নূুরুজ্জামান ফারুকী হবিগঞ্জ প্রতিনিধি।।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নবীগঞ্জ উপজেলার প্রায় সব ক’টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন বলে প্রাপ্ত সুত্রে জানাগেছে। এছাড়া ভোটের মাঠে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন মনোনয়ন বঞ্চিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ৩ নেতা। যাদের স্বাক্ষরে উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকা প্রণীত হয়েছে তাদেরই কপাল পুড়েছে। মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন সদ্য দলীয় পদবি ফিরে পাওয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল। এ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সাইফুল জাহান চৌধুরীর সহোদর সদরের বর্তমান চেয়ারম্যান জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন। দু’জনেই বিগত ইউপি নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে বিজয়ী হন। তৃণমূলে তাদের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় রাজনীতির শিকার হয়েছেন তারা।
এদিকে, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু দাস রানাকেও মনোনয়ন দেয়নি আওয়ামী লীগ। গত নির্বাচনে নৌকা নিয়ে অল্প ভোটে পরাজিত হন তিনি। মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগের চমক ও হেভিওয়েট তিন প্রার্থীর বঞ্চনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। তৃণমূল আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে দলীয় বর্ধিত সভায় রেজ্যুলেশনভিত্তিক তালিকা প্রণীত হয়। মনোনয়ন বঞ্চিত ৩ জনের নামই কেন্দ্রে প্রেরিত তালিকায় প্রথম ছিল। আলোচনার শীর্ষে থাকা ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন পান অনেকটাই অপরিচিত মুখ আওয়ামী লীগ নেতা সাবের আহমেদ চৌধুরী। দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত হন বিগত নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল। নবীগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজুকে বাদ দিয়ে এখানে মনোনয়ন পেয়ে চমক দেখান পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব। বিগত ইউপি নির্বাচনেও নৌকা প্রতীক চেয়েছিলেন তিনি। এদিকে, ৭নং করগাঁও ইউনিয়নে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন আলোচনার শীর্ষে থাকা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু দাস রানা। ছাত্র জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে তিলে তিলে গড়ে তুলেন রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। তার প্রয়াত মামা বীর মুক্তিযোদ্ধা সুকুমার দাস দীর্ঘদিন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। এখানে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন অনেকটা অপরিচিত মুখ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি বজলুর রহমান। এদিকে উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের সমর্থক এবং অনুশারীরা তাদেরকে মনোনয়ন না দেয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। খোজ নিয়ে এবং অনেক দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় সব ক’টি ইউনিয়নেই আওয়ামীলীগের মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থীরা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিবেন। তবে মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ২রা নভেম্বর বেলা ৫টার পর বিদ্রোহীদের প্রার্থীদের অবস্থা নিশ্চিত হওয়া যাবে। আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে তারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে বিদ্রোহী হলে তাদেরকে বহিস্কার করা হবে। যে সকল ইউনিয়নে বিদ্রোহী প্রার্থীর গুঞ্জন রয়েছে তা হলো ২নং বড় ভাকৈর (পুর্ব) ইউনিয়নে সাবেক চেয়ারম্যান মনোনয়ন বঞ্চিত মেহের আলী মহালদার, মনোনয়নবঞ্চিত স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান-১ খালেদ মোশারফ ৫নং আউশকান্দি ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান মনোনয়ন বঞ্চিত মুহিবুর রহমান হারুন, ৭নং করগাঁ ইউনিয়নে মনোনয়ন বঞ্চিত পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু দাশ রানা, ৮নং সদর ইউনিয়নে মনোনয়ন বঞ্চিত বর্তমান চেয়ারম্যান সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাবেদুল আলম চৌধুরী সাজু, ৯নং বাউসা ইউনিয়নে লন্ডন প্রবাসী মনোনয়নবঞ্চিত জুনেদ চৌধুরী, ১০নং দেবপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শামীম আহমদ, ১১নং গজনাইপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন বঞ্চিত উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, ১২নং কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়নে মনোনয়ন বঞ্চিত আওয়ামীলীগ নেতা এমদাদুল হক চৌধুরী এবং ১৩নং পানিউন্দা ইউনিয়নে যুবলীগ নেতা মাহমুদ আহমদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে এবারের নির্বাচনে উপজেলার সিংহভাগ ইউনিয়নে নৌকার ভরাডুবির আশংকা রয়েছে। সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বিএনপির অঘোষিত সর্মথনের প্রার্থীরা। এছাড়া অনেক ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীকে টপকিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীদের জয়লাভের সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় চরম বেকায়দায় আওয়ামীলীগ ও তাদের দলীয় প্রার্থীরা।
মন্তব্য করুন