চৌধুরী শামসুল আরেফীন
একজন মহানায়কের অপেক্ষায় তৃষিত সকাল দুপুর সন্ধ্যা,
চৈত্রের খরস্রোতা দুপুর হতে বিকেল অবধি
জনস্রোতের উত্তাল তরঙ্গ ভেঙ্গে পড়ে সোহরোওয়ার্দি উদ্যানে।
অপেক্ষার প্রতিটা প্রহর যেন ব্যাথার উত্তপ্ত শিখা
তর সইছে না কারো,
কখন যে নায়কোচিত কন্ঠে ঝংকৃত হবে নির্দেশনার জাদুমন্ত্র।
যখন গগনে সূর্য রক্তিম বর্ণ ধারনের প্রস্তুতি নিচ্ছে-
বসন্ত বাতাস সারা উদ্যানে প্রশান্তির মিঠেল ছোঁয়া দিচ্ছে-
আর আশার দ্যুতি ক্রমশো প্রসারিত হচ্ছে-
ঠিক তখনই শৈল্পিক আবেশে উপস্থিত হন মহানায়ক।
মুহুর্তেই জনস্রোত জনসমুদ্রে রুপ নেয়-
প্রত্যাশা বাগে অঙ্কুরিত হয় নতুন কুঁড়ি,
কি হতে পারে, কি হবে, সেই উৎকন্টা জনে জনে।
শহর থেকে কুঁড়েঘর, ভালোবাসায় সিক্ত মহানায়ক
জাতিকে নতুন কিছু উপহার দিতে যাচ্ছেন।
কিন্তু কি দেবেন-
আবেগি কোন তুচ্ছ আশার কাব্য,
নাকি হতাশার ধুলোয় আচ্ছাদিত কোন গান,
নাকি ধৈর্যের নমনীয় ছোটগল্প,
নাকি উচ্ছাস উল্লাসের কোন উপন্যাস?
ললাটে ভাঁজের রেখার উপর তর্জনি তুলে, বিষাদ কালিমা ভুলে,
চরম সাহসিকতায় বুকটান করে দাঁড়িয়ে,
মনোজগতে নি:সরিত আকাংখায় নজর দিয়ে,
প্রতীক্ষার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়ে,
মহানায়ক আবৃত্তি করেন স্বাধীনতার মহাকাব্য।
তখনই স্বাধীনতার স্বপ্ন আসে চোখে,
স্বাধীনতা বাসা বাঁধে বুকে,
স্বাধীনতার তরঙ্গ দোল দেয় রক্তে।
মহাকাব্যের প্রতিটি চরণ বহ্নিশিখা হয়ে ছড়িয়ে পড়ে ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে।
বাংলার প্রতিটি গ্রামে-গঞ্জে, পথে-প্রান্তরে, হাটে ঘাটে মাঠে, শহরে বন্দরে, পাড়ায় মহল্লায় উচ্চারিত হতে থাকে কাব্য নির্যাস-
“জয় বাংলা- জয় বাংলা”
“বীর বাঙ্গালী অস্ত্র ধরো
বাংলাদেশ স্বাধীন করো”
“তোমার আমার ঠিকানা
পদ্মা মেঘনা যমুনা”।
মহাকাব্যের অনুসৃত রথে
এক সাগর রক্তের কালিতে-
আমরা বিশ্বের বুকে খোদাই করি স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্র।
কাব্যগ্রন্থ- প্রদীপ্ত যৌবন অতৃপ্ত মন
পৃষ্ঠা- ২০-২১
মন্তব্য করুন