বিএনপি-জামায়াত জোট আবার পুরনো চেহারায় ||


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৩০, ২০২৩, ১০:১৯ অপরাহ্ন /
বিএনপি-জামায়াত জোট আবার পুরনো চেহারায় ||

২৮ অক্টোবর ২০২৩ ঢাকাতে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করার কথা বলে রাজধানীতে সহিংসতা ও তান্ডব চালিয়েছে বিএনপি জামায়াত ও অন্যান্য সরকার বিরোধী দল। এ’দিন ২০১৩-২০১৪ সালে বিএনপি জামায়াতকে আবার দেখা গেল পুরনো চেহারায়। তাদের নৃশংস হামলায় আমিরুল ইসলাম পারভেজ নামের একজন পুলিশ সদস্যের মৃত্যু অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। রাজধানীর তারা ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে সাংবাদিকদের ওপর। তাদের আক্রমণে দায়িত্বরত বিভিন্ন দৈনিক ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ার বেশ ক’জন সাংবাদিকও আহত হয়েছেন। বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থক জঙ্গিরা প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলাসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর-আগুন দেয়। বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবরে জানা যায় দুপুরের পর কাকরাইল মোড়ে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের বাসভবনে হামলা চালায়। এসময় একদল লোক প্রধান বিচারপতির হেয়ার রোডের বাসভবনের মূল ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে। তারা বাসভবনের দিকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে।

দুপুরের পর থেকে বিএনপি-জামায়াত এর অঙ্গসংগঠনের জঙ্গি নেতা কর্মীরা হঠাৎ করেই বেপরোয়া হয়ে ভাঙচুর ও গাড়িতে আগুন লাগাতে
শুরু করে। বিজয়নগর, নাইটিঙ্গেল মোড় ও কাকরাইল এলাকায় বিএনপি নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। বিএনপি কর্মীরা এসময় যাত্রীবাহী বাস ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। তারা কাকরাইল পুলিশ বক্সেও আগুন দেয়। কাকরাইলের আইডিবি ভবন সংলগ্ন ব্যাটারি গলিতেও একটি গড়ি ভাঙচুর করে বিএনপি কর্মীরা। এছাড়াও রাজধানীর মিন্টো রোডের মুখে একটি বাসে ভাংচুর করে তারা।

অন্যদিকে সমাবেশের অনুমতি না পেলেও জামায়াতে ইসলামী রাজধানীর শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে মরিয়া হয়ে উঠে। সকাল থেকেই জামায়াত কর্মীরা জড়ো হতে থাকে। দুপুর একটার পর জামায়াত কর্মীরা পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙে নটরডেম কলেজের সামনে চলে যায়।

দুপুর পৌনে তিনটার দিকে রাজধানীর পুরানা পল্টন মোড় থেকে বিজয়নগর এলাকা রণক্ষেত্রে হয়ে ওঠে।। সমাবেশে যোগে দেয়া বিএনপি নেতাকর্মীরা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ালে পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করে। এসময় তারা বিজয়নগর প্রধান সড়ক ও বিভিন্ন গলি থেকে পুলিশের ওপর এই হামলা চালায়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে টিয়ারসেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে।

এমন অরাজকতা পর পুলিশের টিয়ারগ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপের পর সমাবেশস্থল থেকে বিএনপি ও জামায়াতের জঙ্গি কর্মীরা সমাবেশ ছেড়ে চলে যায় এবং রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে অবস্থান নেয়। বিকেলে এবং সন্ধ্যার পর তারা বিভিন্ন গলি থেকে চোরাগোপ্তা পথে গাড়ী ভাংচুর, গাড়ীতে অগ্নি সংযোগ করে। এতে জনজীবনে আতংকের সৃষ্টি হয়।

সমাবেশের নামে রাজধানীতে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ নিন্দা জানান।
বিবৃতিতে আমির হোসেন আমু বলেন, বিএনপি-জামায়াত অপশক্তি সমাবেশের নামে রাজধানীতে অগ্নি সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। তাদের বর্বরোচিত হামলা থেকে প্রধান বিচারপতির বাসভবন, হাসপাতাল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকারি স্থাপনা, গণমাধ্যম কর্মী এবং সাধারণ মানুষ কেউই রেহাই পায়নি। তারা গণপরিবহন, অডিট ভবন, পুলিশ বক্স, অ্যাম্বুলেন্স ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগ করেছে।

আমু বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি—সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের মাধ্যমে কোনো রাজনৈতিক দল জনগণের নিকট আবেদন সৃষ্টি করতে পারে না। বিএনপি-জামায়াত যে সন্ত্রাস ও ধ্বংসাত্মক রাজনীতির প্রতিভূ তা আবারও প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের এই সন্ত্রাস ও নাশকতার ঘটনায় কেন্দ্রীয় ১৪ দল তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে।’

তিনি বলেন, “একই সঙ্গে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বাংলাদেশের সকল দেশপ্রেমিক নাগরিককে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।”

এছাড়াও ওয়ার্কাস পার্টি আলাদা এক প্রতিবাদ লিপিতে বলেছে “বিএনপি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির কথা বলে বিচারপতির বাসভবনসহ সরকারি স্থাপনায় হামলা ও পুলিশ হাসপাতালে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। বিএনপির এই ঘটনায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি পলিট ব্যুরো তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। আজ শনিবার গণম্যাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিএনপির এই সমাবেশ কর্মসূচির সাথে সশস্ত্র কর্মীরা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের জখম করেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, বিএনপির এই কর্মসূচি আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের চক্রান্তের অংশ। বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে অতীতের ন্যায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক জনগণকে সতর্ক থাকতে হবে।

শান্তি সমাবেশের কথা বলে বিএনপি-জামায়াতের জঙ্গি নেতাকর্মীদের এমন ন্যাক্কারজনক হামলা ২০১৩-২৯১৪ সালের ৯৩ দিনব্যাপী সারাদেশে তাদের
অগ্নি সন্ত্রাস আগুনে জ্যান্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা সেই
বিভীষিকাময় অধ্যায়ের কথাই মনে করিয়ে দেয়।
সেই সময় তথাকথিত আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সহিংসতায় ৫০০ জন মানুষ নিহত হন এবং প্রায় ৩ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি আহত হয়। বিএনপি-জামায়াত জোটের আগুন সন্ত্রাসের শিকার স্বামী হারা স্ত্রী, সন্তানহারা পিতা, পিতাহারা পুত্র-কন্যা, আগুন সন্ত্রাসী হামলায় আহত-নিহত ভুক্তভোগী পরিবারের কান্না আজও থামেনি। এর মধ্যেই তারা আবার পুরনো কায়দায় হত্যা ও অগ্নি সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে।

পরিশেষে এই বলেই শেষ করতে চাই-সবার যেমন মতপ্রকাশ ও রাজনীতি করার অধিকার আছে
তেমনি প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে নিজের জীবন-জীবিকা করার অধিকার আছে। কিন্তু রাজনীতির নামে নিরীহ নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, জনগণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ সম্পদ ধ্বংস করার কারো অধিকার নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক ও সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করে বিএনপি-জামায়াত যদি অগ্নি সন্ত্রাসের পথ পরিহার না করে তাহলে একদিন
তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।

মাহবুবুল আলম, লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক।

২৯ অক্টোবর’ ২৩ মিশিগান, USA