নূরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ থেকে॥
হবিগঞ্জ জেলার আলোচিত ভূয়া কবিরাজ মোঃ আহাদুর রহমান আহাদ মোল্লা (৩৫) কে অবশেষে র্যাব-৯ ইমাম বাড়ি বাজারের আস্থানা থেকে আটক করেছে। আটক করার পর বহু অপকর্ম র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫ টায় শায়েস্তাগঞ্জ র্যাব-৯ অফিসে লেঃ কমান্ডার মোঃ নাহিদ হাসান তথ্য সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
তিনি জানান, বানিয়াচং উপজেলার কুশা কাগাউড়া গ্রামের ছুল্লুক মিয়ার পুত্র মোল্লা আহাদ ১৯৮৮ সালে জন্ম গ্রহন করে এবং ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত লেখা পড়া করে। এক সময় সে বিভিন্ন হোটেলে বয়ের চাকরি করে সংসার চালাতো। বিভিন্ন ইউটিউবে ভিডিও দেখে জিনের বাদশা ও ভন্ড কবিরাজ সেজে যায়। তাকে সহযোগিতা করে ইমাম বাড়ি বাজারের আরেক ভন্ড কবিরাজ শাহ নাছির চৌধুরী ওরফে জিন মোল্লা বিলাশ বহুল আস্থানা তৈরী করে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা বিভিন্ন যানবাহনে এবং মিডিয়ায় চটকদারী বিজ্ঞাপন দিয়ে সোর্সের মাধ্যমে মক্কেলদের ধরে এনে প্রেম ভালবাসা, স্বামী স্ত্রী অমিল, মামলা মোকদ্দমা জয়, সন্তান ধারণসহ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে আহাদুল ও জিন মোল্লা নাছির উদ্দিন শূণ্য থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায়। সম্প্রতি বানিয়াচং উপজেলার রাঙ্গাহাটি গ্রামের এক প্রবাসির স্ত্রী ভূয়া কবিরাজ আহাদের কাছে যায়। সে জিনের হাজিরার কথা বলে তার কাছ থেকে একটি ছাগল, ১ হাজার ১ টাকা ও ৫ কেজি মিস্টি নেয়। পরেরদিন রাত ১২ টা ১ মিনিটে জীনের হাজিরা বসায়। এ সময় জীন এসে বলে তার স্বামীকে বিদেশ থেকে এনে দিলে নগদ ২ লাখ টাকা দিতে হবে। ওই গৃহবধু যদি শনি কিংবা মঙ্গলবার রাত ১২ টার সময় ভন্ড কবিরাজ আহাদের কাছে ২ লাখ টাকা দেয় তা হলে জীন এক সপ্তাহের মধ্যে তার স্বামীকে এনে দিবে। ওই মহিলার স্বর্ণালংকার ও ব্যাংকের টাকা তুলে আহাদকে ২ লাখ টাকা দেয়। এক সপ্তাহ পর তার স্বামী ফিরে না আসায় ওই মহিলা আহাদকে জিজ্ঞেস করলে আহাদ বিভিন্ন প্রলোভন দিয়ে তার সাথে শাররীক সম্পর্ক গড়ে তুলে এবং ভিডিও ধারণ করে তাকে বিভিন্ন ভাবে ব্ল্যাক মেইল করতে থাকে। এক পর্যায়ে ব্ল্যাক মেইলের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় সে। ওই মহিলা চক্ষু লজ্জায় এক পর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেচে নেয়। অবশেষে পরিবারের লোকজন ওই মহিলাকে র্যাব-৯ এর কাছে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে তাকে আটক করা হয়।
নাহিদ হাসান আরো জানান, আটকের সময় তার কাছ থেকে অল্লীল ভিডিও ধারণ করা মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে আহাদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে। স্থানীয় ভাবে জানা গেছে, আহাদ ও জীন মোল্লা নাছির উদ্দিন প্রায় ৪০টির বেশি প্রবাসির স্ত্রীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এবং তাদেরকে প্রেমের ফাদে ফেলে সর্বনাশ করেছে। তাছাড়া ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাক মেইলের মাধ্যমে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয়। অন্যথায় যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেয়। লোক লজ্জায় অনেকেই এর কোন প্রতিকার চান না। আবার কেউ কেউ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছে। ওই প্রবাসির স্ত্রী একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার প্রেক্ষিতে আহাদকে শুক্রবার রাতেই বানিয়াচং থানায় প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন