ডেস্ক রিপোর্ট। দি সিলেট পোস্ট।
থাইরয়েড হলো গলার দুই পাশে থাকা একটি বিশেষ গ্রন্থি। এই গ্রন্থির কাজ হল- আমাদের শরীরের কিছু অত্যাবশ্যকীয় হরমোন (থাইরয়েড হরমোন) উৎপাদন করা। শরীরের জন্য এ থাইরয়েড হরমোনের একটি নির্দিষ্ট মাত্রা আছে। নির্দিষ্ট মাত্রার থেকে কম বা বেশি হরমোন উৎপাদিত হলেই শরীরের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে।
থাইরয়েড হরমোন কম উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপোথাইরয়েডিসম এবং বেশি উৎপন্ন হলে বলা হয় হাইপারথাইরয়েডিসম। থাইরয়েড হলে শরীরে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। আপনার শরীরে যদি এসব লক্ষণের কোনোটা দেখতে পান, তবে বুঝবেন থাইরয়েড সমস্যায় ভুগছেন।
থাইরয়েড হরমোনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে স্নায়ুর পরিপক্বতা। এজন্য গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের স্বল্পতায় গর্ভের বাচ্চা বুদ্ধিদীপ্ত হয় না। যেসব উদ্দীপনায় বিপাক ক্রিয়া বেড়ে যায় যেমন-যৌবনপ্রাপ্তি, গর্ভাবস্থা, শরীরবৃত্তীয় কোনো চাপ-ইত্যাদি কারণে থাইরয়েড গ্লান্ডের আকারগত বা কার্যকারিতায় পরিবর্তন হতে পারে।
এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হরমোন ও ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ
ডা. শাহজাদা সেলিম।
থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে মূলত দুধরনের সমস্যা দেখা যায়-গঠনগত ও কার্যগত। এটা বিভিন্ন উপায়ে প্রকাশ পেতে পারে। গঠনগত সমস্যায় থাইরয়েড গ্রন্থি ফুলে যায় যেটাকে গয়টার বা গলগণ্ড বলা হয়; এছাড়া থাইরয়েড গ্লান্ডে গোটা বা নডিউল এবং ক্যান্সার হতে পারে।
কার্যগত সমস্যা দুই রকমের হয়ে থাকে, যা হলো থাইরয়েড গ্লান্ডের অতিরিক্ত কার্যকারিতা বা হাইপারথায়রয়েডিজম এবং কার্যকারিতা হ্রাস বা হাইপোথায়রয়েডিজম। এছাড়া থাইরয়েড গ্লান্ডের প্রদাহ বা থাইরয়ডাইটিস হতে পারে। হাইপারথাইরয়ডিজম রোগে থাইরয়েড গ্লান্ড বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে পড়ে। থাইরয়েড গ্লান্ডের অতিরিক্ত কার্যকারিতার ফলে প্রচণ্ড গরম লাগা, হাত পা ঘামা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, খাওয়ার রুচি স্বাভাবিক বা বেড়ে যাওয়ার পরও ওজন কমে যাওয়া, ঘন ঘন পায়খানা হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হাইপোথায়রয়ডিজমের লক্ষণ : অবসাদগ্রস্ত হওয়া, ত্বক খসখসে হয়ে যায়, ক্ষুধা মন্দা, চুল পড়া। ওজন বেড়ে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, শীত শীত ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, রক্তচাপ বাড়া, মাসিকের সমস্যা ইত্যাদি। বন্ধ্যত্ব সমস্যা হতে পারে। গর্ভধারণকালে গর্ভপাত হতে পারে। কনজেনিটাল হাইপোথাইরয়ডিজমে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ হয় না।
থাইরয়েড ক্যান্সার : থাইরয়েড গ্রন্থির কোনো অংশের কোষসংখ্যা অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেলে তাকে থায়রয়েড ক্যান্সার বলে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে থাইরয়েড গ্রন্থি বা এর অংশবিশেষ ফুলে ওঠা মানেই ক্যান্সার নয়। থাইরয়েড ক্যান্সারে যে লক্ষণগুলো দেখা দিতে পারে : গলার সম্মুখভাগে ফুলে ওঠা। ফোলা অংশটি বেশ শক্ত হয়। একটি বা একাধিক টিউমার হতে পারে। উভয় পাশে টিউমার হতে পারে, আশপাশের লিঙ্ক নোডগুলো ফুলে উঠতে পারে। ওজন কমে যায়।
খাওয়ার রুচি কমে যেতে পারে। গলার স্বর মোটা বা ফ্যাসফেসে হতে পারে। তবে থাইরয়েড নোডিউল বা ক্যান্সার ছাড়াও গলার সামনে ফুলে উঠতে পারে। শ্বাসনালির ওপর চাপ সৃষ্টির ফলে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। ক্যান্সার শনাক্ত হলে বা ক্যান্সার আছে এমন সন্দেহ হলে অতিদ্রুত নাক, কান ও গলা বিশেষজ্ঞ বা থাইরয়েড অপারেশনে পারদর্শী কোনো সার্জনের কাছে যেতে হবে।
কী খাবেন
সবুজ শাকসবজি
সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিনের খাবার রেসিপিতে সবুজ শাকসবজি রাখুন। সবুজ শাকসবজিতে রয়েছে ভিটামিন ও ক্লোরোফিলের মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এই দুটি উপাদান শরীরের কার্যকারিতা বাড়ায় ও শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিয়ে থাইরয়েডের কার্যক্রম ধরে রাখে। এছাড়া থাইরয়েডের দুর্বলভাব দূরে করে শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
সামুদ্রিক সবজি
আয়োডিন সমৃদ্ধ সামুদ্রিক সবজিতে রয়েছে প্রাকৃতিক খনিজ উপাদান। এসব সবজি থায়রয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়ানো, শরীরে থাইরক্সিন অত্যাবশ্যক এবং এটা গঠনে আয়োডিন সাহায্য করে।
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার
দেহ সুস্থ রাখতে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের জুড়ি নেই। থায়রয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়াতে দই খাওয়া যেতে পারে। দইয়ে আছে আয়োডিন এবং প্রোবায়োটিক যা থাইরয়েডের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে রাখে। এছাড়া ডিম, জিংক থাইরয়েডের কার্যকারিতার ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
থায়রয়েড সুস্থ রাখতে যেসব খাবার খাবেন না
কিছু খাবার রয়েছে যা কখনোই খাবেন না। এসব খাবার এড়িয়ে চলছে ভালো থাকবে আপনার থায়রয়েড। গ্লুটেইন , শষ্য-জাতীয় খাবার যা আঁশ সমৃদ্ধ, চিনি ও কড়া ভাজা খাবার ও সয়া-ধর্মী খাবার একদমই খাবেন না।
কখন চিকিৎসা প্রয়োজন
থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি যা সাধারণত আয়োডিনের অভাব থেকে হয়। থাইরয়েড হরমোনে অতিরিক্ত নিঃসরণের ফলে গ্রন্থির আকার বৃদ্ধি পায়। থাইরয়েড গ্রন্থির টিউমার ও ক্যান্সার।
মন্তব্য করুন