হবিগঞ্জে মসজিদের ভেতরে ছুরিকাঘাতে মুসল্লি খুন


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : নভেম্বর ৯, ২০২৫, ১২:৫৩ পূর্বাহ্ন /
হবিগঞ্জে মসজিদের ভেতরে ছুরিকাঘাতে মুসল্লি খুন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
হবিগঞ্জের  নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাঁও নতুন জামে মসজিদের ভিতরে ছুরিকাঘাতে ইমরুল মিয়া (৪০) নামে এক মুসল্লি নিহত হয়েছেন। মসজিদের পবিত্র স্থানে সংঘটিত এই হত্যাকাণ্ডে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ঘটনার পেছনে রয়েছে পূর্বের আরেকটি হত্যাকাণ্ডের জটিল যোগসূত্র। শুক্রবার (৭ নভেম্বর) জুমার নামাজ শেষে মসজিদের ভেতর এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহত ইমরুল মিয়া নবীগঞ্জের আউশকান্দি ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামের সুনাহর মিয়ার ছেলে। পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নিহত ইমরুল মিয়া দীর্ঘদিন ধরে দুবাই প্রবাসী ছিলেন। প্রায় এক বছর আগে একমাত্র শিশু পুত্র রায়হান মিয়া (২)-এর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে দেশে ফেরেন তিনি। দেশে ফিরে ছেলের চিকিৎসা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছিলেন। পরবর্তীতে রায়হানের ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং শিশুটি এক চোখ হারায়। ইমরুলের প্রবাসে উপার্জিত প্রায় সমস্ত অর্থ ব্যয় করেন সন্তানের চিকিৎসায়।
এদিকে, গত ২২ আগস্ট বনগাঁও ও পিঠুয়া গ্রামের মধ্যবর্তী হাসানখালি এলাকার একটি কালভার্টের নিচ থেকে জাবেদ মিয়া নামে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত জাবেদ ছিলেন ওই এলাকার আতিক মিয়ার ছেলে। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।
পরবর্তীতে ১৬ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব যাওয়ার উদ্দেশ্যে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে নবীগঞ্জ থানায় গেলে, জাবেদ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে পুলিশ ইমরুল মিয়াকে আটক করে। প্রায় দেড় মাস কারাভোগের পর ২ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি। তবে এ ঘটনায় নিহত জাবেদের পরিবারের সদস্যরা ক্ষুব্ধ ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানান।
শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় জাবেদের ভাই রুশেল মিয়াসহ কয়েকজন হঠাৎ ইমরুল মিয়ার ওপর ছুরিকাঘাত করেন। এসময় ইমরুল গুরুতর আহত হয়ে মসজিদের মেঝেতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয় মুসল্লিরা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
নিহতের ভাই নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, “আমার ভাই ইমরুল নিরপরাধ। সে দেশে ফিরে শুধু ছেলের চিকিৎসা নিয়েই ব্যস্ত ছিল। যদি সে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকতো, তাহলে থানায় গিয়ে পুলিশ ক্লিয়ারেন্স নিতে যেতো না। কোনো প্রমাণ ছাড়াই প্রতিপক্ষের আক্রোশের কারণে ইমরুলকে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেফতার করে পুলিশ সমাজের কাছে তাকে খুনি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। জামিনে বের হয়ে আসার পর শুক্রবার এই ক্ষোভ থেকেই পরিকল্পিতভাবে মসজিদের ভিতরে তাকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এ হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।”
নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছি। ইতোমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। অভিযুক্তকে গ্রেফতারের জন্য অভিযান চলছে।”
এদিকে মসজিদের ভেতর এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডে বনগাঁও ও আশপাশের গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে, তবে পরিস্থিতি বর্তমানে পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।