মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি প্রচলিত রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতি এড়িয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় কাজ করছে। অনিবার্য সমস্যার কারণ ছাড়া নির্বাচনকালীন সময় ব্যতীত কোনো আউটডোর মিছিল, জনসভা দলটি করবেনা। তথাকথিত কমিটি, গ্রুপিং, সিন্ডিকেট এড়িয়ে দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে দেশের সবাই “আমরা সবাই রাজা, রাজার রাজত্বে” এরকম যাতে মনে করে তারজন্য দলটি সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে আসছে। অতীতে যেসব দল ক্ষমতায় গিয়েছে, তারা তাদের দলের নেতা-কর্মী ও সমর্থক ব্যতীত বাকীদের তথা যারা ভোট দেয়নি তারাসহ পুরো দেশবাসীর সরকার হতে পারেনি। তাই দল, মত, ধর্ম নির্বিশেষে পুরো দেশবাসীর সরকার হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি এগিয়ে যাচ্ছে। বিস্তারিতভাবে যাচাই করলে বর্তমান দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই দলটি রাষ্ট্রকে আমূল বদলে দিতে পারবে – এ বিষয়টি সকলের কাছে পরিষ্কার হয়ে উঠবে। দলটি নিজেকে সাময়িক দল হিসেবে পরিচয় দিয়ে দেশের সব দল ও জনগণকে সাময়িক সময়ের জন্য নিজের দলের বলে মনে করে আসছে। নির্বাচনে নিরংকুশ জেতার সম্ভাবনা দেখা দিলে তখন প্রথম ও শেষ বারের মতো দলটি একবারই নির্বাচনে যাবে। জনগণের ভোটে জিতে এক টার্ম ক্ষমতায় থেকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহ-অবস্থান নিশ্চিতসহ প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নত দেশে রূপান্তরের টেকসই রাস্তায় উঠিয়ে পরবর্তী নির্বাচনে দলটির পক্ষ থেকে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াবেনা। যেহেতু এটি একটি সাময়িক দল সেহেতু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার প্রয়োজন বোধ করছেনা। নৌকা ও ধানের শীষ ব্যতীত নিবন্ধিত যেকোনো দলের প্রতীক নিয়ে দলটি নির্বাচনে যাবে।
উন্নত দেশে পরিণত হতে চাইলে সর্বজনীন ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। একজনের মতাদর্শ অন্য জনের উপর চাপিয়ে দিয়ে ঐক্য গড়তে চাইলে ঐক্য হবেনা। তাই ঐক্য নিশ্চিত করার জন্য সকল মত পার্থক্য অক্ষুণ্ণ রেখে সর্বজনীন বিষয়ে ঐক্যের চেষ্টা চালিয়ে আসছে দলটি। ঐক্য গড়তে হলে দেশপ্রেম ও জনসমর্থন আছে-এরকম কাউকে মাইনাস করার চিন্তা বাদ দিয়ে সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে আনতে হবে। পরিবেশের কারণে অতীতে অপরাধ কিংবা ভুল কেউ করে থাকলে এবং ভবিষ্যতে আর করবেনা এরকম প্রতিশ্রুতি পেলে এবং যেহেতু ঐক্য পার্টির সিস্টেমে অপরাধ কেউ করতে পারবেনা, করলেও দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে তাই পূর্বে ভুল কিংবা অপরাধ করা ব্যক্তিদেরকেও ঐক্য পার্টিতে শামিল করাতে আপত্তি নেই।
দেশের নাজুক অবস্থার জন্য প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে আমি, আপনি তথা পুরো দেশবাসী বেশ আর কম দায়ী। “অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা তারে যেনো তৃণ সমদহে।” ২৪ এর গণঅভ্যূত্থানে শিক্ষার্থীদের অন্যায়ের সাথে আপোষ না করার দৃঢ় নেতৃত্বের কারণেই মূলত শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। বৃহৎ ও জনপ্রিয় দল বিএনপি নেতৃত্বে ব্যর্থতার পরিচয় না দিলে এই পতন অনেক আগেই হতো। তারমানে পরোক্ষভাবে অন্যায় মেনে নেওয়া ও ব্যর্থতার কারণেই ফ্যাসিবাদ প্রবলভাবে শিকড় গেড়ে বসে। তাছাড়া শেখ হাসিনার পূর্বে যারা ক্ষমতায় ছিলো, তারা কি দুর্নীতিমুক্ত ও স্বচ্ছতার সহিত দেশ চালিয়েছিল? দেশ একাধিকবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন কি হয়নি? তাই দোষ ধরতে গেলে দোষ থেকে আমরা কেউ বাঁচতে পারবোনা। কম্বলের লোম বাঁচতে থাকলে একসময় যেরকম কম্বলের অস্তিত্ব থাকবেনা ঠিক একইভাবে দোষ ধরে শাস্তি দিতে গেলে শাস্তি থেকে আমরা কেউ বাদ যাবোনা। ড. ইউনূস এর নেতৃত্বে সরকার গঠন হওয়ার পর এই ৯ মাসে কোনো অপরাধ কি হয়নি? ড. ইউনূসকে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখে লিখিতভাবে আমরা সতর্ক করেছিলাম, “দেশের সব শান্তিকামী ও নিরীহ মানুষ প্রত্যাশানুযায়ী শান্তির পরিবেশ প্রত্যক্ষ করছেনা। যারা, যে এজেন্ডার প্রেক্ষিতে ক্ষমতায় যায়-তারা সেসব এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে। তাদের এজেন্ডা অনুযায়ী অতীত ঘটনার বিচার করে, সেটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নেই, বিরোধিতাও নেই। তবে বর্তমানে যেসব দুর্নীতি, খুন-খারাবি, দখল, অনিয়ম চলছে সেসব কারেন্ট বিষয়গুলো শক্তহাতে দমন না করে পাল্টা অনিয়ম, দুর্নীতি কিংবা ফ্যাসিবাদ সচেতনভাবে কিংবা অবচেতনভাবে বর্তমান সরকারের দ্বারা আবার প্রতিষ্ঠিত হোক-তা আমরা চাইনা।” কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে সরকারের কিছু অংশ আমাদের উক্ত সতর্কবার্তায় সতর্ক না হয়ে উল্টো নিজেরাও দুর্নীতি করছে। উপদেষ্টাদের সম্পত্তির হিসাব দেওয়ার জন্য ৪ নভেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ তারিখে লিখিতভাবে আমরা দাবি জানালেও তারা এখনও হিসাব দেয়নি।
উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ১২ জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দ তারিখে তাঁর ফেইসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন “যদি ক্ষমতা থাকতো আইন করতামঃ বর্তমান বা সাবেক প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীগণ চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে পারবেন না। তাদেরকে মহামান্য ও মাননীয় বলা নিষিদ্ধ হবে। তাদের ও তাদের পরিবারের দেশে-বিদেশে সকল সম্পত্তি ও আয়ের বিবরণ জনগণকে জানাতে হবে। দুদকের একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন ইউনিট শুধুমাত্র তাদের বিষয়ে নজর রাখবে। অন্যান্য ক্ষেত্রেও আরো বহু কিছু করতাম। যারা লুটেরা, চোর আর সন্ত্রাসী – তাদের জীবন নরক বানিয়ে ছাড়তাম।” কিন্তু এখন সেসবের পক্ষে একটা কথাও কি তিনি বলছেন? এটা মোনাফেকির লক্ষণ নয় কি? এরকম মোনাফেকি ৫৪ বছর ধরে প্রায় সব রাজনৈতিক দল করে আসছে। এসব মোনাফেকি আর চলতে দেয়া যায়না। দেশের রাজনীতি মোনাফেকিমুক্ত না হলে কখনো কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন সম্ভব হবেনা।
ঐক্য পার্টি দেশের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন চায়। কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের অন্তরায় অনিয়ম ও দুর্নীতি। তাতে জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে, নিজের সন্তান কিংবা পিতা হলেও ছাড় দেয়া যাবেনা। তবেই কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির নেতৃত্বে কিংবা অন্য যেকোনো দল বা ব্যক্তির নেতৃত্বে, সে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান যেই হোক না কেনো, আপত্তি নেই -কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নই ঐক্য পার্টি’র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। ড. আসিফ নজরুল তাঁর ভুলভ্রান্তি সংশোধন করে ড. ইউনুসের নেতৃত্বে উপদেষ্টা হওয়ার আগেকার স্বপ্ন ও কথামালার আলোকে কাজ না করলে তাঁকে উপদেষ্টার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া জরুরি। উল্লেখ্য যে, আসিফ নজরুল আইন উপদেষ্টা এবং তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীন একই মামলায় তাঁকে তোয়াজ করেছে বলে শফিক রেহমানকে জেলে যেতে হয়নি অন্যদিকে তোয়াজ না করার কারণে মাহমুদুর রহমানকে জেলে যেতে হয়েছিল। তোষামোদিত হওয়ার ইচ্ছাটা কি নৈতিকতা বিবর্জিত নয়? কেউ যোগাযোগ না করলেও খবর পেলে তাঁর প্রাপ্য তাঁকে বুঝিয়ে দিতে না পারাটাও সরকারের ব্যর্থতা। আদালতে চলমান মামলার বিষয়ে কোনো বিচারককে আসিফ নজরুলের ফোন করাটাও বিচারকার্যে হস্তক্ষেপ বলে গণ্য। তবে বিচারক অনিয়ম করলে তখন বিচারককে শাস্তি দিতে আসিফ নজরুলকে আইন উপদেষ্টা হিসেবে এগিয়ে আসতে হবে। নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্যে প্রত্যেককে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার পরিবেশসহ চরমভাবে সৎ, সাহসী ও যোগ্যদের মাধ্যমে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা গেলে প্রিয় মাতৃভূমিকে উন্নত দেশে রূপান্তরের টেকসই রাস্তায় উঠাতে বেশী সময় লাগবেনা।
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি যেমন বাংলাদেশ দেখতে চায়, সেরকম বাংলাদেশ বিনির্মাণে কোনো ব্যক্তি বা দল এগিয়ে আসলে ঐক্য পার্টির কার্যক্রম স্থগিত করে দিয়ে দলটির সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই রাজনীতি ছেড়ে স্ব স্ব কাজে চলে যেতে প্রস্তুত। বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলা দেশের স্বার্থে বাস্তবায়নের জন্য ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারসহ পুরো দেশবাসীকে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
দেশীয় ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের প্রবক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি।
আপনার মতামত লিখুন :