নুরুজ্জামান ফারুকী, হবিগঞ্জ থেকে
হবিগঞ্জের হাওরে ধানকাটা শ্রমিকের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে পাকা ধান এখন কাটতে পারছেন না অনেক কৃষক। এমতাবস্থায় অতিবৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টির আশঙ্কায় দিন কাটছে হাওর পারের কৃষকদের।
কৃষকরা জানান- এবার চৈত্র মাসে হাওরে বৃষ্টি হয়নি। যে কারণে বৈশাখ মাসে অতিবৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই আগে রোপনকৃত পাকা ধান কাটতে তোরজোর চালাচ্ছেন তারা। তবে শ্রমিক সংকটের কারণে তা ব্যহত হচ্ছে। ফলে সময় মতো কৃষকের স্বপ্নের ধান গোলায় তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে দুশ্চিন্তা। তারা বলছেন- বৈশাখ মাস শুরু হয়ে গেলেও জেলার বাহির থেকে এখনও শ্রমিক আসা শুরু করেনি। যে কারণে অল্প সংখ্যক দেশীয় শ্রমিক দিয়ে চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। এছাড়াও নামে মাত্র যেসকল দেশীয় শ্রমিক ধান কাটছেন তারাও মুজুরি নিচ্ছেন বেশি।
হবিগঞ্জ জেলা একটি হাওর-বাওর বেষ্টিত জেলা। এ জেলার বেশিরভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত। কৃষি কাজের উপরই নির্ভর করে তাদের জীবন জীবিকা। তাইতো বৈশাখ মাস শুরু হলেই ধুম পড়ে ধান কাটার। উৎসবের মতো কৃষকরা গোলায় ভরে ধান। হবিগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে- এবার জেলার ৯টি উপজেলায় শতাধিক হাওরে ১ লাখ ২৩ হাজার ৮৮৪ হেক্টর জমিতে ৩ ধরনের বোরো ধান আবাদ হয়েছে। তার মধ্যে ৫০ হাজার ৮৮৫ হেক্টর হাইব্রিড, উফসী জাতের ৭২ হাজার ৮০১ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান আবাদ হয় ৫০ হেক্টর জমিতে। হাইব্রিড জাতে হেক্টরপ্রতি ৪ দশমিক ৬৮ টন, উৎসীতে ৬ দশমিক ৯৩ টন ও স্থানীয় জাতের ধান থেকে প্রতি হেক্টর থেকে ১ দশমিক ৯ টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। সে অনুযায়ী বোরো থেকে হবিগঞ্জে ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩৪৯ টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধানের হিসাবে গেলে তা বেড়ে দাঁড়াবে ৭ লাখ ৮৬ হাজার ৫১৮ টনে।
শ্রমিক সংকট নিয়ে বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের লাদেন চৌধুরী বলেন- হাওরে ধান পেকে গেছে। কিন্তু স্থানীয় শ্রমিককের জন্য গত তিন দিন যাবত ঘুরছি পাচ্ছি না। শ্রমিকের সংখ্যা কম হওয়ায় তাদের চাহিদা যেমন বেশি আবার সময় মতো তাদেরকে পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে ঝড় বা শিলাবৃষ্টি হলে পাকা ধানের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুর গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান বলেন- স্থানীয় শ্রমিক দিয়ে হাওরের সকল ধান কাটা সম্ভব না। জেলার বাহির থেকে শ্রমিক না আসলে এই সংকট কাটবে না। বৈশাখের শুরুতে জেলার বাহির থেকে কিছু কিছু শ্রমিক এসেছে তবে তা যথেষ্ট নয়। লাখাই উপজেলার স্বজন গ্রামের বাসিন্দা সুশীল দাস বলেন- এরই মধ্যে আমার অন্তত ৫ ক্ষের জমির ধান পেকে গেছে। শ্রমিক না পাওয়ায় কাটাতে পারছি না। তিনি বলেন- পাকা ধান বেশিদিন জমিতে থাকলে ঝড়ে যাবে। তাই আমি দেশী শ্রমিকদের খুঁজতেছি।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আক্তারুজ্জামান বলেন- এখনও পুরোপুরি ধান কাটা শুরু হয়নি। হাওরে যেসকল ধান পেকেছে তা স্থানীয় শ্রমিকরা কাটছেন। একই সাথে হারভেস্টার মেশিন দিয়েও ধান কাটা হচ্ছে। তিনি বলেন- আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই জেলার বাইরে থেকে শ্রমিক আসা শুরু করবে। তারা আসলেই শ্রমিক সংকট কেটে যাবে।
আপনার মতামত লিখুন :