বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘মিশন সিঙ্গাপুর’ ||


দ্যা সিলেট পোস্ট প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩, ৯:২৭ পূর্বাহ্ন /
বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘মিশন সিঙ্গাপুর’ ||

মাহবুবুল আলম

সরকার পতনের এক দফার চলমান আন্দোলনেরম ধ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের এক সাথে অসুস্থতা এবং এক সাথে এক সাথে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গমন নিয়ে বিএনপি তথা রাজনৈতিক মহলে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। এদিকে, বিএনপি নেতাদের একের পর এক সিঙ্গাপুরে যাওয়ায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ তোলপাড় হয়েছে। যদিও বিএনপি বলছে, দলের নেতারা উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে গেছেন। তারপরও অনেকের ধারণা, চিকিৎসা ছাড়াও বিশেষ কোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বা কর্মকৌশল নির্ধারণী বৈঠক সেখানে হতে পারে। কারণ দলটির নেতারা যখন সিঙ্গাপুরমুখী তখন বিএনপি ও সমমনা দল ও জোটসমূহ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ‘এক দফা’ আন্দোলনে মাঠে রয়েছে।

২৪ আগস্ট বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। তার সঙ্গে তার স্ত্রী ও মেয়েও যান। গত ২৭ জুন থেকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস চিকিৎসার জন্য শনিবার (২৬ আগস্ট) সিঙ্গাপুরে যান। একই সঙ্গে দলের গুরুত্বপূর্ণ তিন নেতার সিঙ্গাপুর সফর নিয়েও আলোচনা সমালোচনা চলছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ইতিমধ্যে থাইল্যান্ডে অবস্থান করছেন। সেখান থেকে তিনি সিঙ্গাপুরের
গোপন বৈঠকে যোগ দেবেন।

কারো অসুস্থতা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা কাম্য নয়। এটা সুস্থ রাজনীতি ধারার সাথে যায় না। যে কোনো মানুষ যে কোনো সময় অসুস্থ হতে পারেন। অসুখ-বিসুখ কারো বলে কয়ে আসে না। তবে চলমান সরকারবিরোধী একদফা আন্দোলনের মাঝপথে বিএনপির স্থায়ী কমিটির শীর্ষ পাঁচ নেতার এক সাথে অসুস্থতা এবং একসাথে একই দেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়াকে নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে কথা ওঠেছে। কেউ কেউ আগবাড়িয়ে এটাকে সিঙ্গাপুর ষড়যন্ত্র হিসেবে আক্ষায়িত করছেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির ১৪ সদস্যের মধ্যে ছয়জনই এখন দেশের বাইরে। শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া অসুস্থ। গত মে মাসে জমির উদ্দিন তার স্ত্রীকে হারিয়েছেন। এরপর থেকে তিনি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। রফিকুল ইসলাম মিয়া বহু বছর ধরে শয্যাশায়ী।
এমতাবস্থায় আন্দোলনের পরবর্তী করণীয় নিয়ে
গোপন আলোচনার জন্য বিএনপি নেতাদের এই
চিকিৎসামিশন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে
করছেন।

সমালোচকরা বলছেন, আমাদের দেশেই এখন উন্নত
চিকিৎসা হচ্ছে। যেখানে নানান অসুখবিসুখে কাবু জেলবন্দি বিএনপির চেয়ারপার্সন ম্যাডাম খালেদা জিয়ার চিকিৎসাও দেশেই চলছে, সেখানে বিএনপির
আলোচিত শীর্ষ নেতারা কেন চিকিৎসাসেবা নিতে
সিঙ্গাপুরে যেতে হবে, তাও আবার একসাথে। বিষয়টা কেমন বেক্ষাপ্পা লাগছে না। কেউ কেউ আবার বলছেন, অসুস্থতা উছিলামাত্র। আন্দোলনের কোনো কৌশলই যখন কাজে আসছে না তখন
গোপনে আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণের জন্য তারা
একসাথে সিঙ্গাপুর গেছেন। বিএনপির লন্ডনে পলাতক নেতা তারেক রহমানের নির্দেশেই এই
গোপন বৈঠকের আয়োজন। বিএনপি নেতাদের ধারণা দেশের অভ্যন্তরে গোপনে গৃহিত আন্দোলনের বিভিন্ন কৌশল সরকার বিভিন্নভাবে জেনে যাচ্ছে।
লিক হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন গোপনীয়তা। তারা এও মনে
করছেন বিএনপিতে থাকা সরকারের এজেন্টদের
মাধ্যমেই সব গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। সরকার
আন্দোলনে ভীত্ হয়ে বিএনপির ভেতরে স্পাই ঢুকিয়ে আগে আগে সবকিছু জেনে যাচ্ছে; এ জন্যই আন্দোলনের সব কৌশলই মাঠেমারা যাচ্ছে। তাই
তাদের আন্দোলনের কৌশল সরকার যাতে আগেবাগে না জানতে পারে সেই জন্যই চিকিৎসার
নামে বিএনপির শীর্ষ পাঁচ নেতার এক সাথে সিঙ্গাপুর
গমন। বিভিন্ন খবরে জানা গেছে যে, সিঙ্গাপুরের
গোপন বৈঠকে যদি কোনো কারণে তারেক রহমান
যোগদান না ও করতে পারেন তা হলে লন্ডন থেকে তারেক রহমান তার বিশ্বস্ত লোকদের পাঠাবেন।
সেই গোপন বৈঠকেই সরকার পতনের একদফা
আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করে আলআউট
আন্দোলনে নামবে তারা।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাওয়া বিএনপি নেতাদের নিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিতে শ্রদ্ধা জানানোর পরে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই চিকিৎসার নামে সিঙ্গাপুরে বৈঠক করার জন্য গেছেন— গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, গুরুতর অসুস্থ নেতৃবৃন্দরা চিকিৎসার জন্য গেছেন। ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আজ থেকে এক-দেড় মাস আগে গেছেন। আমাদের দলের মহাসচিব গুরুতর অসুস্থ, তাকে প্রায়ই যেতে হয় চিকিৎসার জন্য। জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সাহেব, তিনি গুরুতর অসুস্থ। তাকেও প্রায়ই চেকআপের জন্য যেতে হয়। এটা নিয়ে খামোখা বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার করছে, এটা ঠিক নয়। তারা গেছেন চিকিৎসার জন্য।

তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির তিন নেতা সিঙ্গাপুর গেছেন। পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছে, তারা (বিএনপি নেতারা) কি আদৌও চিকিৎসা নিতে গেলেন, নাকি আবার কোনো ষড়যন্ত্র করতে একসঙ্গে সিঙ্গাপুর গেলেন, এটি অনেকের প্রশ্ন। ২৭ আগস্ট ২০২৩ জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনাসভায় তিনি একথা বলেন। আইভি রহমানের ১৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ আলোচনাসভার আয়োজন করে ‘আইভি রহমান পরিষদ।’
যাহোক, বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সংবাদ থেকে জানা গেছে বিএনপির বর্তমান সিঙ্গাপুর মিশনটি কেবলমাত্র চিকিৎসাবিষয়ক নয় এর সাথে রাজনীতিও আছে। সিঙ্গাপুরে কয়েকটি দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টির সরকারবিরোধী অংশের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গেও বৈঠক করবেন তারা। এতে দেশবিদেশের সরকারবিরোধী এজেন্টদের উপস্থিত
থাকার কথাটি এক তুবড়িতে উড়িয়ে দেয়া যাবে না
বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছে। দেখা যাক এবার বিএনপির একদফার আন্দোলন সফল হয় কি-না।

লেখক: কবি-কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও গবেষক।