নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
২০২৩ সালের জুন মাসে ৪৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শেষ হয় হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার কেদারা কোর্ট এলাকায় অবস্থিত দেশের ২৩তম বাল্লা স্থলবন্দরের। অথচ ভারতের অংশে এখনো বন্দর নির্মাণের কাজ শুরুই হয়নি। ফলে নির্মাণের দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও শুরু করা যায়নি আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম। তারমধ্যে আবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন বাল্লা স্থলবন্দর প্রাথমিকভাবে বন্ধ ঘোষণা করার সুপারিশ করা হয়েছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের স্থলবন্দর কার্যকর, অকার্যকরের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি এই সুপারিশ করেছে। এতে করে ওই স্থলবন্দরকে ঘিরে স্থানীয় ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে যে আগ্রহ দেখা দিয়েছিলো, তা এখন আর নেই।
চলতি বছরের ১০ই ফেব্রুয়ারি নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেনের কাছে কমিটির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ উপস্থাপন করে। মূলত এর পর থেকেই ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে হতাশা।
এর আগে ২০১৬ সালে উপজেলার বাল্লা শুল্ক স্টেশনকে দেশের ২৩তম স্থলবন্দর হিসেবে ঘোষণা করা হয়। একটি আধুনিক স্থলবন্দর তৈরির লক্ষ্যে ২০১৭ সালে উপজেলার কেদারা কোর্ট এলাকায় জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শুরু করে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত ভারতের অংশে ইমিগ্রেশনসহ কোনো ধরণের স্থাপনা নির্মাণ না হওয়ায় এই বন্দরের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না। বাল্লা স্থলবন্দরের বাংলাদেশ অংশে উন্নত অবকাঠামো হলেও, সীমান্তের ওপারে ভারত অংশে কোনো প্রকার শুল্ক স্টেশন বা ইমিগ্রেশন সুবিধা নেই। যে কারণে বন্দরটি চালু করা সম্ভব হচ্ছে না।
বাল্লা স্থলবন্দর ঘুরে দেখা যায়, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ অংশে নির্মাণ করা হয়েছে ইয়ার্ড, অফিস ভবন, ওজন মাপার যন্ত্র, ডরমিটরি এবং অন্যান্য স্থাপনা। ইতোমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ কিছু জনবল। তবে ভারতে কোন স্থাপনা চোখে পড়েনি। ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি এলাকায় এই বন্দরের অবকাঠামো নির্মাণ করার কথা, সেখানে কোনো কার্যক্রমই দেখা যায়নি। পুরো জায়গাটি এখনও ঝোপঝাড়ে ভরা।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দরের কার্যক্রম শুরু হলে ভারতের ত্রিপুরাসহ সাতটি অঙ্গরাজ্যে বাংলাদেশি পণ্যের বাজার সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে কৃষিপণ্য, মৎস্য, সিরামিক, স্যানিটারি সামগ্রী, প্রক্রিয়াজাত খাদ্য এবং বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস রপ্তানিতে এই স্থলবন্দর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া এই বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ, আদা-রসুন ও বিভিন্ন ধরণের ফলমূল ভারত থেকে আমদানি সহজ হবে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, চুনারুঘাট ও আশেপাশের এলাকার জনগণ স্থলবন্দর চালু নিয়ে ব্যাপক আগ্রহী। তারা মনে করেন, বন্দর চালু হলে শুধু ব্যবসায়ীরা নন, সাধারণ মানুষের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। তবে সেটি না হওয়ায় হাতাশ তারা।
ব্যবসায়ী তোফাজ্জল মহালদার বলেন, আমরা ভেবেছিলাম বন্দর চালু হলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। আমরা এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারব। কিন্তু নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও বন্দরটি চালু হয়নি। এখন আবার শুনছি সেটি নাকি বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে। এটা আমাদের জন্য খুবই হতাশার।
হবিগঞ্জ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি (ব্যক্স) সভাপতি সামছুল হুদা বলেন, শুনেছি ভারত অংশে শুল্ক স্টেশন নির্মাণ না হওয়া বন্দরের প্রধান বাঁধা। দুই দেশের সরকারের মধ্যে দ্রুত সমঝোতা হওয়া দরকার। কারণ আমরা অনেক ব্যবসায়ী এখানে ব্যবসা করার পরিকল্পনা নিয়ে বসে আছি। এছাড়া এখানে প্রচুর লোকের কর্মসংস্থান হবে। এক কথায় বন্দরটি চালু হলে জেলার অর্থনৈতিক অবস্থা বদলে যাবে। আর সেটা না হলে আমাদের ব্যাপক ক্ষতি সম্মুখীন হতে হবে।
চুনারুঘাট উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী জানান, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সকল কাজ শেষ। এখানে সরকারের কোটি কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখন যদি বন্দরটি চালু না হয় তা হলে সরকারের এত বড় প্রকল্প ও এতসব স্থাপনা কোন কাজেই আসবে না।
বাল্লা স্থলবন্দরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর মোঃ লুৎফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্থল বন্দরের সকল কার্যক্রম আপতত বন্ধ রয়েছে। নতুন করে এখানে কোন ধরণের কার্যক্রম চলছে না।
হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মোঃ ফরিদুর রহমান বলেন, স্থলবন্দরটি বন্ধের বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোন লিখিত কাগজপত্র পাইনি।
আপনার মতামত লিখুন :