মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
বর্তমানে বাংলাদেশকে এমন জায়গায় আনা হয়েছে -বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলা বাস্তবায়ন করা না হলে প্রিয় বাংলাদেশ স্বাধীনতা হারিয়ে হায়দ্রাবাদ, জম্মু-কাশ্মীর কিংবা সিকিম এর দূর্ভাগ্য বরণ করবে।
সিকিমের তৎকালীন রাজা ও রাজনৈতিক দলগুলো বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মতো দুই শিবিরে বিভক্ত হয়ে একে অন্যকে ঘায়েল করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েছিলো। কেউ কাউকে চূড়ান্তভাবে ঘায়েল করতে না পারলেও তাদের দেশকে ঠিকই চূড়ান্তভাবে ঘায়েল করতে পেরেছিলো। তদানিন্তন সিকিমকে এশিয়ার মধ্যে একটি মডেল রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সিকিম এর মাথাপিছু আয় নেপাল, ভূটান ও ভারতের দ্বিগুণ ছিলো। সেরকম একটি দেশের রাজা ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে অনৈক্য ও হানাহানির কারণে পালাক্রমে ক্ষমতায় এসে সিকিমের বৃহৎ দুই শিবিরই ক্ষমতায় টিকে থাকতে এবং বিরোধী দলকে প্রতিহিংসাবশত নির্মূল করার জন্য নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করার নিমিত্তে ক্রমান্বয়ে সিকিমকে ভারতের হাতে তোলে দেওয়ার কাজটি করতে থাকে। প্রতিহিংসায় বিভোর হয়ে কিংবা আত্মরক্ষার স্বার্থে সিকিমের দুই রাজনৈতিক শিবির পালাক্রমে ক্ষমতায় এসে অলক্ষ্যে দেশের সার্বভৌমত্ব বিরোধী কাজ করেছিলো।
বর্তমান বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট ভারতের চেয়ে অনেক ভালো হলেও সাময়িকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে কিংবা ক্ষমতায় যেতে বাংলাদেশের বিরোধী দুই জোটের অসৎ রাজনীতিবিদরাও সিকিমের রাজনীতিবিদদের মতো প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে কিংবা নিজের ও নিজের দলের নিরাপত্তার শংকায় বাংলাদেশকে অলক্ষ্যে ভারতের হাতে ক্রমান্বয়ে তোলে দিচ্ছেন। সিকিমের সরকারি ও বিরোধীদল পালাক্রমে ক্ষমতায় এসে সাময়িকভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য দেশের স্বাধীনতা বিকিয়ে দেওয়ার মতো যেসব কাজ করেছিলো-তা নিম্নের লিখা পড়লে আমরা পরিষ্কার জানতে পারবো।
ব্রিটিশরা ভারত ছেড়ে যাওয়ার সময় তথা ভারত ভাগের সময় দেশীয় রাজ্যগুলোকে নিজস্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ভারত অথবা পাকিস্তানের সাথে যোগদান কিংবা স্বাধীন থাকার সুযোগ দিয়েছিলো। ফলে বেশিরভাগ রাজ্য ভারতে এবং কিছু পাকিস্তানে যোগ দিলেও হায়দ্রাবাদ, জম্মু-কাশ্মীর এবং সিকিম স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে হায়দ্রাবাদ, জম্মু-কাশ্মীর ও সিকিম স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। আজকের আলোচনায় সিকিম এর স্বাধীনতা হারানোর প্রেক্ষাপট তোলে ধরতে চাই।
বৌদ্ধ পুরোহিত রাজা দ্বারা শাসিত রাজতান্ত্রিক একটি দেশ ছিলো সিকিম। কাজী লেন্দুপ দর্জি নামক এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার নেতৃত্বে ‘সিকিম স্টেট কংগ্রেস’ নামক একটি রাজনৈতিক দল সিকিমে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু করে। তাদের প্রবল চাপের মুখে ক্ষমতা হারানোর সম্ভাবনা দেখা দিলে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে ১৯৫০ সালে সিকিমের ১১তম রাজা থাসি নামগিয়াল ভারতের হাতে সিকিমের পররাষ্ট্র, নিরাপত্তা ও যোগাযোগ সম্পর্কিত বিষয়গুলোর নিয়ন্ত্রণ দিয়ে একটি চুক্তি করেন। এই চুক্তির ফলে স্বাধীন সিকিম রাষ্ট্রে ভারতের প্রবেশাধিকার ব্যাপকভাবে শুরু হয়ে স্বাধীন সিকিম রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে ভারতের হস্তক্ষেপ এর অবারিত সুযোগ সৃষ্টি হয়। দেশের অভ্যন্তরে বিরাজিত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে কাজী লেন্দুপকে অন্যায়ভাবে ঠেকাতে এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে রাজা থাসি নামগিয়াল মূলত ভারতকে দেশ বিরোধী উক্ত সুবিধা দিয়েছিলেন।
অন্যদিকে কাজী লেন্দুপ তার শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য ১৯৬২ সালে তার দলসহ সিকিমের কয়েকটি সমমনা দলকে একই প্ল্যাটফর্মে এনে রাজতন্ত্র-বিরোধী ‘সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস’ গঠন করেন।
এরকম পরিস্থিতিতে ১৯৬৩ সালে সিকিমের তৎকালীন রাজা থাসি নামগিয়াল মৃত্যু বরণ করলে তার পুত্র পালডেন নামগিয়াল রাজা হন। পরের বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু মারা গেলে সিকিমের রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যায়।
লেন্দুপ দর্জি ‘সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস’-এর মাধ্যমে পূনরায় প্রবলভাবে রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলন শুরু করেন।
অন্যদিকে ভারত সিকিমের রাজা পালডেন নামগিয়ালকে পরিস্থিতি সামাল দিতে নানাভাবে সাহায্য করতে থাকে।
কয়েকবছর পর ১৯৭০ সালে লেন্দুপ দর্জির দল সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস দেশে একটি সাধারণ নির্বাচন দাবি করে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে দেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে কাজী লেন্দুপ দর্জির দল না জিতে রাজপরিবার বিপুল ভোটে জয় পায়। তখন লেন্দুপ দর্জির দল সিকিম ন্যাশনাল কংগ্রেস নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে আরো কয়েকটি দলের সাথে মিলে তীব্র আন্দোলন শুরু করে। ক্রমেই তা রাজতন্ত্র বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয়।
তখন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পালডেন নামগিয়াল ভারতের কাছে সাহায্য কামনা করেন। সাহায্য চাওয়ায় সুযোগ এর সদ্ব্যবহার করে ভারত সিকিমের জন্য নতুন সংবিধান প্রণয়ন করে।
ভারত কর্তৃক প্রণীত নতুন সংবিধানের আলোকে ১৯৭৪ সালে সিকিমে পুনরায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু এই নির্বাচনে কাজী লেন্দুপ দর্জির দল অস্বাভাবিক ব্যবধানে জয় লাভ করে। নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী লেন্দুপ দর্জি সিকিমের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু কাজী লেন্দুপ এর পূর্ববর্তী সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে সিকিমের জন্য ভারত যে সংবিধান প্রণয়ন করেছিলো- তাতে রাজা ছিলেন সিকিমের সাংবিধানিক প্রধান। সেই সংবিধান অনুযায়ী রাজা তার পদে রয়ে গেলেন।
রাজা ও নতুন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে চরম দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে যায়।
রাজা সিকিমকে ভারতের মধ্যে এমনভাবে বিলীন করে দিয়েছিলেন যে কাজী লেন্দুপ সে অবস্থা থেকে দেশকে বের করে আনার চিন্তাও করতে পারেননি উল্টো প্রতিহিংসা চরিতার্থ ও টিকে থাকার জন্য এবং দ্বন্দ্বরত রাজাকে ঘায়েল করার জন্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর ১৯৭৫ সালে লেন্দুপ দর্জি সিকিমকে ভারতের একটি রাজ্যে পরিণত করার জন্য ভারতীয় সংসদে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে
১৯৭৫ এর ৬ এপ্রিল ভারতীয় সেনাবাহিনী সিকিমের রাজার ২৪৩ জন প্রাসাদ রক্ষীসহ ৫ হাজার সেনাবাহিনীর সদস্যকে নিরস্ত্র করে রাজধানী গ্যাংটক দখল করে নেয় এবং রাজা পালডেন নামগিয়ালকে ভারতীয় সেনাবাহিনী বন্দী করে।
এরপরে ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সিকিমে একটি ‘গণভোট’ অনুষ্ঠিত হয়। সেই গণভোটে ৯৫.৫ শতাংশ ভোটার রাজতন্ত্র বিলোপের পক্ষে রায় দেয়। তারপর লেন্দুপ দর্জির নেতৃত্বে সিকিমের নতুন সংসদ সিকিমকে একটি ভারতীয় প্রদেশ করার জন্য একটি বিল উত্থাপন করে তা সংসদে পাশ করে-যা তাৎক্ষণিকভাবে ভারত সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়।
এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১ মে সিকিমের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে ভারত প্রজাতন্ত্রের ২২তম রাজ্যে পরিণত হয় সিকিম।
সিকিম এর স্বাধীনতা হারানোর জন্য সিকিমের রাজা ও রাজনীতিবিদরাই দায়ী। ভারতকে দায়ী করা উচিত নয়। পার্শ্ববর্তী কোনো একটি দেশ নিজ থেকে ভারতকে সুবিধা দিতে এগিয়ে আসলে ভারত তো নিবেই। তদ্রূপ বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা একে অন্যকে ঘায়েল করতে গিয়ে ভারতকে সম্পৃক্ত করে দেশের সমূহ ক্ষতি করলে তারজন্য ভারতকে দায়ী না করে আমাদের রাজনীতিবিদদের দায়ী করাটাই যুক্তিযুক্ত। ভারত সবসময় চাইবে পার্শ্ববর্তী কোনো দেশ তার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে যাতে না দাঁড়ায়।
সিকিমের ক্ষমতালোভী ও প্রতিহিংসা পরায়ণ রাজনীতিবিদদের মতো ঠিক একইভাবে বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ ও বিএনপি দেশকে বিকিয়ে দেওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে-প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে। উদ্ধারে করণীয় হচ্ছে –
দেশের সব রাজনীতিবিদদের একপ্ল্যাট ফর্মে আনা। প্রতিশোধ ও পাল্টা প্রতিশোধে বিভোর থাকায়, পরষ্পর আস্থা বিশ্বাস না থাকায় এবং এক প্ল্যাটফর্মে আসার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব ছাড় দেওয়ার মনমানসিকতা না থাকায় রাজনীতিবিদদের এক প্ল্যাটফর্মে আনা সম্ভব নয়। তাই বলে বিকল্পভাবে চেষ্টা না চালিয়ে দেশকে পরাধীন করে দেওয়া কি উচিত হবে?
উচিত হবে না বিধায় বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি খুবই গ্রহণযোগ্য ফর্মূলা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে -যা দেশের সৎ রাজনীতিবিদসহ দেশের আপামর জনসাধারণের সহযোগিতায় দেশে বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ পরাধীন হতে যাওয়া থেকে বেঁচে যাবে। ১০ ট্রাক অস্ত্র চালানের ঘটনায় ভারত আতংকিত। বাংলাদেশে এমন কিছু করা কোনো অবস্থাতেই যাবে না-যাতে ভারত আতংকিত থাকে। আতংকের কারণে সুযোগ পেলেই ভারত বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাক গলায়। ভারত অভ্যন্তরীণভাবে শান্তিতে নেই। দূর্নীতি – অনিয়ম ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ভারতের রাজনীতিবিদরা ইচ্ছাকৃতভাবে লাগিয়ে অনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। সংখ্যালঘু মুসলিমদের পাশাপাশি খ্রিস্টান, বৌদ্ধ ও নিম্নবর্ণের দলিত সম্প্রদায় ও উপজাতিদের উপরও হামলা চালিয়ে তাদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিয়ে নৈরাজ্যের রাষ্ট্রে ভারতকে পরিণত করতে চলেছে -ভারতের বর্তমান বিজেপি সরকার। কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজ্যভিত্তিক দল বিজেপির সেসব কর্মকান্ডে চরম প্রতিবাদ জানালেও তেমন সুবিধা করতে পারছে না।
বাংলাদেশ যদি ভারতীয় কংগ্রেস এর মতো কিংবা মমতা ব্যনার্জীর মতো বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ধর্মের লোকদের সম্পৃক্ত করে ঘুরে দাঁড়াতে পারে তাহলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষার পাশাপাশি ভারতও সাম্প্রদায়িক হানাহানি থেকে মুক্তি পাবে- কেননা বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশ ভারতকেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির পরিবেশের দিকে আকৃষ্ট করবে। ভারতে হিন্দু বেশী আর তাই সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দিয়ে বিজেপি সুবিধা নিয়ে আসতেছে। বাংলাদেশে মুসলিম বেশী বলে ভারতের মতো সাম্প্রদায়িকতা উস্কে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কিছু করতে গেলে বিজেপি অনুপ্রাণিত হবে অন্যদিকে কংগ্রেসসহ অন্যান্য দল নিরুৎসাহিত হওয়ার ফলশ্রুতিতে বিজেপির ক্ষমতা ভারতে দীর্ঘায়িত হয়ে কোটি কোটি মানুষ অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। লাখ লাখ মানুষ জান, মাল ইজ্জত হারাতে থাকবে। ভারতে গণ ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন হাজারো নারী। ধর্ষকরা ভিন্ন ধর্মের নারীদের ধর্ষণ করতে করতে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজ ধর্মের নারীদেরও ধর্ষণ করে যাচ্ছে। আপনার বোন, আপনার মা প্রকাশ্য গণ ধর্ষণের শিকার যদি হয়-আপনার কেমন লাগবে। মজলুম (হিন্দু কিংবা মুসলিম) যে ধর্মেরই হোক না কেনো-তারজন্য যার অন্তর (হিন্দু কিংবা মুসলিম) কাঁদবে না-সে তো মানুষ হতে পারে না। ভারতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় যা চলছে-তাতে হিন্দুদের বিশাল একটা অংশসহ ভারতের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ভারত অস্থিতিশীল হলে সেটার ঢেউ বাংলাদেশে আছড়ে পড়ে অন্যদিকে বাংলাদেশ অস্থিতিশীল হলে সেটার ঢেউও ভারতে আছড়ে পড়ে। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শতভাগ দৃষ্টান্ত স্থাপন করা গেলে সেটার ঢেউও ভারতে আছড়ে পড়বে। আর তাই বাংলাদেশের অস্তিত্ব রক্ষাসহ ভারত ও বাংলাদেশের সব মানুষের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিতে বাংলাদেশের দেশপ্রেমিক সৎ রাজনীতিবিদসহ দেশবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
ডিভাইড এন্ড রোল পলিসি অবলম্বন করে দেশীয় ও বিদেশি একটা চক্র বাংলাদেশকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের একটি ইসলামি দল। দলটি খুবই সংগঠিত। দলটির নেতা-কর্মীরা বাংলাদেশের যেকোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের তুলনায় অধিকতর সাংগঠনিক ও সক্রিয়। বর্তমান আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে ২০১৪ সালের উপজেলা নির্বাচনে দলটির মনোনীত ৩৬ জন উপজেলা চেয়ারম্যান, ১৩০ জন ভাইস-চেয়ারম্যান ও ৩৫ জন মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামীলীগ ও বিএনপি উভয় দলের সাথে টেক্কা দিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দলটির সক্ষমতা যে কতো তা আওয়ামীলীগ ভালো করেই বুঝে। ১৯৯৬ এ দলটি চাইলে প্রধানমন্ত্রীর পদটি ৬ মাস কিংবা এক বছরের জন্য নিতে পারতো কিন্তু তখন তারা সেই ভাবে চিন্তা করেননি। তারা কাউকে সমর্থন না দিলে পূনরায় নির্বাচন দিতে হতো-সেরকম একটা অবস্থায় জামায়াত ছিলো। আওয়ামীলীগ জামায়াতের সহযোগিতা চাইলেও আওয়ামীলীগকে না দিয়ে নিঃস্বার্থভাবে বিএনপিকে সমর্থন দেয় জামায়াত। নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন না দিয়ে ২০০১ সালের মতো ক্ষমতার ভাগ নিলে ৯২ থেকে ৯৬ পর্যন্ত বিএনপি জামায়াত দ্বন্দ্ব থাকতো না। বিএনপি দ্বন্দ্বে জড়াতো না। জামায়াত-আওয়ামীলীগ এক হয়ে আন্দোলনেরও সুযোগ হতো না। ১৯৩ দিন বিএনপির বিরুদ্ধে হরতাল, বিএনপি খুবই খারাপ, বিএনপি যা তা (বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ/অপবাদ দেওয়া) এসব বলা সত্ত্বেও আওয়ামীলীগ-জামায়াত ও জাতীয় পার্টি সবাইকে টেক্কা দিয়ে বিএনপি এককভাবে ৯৬ এর ১২ জুনের নির্বাচনে ১১৬ টি আসন পেয়ে যায়। জামায়াতের সাথে দ্বন্দ্ব না হলে ৯৬ সালেও বিএনপি ক্ষমতায় আসতো৷ জামায়াত বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে একটা ফ্যাক্টর। আর তাই এই জামায়াতকে আওয়ামীলীগ যেভাবে কোণঠাসা করে রেখেছে-বিএনপিও একইভাবে কোণঠাসা করে রাখবে। জামায়াতের উপর যা চলেছে-তাতে দলটি দূর্বল হয়ে গেছে -এটা মনে করলে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল করা হতো না। তারমানে জামায়াত এখনো শক্তিশালী-এটা আওয়ামীলীগ মনে করে। জামায়াতের মোকাবেলায় বিকল্প কোনো আদর্শ (যা জামায়াতের চেয়ে ভালো) সামনে আনতে না পারলে জামায়াতকে কখনো দূর্বল করা যাবে না। সরকারকে সহযোগিতা করলে জামায়াত নিবন্ধন ফিরে পাবে-অন্যথা পাবে না। জামায়াত না থাকলে জামায়াতের ভোট বিএনপি পাবে-এটা মনে করে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও জামায়াতের নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার কোনো চেষ্টাই করবে না। দেশের সবগুলো ইসলামি দল এক হয়ে গেলেও দেশীয় ও আন্তর্জাতিক কারণে বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলো ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আলজেরিয়ায় ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্ট ৮২% ভোট পেলেও ক্ষমতায় বসতে কি পেরেছিলো? বাংলাদেশের ইসলামি দলগুলো ক্ষমতায় আসতে না পারলেও তাদের ঐক্যবদ্ধতা দেখে দেশের ও ভারতের কট্টরপন্থীরা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নষ্ট ও অশান্তি সৃষ্টিতে উৎসাহিত হবে।
বর্তমানে দেশ এমন অবস্থায় চলে গেছে প্রত্যেক দলের স্ব স্ব রাজনৈতিক এজেন্ডা আপাতত স্থগিত রেখে দেশকে উদ্ধার করা দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলের জন্য ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসলামিক দলগুলো নিজের দেশের মধ্যপন্থী দলকে সমর্থন না করলেও পাকিস্তান ও তুরস্কের ইমরান খান ও রিচেপ তাইয়েপ এরদোগানকে ঠিকই সমর্থন দেয়।
বাংলাদেশের ইসলামিক দলগুলোকে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে দেশকে বাঁচাতে সাময়িকভাবে হলেও বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি কিংবা ঐক্য পার্টির ফর্মূলার আলোকে মধ্যপন্থী কোনো দলকে সমর্থন দিয়ে ক্ষমতায় পৌঁছাতে হবে।
জামায়াত নিয়ে দেশের রাজনীতিবিদদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। যদি বদলানো না যায় তাহলে দেশে শান্তি স্থাপন সম্ভব হবে না। জামায়াতের বিরুদ্ধে হিংসা ছড়াতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে পুরো দেশকে হিংসার দেশে পরিণত করে দেওয়া হচ্ছে। জামায়াত-শিবির বলে বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্য দিবালোকে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে মেডিকেলে নিলে শিবির মনে করে চিকিৎসা না দিয়ে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া হলো। কাউকে ঘায়েল করতে চাইলে সে আওয়ামীলীগ হলেও জামায়াত ট্যাগ দিয়ে ঘায়েল করা হচ্ছে। এ কেমন বিভাজন ও ধ্বংসের রাজনীতি। নিবন্ধন না থাকায় জামায়াত তো নির্বাচন করতে পারবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকা জামায়াতের পিছনে প্রশাসনসহ দলীয় লোকদের অন্যায়ভাবে লেলিয়ে দিয়ে দলীয় ও প্রশাসনের লোকদের অনৈতিকতায় উদ্বুদ্ধ করে দেশের জনগণের বিশাল একটা অংশকে অনৈতিকতার চাষবাসে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। দেশের জনগণের নীতি-নৈতিকতা ধ্বংস করা হচ্ছে। বিএনপি এতোদিন জামায়াতের সাথে থাকলেও হঠাৎ করে কোনো কারণ ছাড়া জামায়াতকে অবহেলা করা শুরু করে দিয়ে জামায়াতের সাথে চলমান সব জুলুম প্রকারান্তরে জায়েজ বলে মেনে নিচ্ছে। বিএনপির দেখাদেখি জামায়াতকে ভালো জানতো সেসব দলও জামায়াত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। বর্তমানে দেশের অবস্থা এমন হয়েছে যে এক পক্ষে জামায়াত আর অন্য পক্ষে বিএনপি-আওয়ামীলীগসহ সবাই।
জামায়াতের যেহেতু নিবন্ধন নাই এবং জামায়াত আওয়ামীলীগের সাথে সমঝোতায় পৌঁছে নিবন্ধন নেওয়ার সম্ভাবনাও নাই অন্যদিকে বিএনপি ক্ষমতায় আসলেও জামায়াত নিবন্ধন পাবে না-সেহেতু জামায়াতের পিছনে লেগে থাকার মানে হয় না। জামায়াতের পিছনে লেগে থাকলে দেশ যে ধ্বংস হয়ে যাবে-এটার ব্যাখ্যা বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া যাবে। জামায়াতকে গিনিপিগ এর মতো ব্যবহার করতে করতে দেশের অন্যান্য সবগুলো রাজনৈতিক দলের চরিত্র ক্রমান্বয়ে হিংস্র ও নির্দয়তায় ভরপুর হয়ে যাবে। তখন হিংস্রতা ও নির্দয়তা নিজেরা নিজেদের মধ্যেও প্রয়োগ করতে দ্বিধা করবে না।
আওয়ামীলীগ এর অনেক নেতা-কর্মী ও এমপি জামায়াতকে মাসিক এয়ানত দিয়ে থাকে। জামায়াতকে রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে তথা ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে পারলেও নিশ্চিহ্ন করা কস্মিনকালেও সম্ভব নয়। বিগত বছরগুলোতে জামায়াতকে অন্যায়ভাবে দমন করতে গিয়ে দেশের অনেক ক্ষতি হয়েছে -বিভাজন ও দমনের রাজনীতি (কতো জনকে দমন করবেন-দেশে লাখো জামায়াত-শিবির আওয়ামীলীগ পরিবারেও রয়েছে) দমন-পীড়ন সামনেও অব্যাহত রাখলে দেশ সিকিম কিংবা ইরাকের মতো হয়ে যাবে কিন্তু জামায়াতকে নির্মূল সম্ভব হবে না। আর তাই জামায়াতের পিছনে লেগে থেকে দেশকে ধ্বংস করে দেওয়ার কোনো মানে হয় না।
যেহেতু নিবন্ধন নাই সেহেতু দল হিসেবে নির্বাচন করে ক্ষমতায় গিয়ে জামায়াতের লোকদের আদর্শ বাস্তবায়িত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই -সেহেতু জামায়াতের পিছনে লেগে থেকে দেশকে ধ্বংস করার কোনো মানে হয় না।
বিভাজিত না হয়ে কাউকে মাইনাস না করে সকলের মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি বাংলাদেশকে সিকিম কিংবা ইরাকের মতো হতে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে পরিণত করতে একগুচ্ছ পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের মধ্যে সৎ ও দেশপ্রেমিক যেসব নেতারা রয়েছেন তাদেরকে এগিয়ে এসে জামায়াতসহ অন্যান্য দলের সৎ এবং মধ্যপন্থী এরকম নেতাদের সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ ঐক্য পার্টির ফর্মূলার আলোকে দেশকে আসন্ন বিপদ থেকে উদ্ধার করার উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি।
মুহাম্মদ আবদুর রহীম চৌধুরী
প্রতিষ্ঠাতা
বাংলাদেশ ঐক্য পার্টি
মন্তব্য করুন