মাহমুদ হাসান
বড়লেখা(মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি:
১ সেপ্টেম্বর, সকাল সাড়ে সাতটা। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার লাইসিয়াম স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ইসতিয়াক হাসান (১৪) প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে বারইগ্রাম এলাকায় একটি অটোরিকশায় ওঠে সে। পৌরশহরের পানিধার এলাকায় পৌঁছার পর অটোরিকশাটির চালক তাকে জানায় অটোরিকশাটি নষ্ট হয়ে গেছে। পরে ওই অটোরিকশাচালক পানিধার এলাকায় তাকে চার চাকার (অটোরিকশা) সবুজ রঙের একটি গাড়িতে তুলে দেয়।
ওই গাড়িতে ওঠার পর সেটিতে বসে থাকা এক নারী ইসতিয়াকের নাম-পরিচয় ও রক্তের গ্রুপ সম্পর্কে জানতে চান। এসময় ইসতিয়াক নিজের নাম-পরিচয় ও রক্তের গ্রুপ বলে। পরে সে ঘেমে গেছে বলে ওই নারী তাকে একটি টিস্যু এগিয়ে দিয়ে ঘাম মুছতে বলেন। ইসতিয়াক টিস্যুটি ভেজা জানালে ওই নারী বলে, এটি বিদেশি টিস্যু, তাই ভেজা। এরপর মুখ মুছতেই অজ্ঞান হয়ে যায় ইসতিয়াক।
বেলা সাড়ে ১১টায় জ্ঞান ফিরলে ইসতিয়াক নিজেকে একটি নির্জন টিলায় পাতার ওপর শোয়া অবস্থায় আবিস্কার করে। ভেজা টিস্যু দিয়ে মুখ মুছার পর তার সঙ্গে কী ঘটেছে কিছুই মনে নেই ইসতিয়াকের।
শনিবার (৪ সেপ্টেম্বর) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছে ইসতিয়াক। কিন্তু এখনও সে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে পারেনি। অজানা এক আতঙ্ক যেন ঘিরে ধরেছে তাঁকে। রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সাংবাদিকদের এই ঘটনাটির বর্ণনা দেয় ইসতিয়াকের পরিবার।
এই ঘটনায় ইসতিয়াকের মা লাইলি আক্তার বড়লেখা থানায় জিডি করেছেন। ইসতিয়াক বড়লেখা উপজেলার মুছেগুল গ্রামের কয়েছ আহমদের ছেলে।
এদিকে প্রশ্ন ওঠেছে, দিন-দুপুরে কে বা কারা ইশতিয়াককে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন? উদ্দেশ্যই বা কী ছিলো? তাকে রক্তের গ্রুপ জিজ্ঞেস করার কারণ কী?
ইসতিয়াক হাসান বলে, জ্ঞান ফেরার পর দেখি একটি টিলার ওপরে পাতার ওপর শোয়া অবস্থায় রয়েছি। তখন আমার গায়ে কিছুই ছিল না। আমার বইয়ের ব্যাগও দূরে রাখা ছিল। আমি তখন হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। পরে দ্রুত সেখান থেকে নেমে দৌঁড়াতে থাকি। কিছুপথ এসে একটি পাকা সড়ক পেয়ে দাঁড়াই। এসময় একটি অটোরিকশা দেখে চালককে সবকিছু খোলে বলি। পরে ঘটনাটা শোনে আমাকে এনে নামিয়ে দিয়েছেন। আমি গাড়িতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম। তবে কোথায় নামিয়ে দিয়েছেন ঠিক মনে নেই। পরে হঠাৎ দেখি আদালত এলাকায় আছি। সেখান থেকে একটি অটোরিকশায় ওঠে পানিধার নেমে মাকে কল দিয়ে বিষয়টি জানাই। পরে মা এসে আমাকে বাড়িতে নিয়ে যান। বাড়িতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে যাই। পরে আমাকে হাসপাতাল নেওয়া হয়।
সে জানায়, তার ডান হাতের আঙুলে সুচ জাতীয় কিছুর দাগ রয়েছে। এখনও তাঁর শরীরিক দুর্বলতা কাটেনি।
ইসতিয়াকের মা লাইলি বেগম রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বলেন, প্রতিদিন সকালে আমার ছেলে বড়লেখায় এক শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায়। ঘটনার দিনও সে প্রাইভেট পড়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। কিন্তু কে বা কারা দিন-দুপুরে আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। তার শরীর এখনও দুর্বল। ডান হাতের আঙুলে সুচের দাগ রয়েছে।
তিনি জানান, কারও সাথে তাদের কোনো শত্রুতাও নেই। আর তাঁর ছেলেও শান্ত স্বভাবের। তাঁর ধারণা, হয়তো কোনো চক্র তাঁর ছেলের কিডনি খুলে নেওয়ার জন্য তাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল। রক্তের গ্রুপের সাথে না মিলায় তাকে নির্জন স্থানে ফেলে গেছে।
লাইলি বেগম বলেন, ঘটনার পর থেকে একধরনের ভয় কাজ করছে। আজ আমার ছেলের সাথে এরকম ঘটনা ঘটেছে। কাল আরও কারও সাথে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদ্বীপ বিশ্বাস রোববার বিকেলে বলেন, ছেলেটি গতকাল (শনিবার) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে। তার শরীরিক অবস্থা দেখেছি ঠিক আছে। ওর বয়স কম। হয়তো খুব ভয় পেয়েছে। কিছুদিন গেলে হয়তো পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।
বড়লেখা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার গতকাল বলেন, বিষয়টি আমার খতিয়ে দেখবো। এই ধরণের ঘটনা সত্যিই রহস্যজনক। আমরা এর সঠিক কারণ বের করতে গভীর পর্যবেক্ষণ করছি।
মন্তব্য করুন