হাকালুকির হাওরখাল বিলে কোটি টা’কা’র মাছ লুট


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : নভেম্বর ২৬, ২০২৫, ১১:৩৮ অপরাহ্ন /
হাকালুকির হাওরখাল বিলে কোটি টা’কা’র মাছ লুট

বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:

বড়লেখা উপজেলার হাকালুকি হাওরের সর্ববৃহৎ সরকারি জলমহাল ‘হাওরখাল’ বিলে চলছে প্রকাশ্য মাছ লুটের মহোৎসব। নামমাত্র খাস কালেকশনের আড়ালে গত ১৭ দিনে কোটি টাকার মাছ লুটের অভিযোগ উঠেছে। বিল দখল ও মাছ লুট নিয়ে মঙ্গলবার বিলপাড়ে ত্রিমুখী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটায় এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। যে কোনো সময় বড় ধরনের সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

লিজ স্থগিত, এরপরই শুরু হয় লুট

জানা গেছে, হাকালুকি হাওরের প্রায় দুই হাজার একরজুড়ে বিস্তৃত গোটাউরা হাওরখাল গ্রুপ (বদ্দ) জলমহালটি ১৪৩১ বাংলা সনের ৩০ চৈত্র পর্যন্ত পূর্ববর্তী ইজারাদার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি প্রায় ৫ কোটি টাকায় তিন বছরের জন্য লিজ নেয়। পরবর্তী তিন বছরের জন্য প্রায় ৬ কোটি টাকায় আরেকটি সমিতি জলমহালটির ইজারা পায়। ঠিক ওই সময়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, একটি প্রভাবশালী মহল ‘সোনার বাংলা মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি’-কে ব্যবহার করে লিজের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট (১৫৬৬৪/২০২৪) দায়ের করে। রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট জলমহালের লিজ স্থগিত করেন। এতে জলমহালটি খাস কালেকশনে যায়।

খাস কালেকশনের নামেই চলছে বেপরোয়া লুট

অভিযোগ রয়েছে—খাস কালেকশনের দায়িত্বে থাকা তহসিলদার ও এসিল্যান্ডকে ম্যানেজ করে বর্তমান সময়ের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতারা বিলপাড়ে অস্থায়ী ঘাঁটি গড়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার মাছ লুট করছেন। গত ১৭ দিনে প্রায় ১ কোটি টাকার মাছ লুট হলেও সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে মাত্র ১৫–১৬ লাখ টাকা, এমন তথ্য দিয়েছেন একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র।

মঙ্গলবার প্রকাশ্যে মাছ লুটের প্রতিবাদে কয়েকশ মানুষ হাওরখাল বিলে জড়ো হলে উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। বিপরীত পক্ষের বাধার মুখে ত্রিমুখী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, লুট হওয়া মাছের ভাগবাটোয়ারা পৌরশহরের বিএনপির এক শীর্ষ নেতার বাড়িতেও হয়েছে।

স্থানীয়দের ক্ষোভ: “সরকারি জলমহাল কি এভাবেই লুট হবে?স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, গত ১৭ দিনে বিএনপি-জামায়াতের কয়েকজন নেতা মিলেই কোটি টাকার মাছ তুলে নিয়েছে। সরকার আসলে কত রাজস্ব পেয়েছে তা কেউ বলতে পারেন না। এভাবে সরকারের বিশাল একটি জলমহাল লুট হতে পারে না। তারা প্রশ্ন করেন—“প্রশাসন কি এদের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে?”

হাওর রক্ষায় সোচ্চার হওয়ার আহ্বান

এলাকাবাসী হাওরখাল বিলে অবিলম্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারি, লুটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা এবং জলমহালটির স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, হাকালুকি হাওর রক্ষায় বড়লেখার সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।