নুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
নানা সমস্যায় জর্জরিত হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল। ফলে বিভিন্ন সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। জেলা সদরের একমাত্র হাসপাতালের এসব সংকটের কারণে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। চিকিৎসক-জনবল সংকটের পাশাপাশি অভ্যন্তরিন নানা সমস্যা রয়েছে। হাসপাতালের দুইটি লিফটের মধ্যে এক মাস ধরে একটি বিকল হয়ে আছে। এসি ক্যাবিনগুলোতে নেই বিদ্যুৎ। এ ভাবেই জোড়াতালি দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথা ব্যথা নেই। প্রতিদিন গ্রামগঞ্জ থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে শত শত রোগীরা। কিন্তু হাসপাতালে এসে মিলে না চিকিৎসা। মিলে না ওষুধ।
জানা যায়, ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে ওষুধেরও তীব্র সংকট চলছে। সরকারিভাবে সরবরাহকৃত ওষুধগুলো হাসপাতালে না পেয়ে বাইর থেকে কিনে খেতে হচ্ছে রোগীদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, ওষুধ সংকট সহসাই কাটছে না। কারণ কেন্দ্রীয়ভাবে ওষুধের সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তা রোগীদের দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে বর্তমানে ৫৭টি চিকিৎসক ও কর্মকর্তার পদ রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সেখানে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২৭ জন। কাগজে কলমে ২৭ জন হলে প্রকৃত সংখ্যা আরও কম। এর মধ্যে কয়েকজন চিকিৎসক ছুটিতে থাকলেও এক চিকিৎসক দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। হাসপাতালটিতে বর্তমানে সিনিয়র কনসালট্যান্ট গাইনি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইএনটি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট ইউরোলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট নেফরোলজি পদে ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারি ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট অর্থো সার্জারি ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট শিশু ১ জন, সিনিয়র কনসালট্যান্ট চর্ম ও যৌন পদে ১ জনের পদ খালি রয়েছে।
এ ছাড়াও জুনিয়র সিনিয়র কনসালট্যান্ট চক্ষু, রেডিওলজিস্ট, অর্থো সার্জারি, শিশু, প্যাথলজি, মেডিসিন, গাইনি, কার্ডিওলজি, মানসিক, গ্যাস্ট্রোলজি পদে ১টি করে পদ খালি রয়েছে। অ্যানেসথেটিস্ট পদে ৪টির মধ্যে ১টি খালি রয়েছে, মেডিকেল অফিসার প্যাথলজিস্ট পদে ২টি, রেজিস্ট্রার ১টি, মেডিকেল অফিসার রক্ত ১টি ও মেডিকেল অফিসার ১৪টির মধ্যে ৫টি পদ খালি রয়েছে।
হাসপাতালে ঘুরে দেখা যায়- চিকিৎসক সংকটের কারণে অনেক রোগীই ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না। অনেক রোগী চিকিৎসকের সেবা না পেয়ে প্রাইভেট ক্লিনিকেও চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কথা হয় শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি নুছরাত আক্তার নামে এক অভিভাবকের সঙ্গে। তিনি জানান, প্রতিদিন একবার একজন চিকিৎসক এতে তাঁর শিশুকে দেখে যান। কিন্তু পরবর্তী সময়ে চিকিৎসকের প্রয়োজন হলে আর দেখা মেলে না।
হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আমিনুল হক সরকার বলেন, জেলা সদর হাসপাতাল হওয়ায় এখানে রোগীর চাপ অনেক বেশি। তবে তারা আন্তরিকভাবে যতটুকু সম্ভব সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। হাসপাতালে ওষুধের সংকটের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে হাসপাতালে ওষুধ না আসায় তা রোগীদের মধ্যে দেওয়া যাচ্ছে না।
আপনার মতামত লিখুন :