বশীর উদ্দীন আহমেদ
সম্প্রতি চট্টগ্রাম সফরে গেলে আমার এই অভিজ্ঞতা হয়। এক সময় ছিল যখন উপমহাদেশে মানষিক রূগের তেমন কোন চিকিতসা ছিলনা। কবিরাজি ঝাড়ফূক তাবিজ কবজ ইত্যাদী চিকিৎসা চলতে চলতে Schizophrenia রোগে আক্রান্ত হত। অতিস্ট হয়ে এক পর্যায়ে আত্মীয় স্বজন ও হাল ছেড়ে দিত। ফলে পাগল বাড়ী ছেড়ে চলে যেত। এক পর্যায়ে বাড়ী থেকে দূরে কোথাও অসূস্থ্য হয়ে মরে পড়ে থাকত, অনেক সময় মারা যেত । কিছু অসৎ চালাক লোক বাণিজ্যিক কারণে তার মাজার বা তার নামে দরগাহ গড়ে দান বাক্স বসিয়ে বিনা পূজির ব্যাবসা শুরু করত।যেহেতু তার নাম গ্রাম ঠিকানা কিছুই তারা জানে না। মরার পর হয়তো পাশে একটি বদনা লূটা বা ছেড়া কাপড় চোপড় দেখা গেছে তাই নাম দিয়েছে “হযরত শাহ সূফি খাজা বদনা শাহ বাবা/লূটা শাহ/ গরীবুল্লাহ শাহ বুগদাদী(কঃরঃ) ইত্যাদী। অতীতে চিকিৎসা না থাকায় যে কোন মানষিক রুগী মারা গেলেই এক শ্রেণীর ধূর্ত চতূর মানুষ শাহ খাজা সূফি সৈয়দ হযরত ইত্যাদী উপাধি দিয়ে মাজার ব্যাবসা শুরু করত। আত্মীয় স্বজন অনেক সময় পায়ে লোহার জিঞ্জির দিয়ে পাগলকে বেধে রাখত। কোন এক সুযোগে পাগল জিঞ্জির ছিড়ে পলায়ন করত। এ রকম এক জিঞ্জির শাহর মাজার আছে সিলেট শহরে নদীর এপারে। এই সব মাজার কিন্তূ হাট বাজার রোডের পাশে। যদিও পাগল এখানে মরে মরেনি,
মরেছে অন্য কোথাও। কিন্তু ব্যবসায়িক স্বার্থে তাদের কাল্পনিক কবর/ রওজা মোবারককে রাস্তার পাশে নিয়ে আসা হয়েছে। চট্টগ্রামের বদনা শাহ বা গরীবুল্লাহ শাহ-র দরগাহ বা সিলেটের জিঞ্জির শাহ ইত্যাদীতে এখনও বাণিজ্য চলছে দেখে বিষ্মিত হয়েছি। দেশে শিক্ষার হার বেড়েছে, মানষিক রোগের চিকিৎসাও আছে, তাই এখন আর কোন মানুষিক রুগী মারা গেলে কেউ বিনা পূজির ব্যাবসা শুরু করার সাহস করে না কিন্তূ দুখের বিষয় এখন ও সেই আগেকার লুটা শাহ বদনা শাহ গরীবুল্লাহ শাহ জিঞ্জীর শাহর মাজারে ব্যাবসা রমরমা।
দেশে এক শ্রেণীর পাগল আছে তারা মৃত ব্যাক্তির কবরে গিয়ে দান খয়রাত করে জান্নাত হাসিল করতে চায়। এ ধরণের আক্বিদা ঈমান বিধ্বংসী নয় কি? মহান আল্লাহ এক পবিত্র সত্ত্বা প্রশাব পায়খানা করে পানি নেয় না ,৬ মাসেও গোসল করেনা, ময়লা দূর্গন্ধ যূক্ত কাপড় চুল দাড়ী কিছুই কাটেনা, বদ্ধ পাগল এ ধরণের নাপাক অপবিত্র ভবঘূরে পাগলের সাথে আল্লাহর কোন যোগাযোগ থাকতে পারে? মহান আল্লাহ পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। এদের পীর সাব্যস্ত করার জন্য ধূর্ত মাজার ব্যাবসায়িরা এক ধরণের গাজাখোরি গল্প কাল্পনিক ঐশী গল্প রচনা করে বাজারে ছেড়ে দেয়। মূর্খরা এটা বিশ্বাস করে কারণ তাদের দ্বীন সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। জীবনে মহা গ্রন্থ আল-কোরান হাতে নিয়ে দেখেনি তাতে কি লিখা আছে। মহান আল্লাহ এই ধরণের ভন্ডামী ও ভন্ডদের খপ্পর থেকে আমাদের হেফাজত করুন, আমিন।
গায়ের রং কালো হলে নাম হয় কালা শাহ আর ফর্সা হলে নাম হয় ধলা শাহ আর বোবা হলে নিমাত্রা শাহ। অল্প বয়সে মারা গেলে ছাবাল পীর এই ধান্ধা আত কত কাল চলবে যদিও বংশ পরম্পরায় চলছে। তারা খাদেম বংশ, ” মাংকী বিজনেস ইজি মানি, বিনা পূজি বিনা পরিশ্রমের ব্যাবসা।
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে আক্বিদা বিধ্বংসী এই সব ব্যাবসায়ীদের হাত থেকে হেফাজত করুন, আমিন।
লেখক কলামিস্ট ও শিক্ষানুরাগী
মন্তব্য করুন