নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে॥
বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময় থেকেই গ্রাম বাংলার মাঠে মাঠে উত্তরের মৃদু বাতাসে সোনালী ধান দুলছে। উত্তরের বাতাসে পাঁকা ধানের সুমিষ্ঠ ঘ্রাণে মুখরিত হওয়ায় মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায় কৃষকের মাঠ ভরা সোনালী ধান বলে দেয় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য নবান্ন এসেছে, পাড়া-পড়শী, আত্বীয়-স্বজনকে নিয়ে এ এক ব্যতিক্রম কৃষকের উৎসব। নতুন ধানের চাল তৈরি করে নানান পিঠা- পুলি খাওয়ার উৎসবের অন্য রকম এক আনুষ্ঠানিকতার বার্তা বইছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার রোপা আমনের ফলন ভালো হয়েছে। অগ্রাহণের শুরুর দিক থেকেই কৃষকের জমিতে উৎপাদিত রোপা আমন সোনালী রঙে সাজতে থাকে এবং মাঝামাঝি পথে এসে রোপা আমনের খেতে সোনালী নবান্নের বার্তা বইছে। কৃষকের জমির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে এক সুমিষ্ট ঘ্রাণে মন-প্রাণ জুড়িয়ে যায়।সোনালী পাঁকা ধানের মিষ্টি ঘ্রাণেও মন ভরে যায়। মাঠের পর মাঠ পাকা ধানের মৌ-মৌ গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। দেশের খাদ্যে স্বয়নসম্পূর্ণ উদ্বৃত্ব কয়েকটি জেলার মধ্যে অনত্যম হবিগঞ্জ জেলা কেউ কাটছেন, কেউ আঁটি বাঁধছেন। কেউ কেউ ভাড় করা ধান নিয়ে যাচ্ছেন বাড়ির উঠোনে। দম ফেলার ফুরসত নেই কারও। মহাব্যস্ততায় দিন কাটছে কৃষকদের। এবার হবিগঞ্জ জেলায় কৃষকরা হাড়ভাঙা খাটুনির পর আমন ধানে ফলন ভালো পেয়েছেন হবিগঞ্জ জেলার সাধারণ কৃষকেরা। এখন সোনালী ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। হবিগঞ্জ জেলার গ্রামগুলোতে বিভিন্ন ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সোনালী রঙা পাকা ধানে ভরে গেছে মাঠ। হবিগঞ্জ জেলায় এখন সোনালী ধান ঘরে তোলার পালা জেলার গ্রামগুলিতে ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, সোনালী রঙা পাকা ধানে মাঠ ভরে গেছে। সেই ধান কেটে কৃষি শ্রমিকরা কাদে করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাড়ি নেওয়ার জন্য। দেখা যায় যাদের বাড়ি মাঠের কাছেই, তারা ধান কেটে মুঠি (গোছা) বেঁধে বাঁশের লাঠিতে ঝুলিয়ে কাঁধে করেই বাড়িতে ধান নিয়ে যাচ্ছেন। এবং যাদের বাড়ি ফসলি মাঠ থেকে দূরে তারা ভ্যান অথবা ঠেলা গাড়ী দিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। চলতি মৌসুমে হবিগঞ্জ জেলা ও সদর উপজেলার, লুকড়া, রিচি, তেঘরিয়া পইল, গোপায়া, রাজিউড়া, নিজামপুর, লস্করপুর এলাকাসহ জেলার বাকি উপজেলাগুলোতে আমন ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। কুয়াশার চাদর ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে সকালের সোনারোদ। হেমন্তের মৃদু বাতাসে দোল খাচ্ছে মাঠ ভরা সোনালী আমন ধান। সেই ধান কাটা হচ্ছে এখন। কৃষি বিভাগ তথ্য মতে জানা যায়, জেলায় এ বছর আমন ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
হবিগঞ্জ সদর উপজেলার বাদগুড়ি গ্রামের কৃষক কাশেম হোসেন বলেন, দুই বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ফলন ভালো হয়েছে। প্রথমে ইউরিয়া সারের সমস্যা থাকলেও পরে তা ঠিক হয়। তবে তেলের দাম বাড়ায় ভবিষ্যতে ধান চাষে লোকশানের আশঙ্কা করছি। ধানের ন্যায্য মূল্য যদি আমরা পাই, তাহলে আমরা লাভবান হবো বলে আশা করছি। একই এলাকার কৃষক বজরু মিয়া বলেন, আমন মৌসুমে ধানের দাম ভালো হয়েছে। তবে ধান পাকার সময় দুইবার পানির সেচ দেওয়া দরকার ছিল, কিন্তু তেলের দাম বাড়ায় সেচ দিতে পারিনি। তেলের দাম যদি সরকার না কমায়, আমরা কীভাবে ধান চাষ করব, আগামীতে ধান চাষ অল্প পরিমাণে করব। এখন মাঠের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলছেন কৃষকেরা। ফলে গ্রামাঞ্চলে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। তবে কৃষকেরা বলছেন, ধানের উৎপাদন ভালো হলেও ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। রোগ, পোকা মাকড়ের আক্রমণ কম থাকার পাশাপাশি আবহাওয়াও ছিল অনুকূলে। এরই মধ্যে মাঠে মাঠে চলছে ধান কাটার উৎসব। কৃষকেরা আমন ধান নিবিঘেœ ঘরে তুলছেন। আশা করছি, তারা ধানের ন্যায্য মূল্য পাবেন।
মন্তব্য করুন