিটি কাউন্সিলর মোঃ আজাদুর রহমানসহ অনেকেই তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য যান। পরে বিকেল ৩ টায় চালিবন্দরের মহাশ্মশানে তাঁর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়।
মন্তব্য করুন