প্রার্থীরা। করোনা সংক্রমণের ইর্ধগতি আর বিধিনিষেধের সময়েও কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।
কেউ আগস্টে জাতীয় শোক দিবস ঘিরে, কেউ গণটিকা নেওয়ার জমায়েত ঘিরে প্রচারণা চালাচ্ছেন, ভোটারদের কাছে ভোট ও দোয়া চাইছেন।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জাতীয় শোক দিবস ঘিরে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান (নৌকা)। বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয়ভাবে আয়োজিত শোক দিবসের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করছেন তিনি।
জাপার প্রার্থী আতিকুর রহমান (লাঙ্গল) করোনায় গণটিকার বিষয়টিকে প্রচারণায় কাজে লাগিয়েছেন। গণটিকার শুরুর দিন তিনি বিভিন্ন কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে টিকা নিতে আসা মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। এ ছাড়া এলাকায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের জানাজা ও মসজিদে নামাজ পড়তে গিয়ে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন।
গত সোমবারও তারা একাধিক কর্মসূচিতে যোগ দেন। মঙ্গলবার দিনভর থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল সিলেটে। তাই প্রার্থীরা কুশল বিনিময়ে বের হতে পারেননি।
সিলেট নগরের উপকণ্ঠে অবস্থিত তিন উপজেলা দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ নিয়ে সিলেট-৩ আসন গঠিত। এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৫২ হাজার। গত ১১ মার্চ করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ আসনের আওয়ামী লীগের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান। এরপর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচনের দিন নির্ধারণ করা হয়। গত ২৮ জুলাই এ আসনের ভোট হওয়ার কথা ছিল।
তবে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের ছয় আইনজীবী ও আসনটির সাতজন ভোটার গত ২৬ জুলাই হাইকোর্টে রিট করেন। রিটের শুনানি শেষে সেদিন হাইকোর্ট উপনির্বাচন ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্থগিত করে আদেশ দেন।
সর্বশেষ ৫ আগস্ট বিষয়টি শুনানির জন্য উঠলে আদালত জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) আগামী ৭ সেপ্টেম্বরের আগে সুবিধাজনক সময়ে উপনির্বাচন করতে পারবে।
উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়াও মাঠে আরও দুজন প্রার্থী আছেন। তারা হচ্ছেন নির্বাচনে নেমে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক সাংসদ শফি আহমদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি-কার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মুহাম্মদ মিয়া (ডাব)। তবে নির্বাচনী প্রচারণায় জুনায়েদকে মাঠে দেখা না গেলেও শফি আহমদ চৌধুরী তৎপর ছিলেন। আদালতের নির্দেশনায় নির্বাচন স্থগিত হলে শফি আহমদ চৌধুরী ঢাকায় চলে যান। তবে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও হাবিবুর ও আতিকুর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে স্থানীয় একাধিক বাসিন্দা ও তাদের সমর্থকেরা নিশ্চিত করেছেন।
গত কয়েক দিন হাবিবুর ও আতিকুরের চলাফেরা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তারা বিভিন্ন জানাজায় অংশ নেওয়ার পাশাপাশি দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। এসব কর্মসূচিতে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অনেককে অংশ নিতে দেখা গেছে। গত সোমবারও তারা নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান সোমবার দক্ষিণ সুরমায় একটি জানাজায় অংশ নেন। বিকেলে তিনি একই উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নে প্রায় তিন হাজার পরিবারের মধ্যে মাস্ক বিতরণ করেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় একাধিক জানাজায় অংশ নিতে হচ্ছে। সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক বিতরণ করছি মানুষদের করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার স্বার্থেই। বিধিনিষেধে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ। তাই সভা-সমাবেশ করছি না, কেবল সামাজিক দায়িত্বগুলো পালন করছি।’
আওয়ামী লীগের প্রার্থী হাবিবুর রহমান সোমবার বিকেলে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মাইজগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন। আগস্ট মাস শুরু হওয়ার পর ধারাবাহিকভাবে তিনি এমন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন বলে তাঁর সমর্থকেরা জানিয়েছেন।
হাবিবুর বলেন, ‘আমি শোক দিবস উপলক্ষে কেবল দোয়া মাহফিলে অংশ নিচ্ছি। কোথাও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিইনি।’
মন্তব্য করুন